16 April 2019

মৌলভীবাজারে হিন্দু অধ্যুষিত চা বাগানে গরু জবাই করায়, ইমামকে লাঞ্চিত করে চাকুরিচ্যুত

ছবিঃ প্রতিকি
মৌলভীবাজার প্রতিনিধিঃ জেলার কুলাউড়া উপজেলা ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের লোয়াইউনি চা বাগানের মসজিদের ইমাম মুহম্মদ সৈয়দ আহমদ চৌধুরী বাগানস্ত উনার নিজ বাড়িতে গরু জবাইকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা চলছেবিষয়টি সমাধানে প্রশাসন হস্তক্ষেপ করায় এই ঘটনায় চলমান উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হলেও স্থানীয় মুসলমানদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে

বাগানের কিছু উশৃঙ্খল উগ্র ধর্মান্ধ হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক গরু জবাই করায় তারা ইমামকে গালিগালাজ করে শারীরিক ভাবে লাঞ্চিত হেনেস্থা ও বন্দিদশায় রাখার পর শর্তসাপেক্ষে মুক্তিপান তিনিওই ইমামের জবাই করা হালাল গরুটি মাটিচাপা দেওয়ার পর বাগান পঞ্চায়েত ও সনাতন ধর্মাবলম্বী লোকজনের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনাসহ চাকুরিচুত্যের পর ওদের রোষানল থেকে রেহাই মিলে উনারএই ঘটনা স্থানীয় লুয়াইউনি বাগান পঞ্চায়েত, বাগানের সনাতন ধর্মাবলম্বী লোকজন, বাগান ব্যবস্থাপনার লোকজন ও ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মমরুদ হোসেন ওই ভাবেই ঘটনার এক তরফা নিষপত্তি করে দিলে সন্তুষ্ট হতে পারেননি ওই বাগানের বসবাসরত মুসলিম চা শ্রমিকরা তারা বাগানের হিন্দু শ্রমিকদের ভয়ে এমন দায়সার গোচরের শালিস দেখে চুপসে গেলেও তাদের মধ্যে ক্ষোভ থেকে যায়

গত মঙ্গলবার (৯ই এপ্রিল) ওই ঘটনা ঘটলেও বাগানের কোন মুসলিম শ্রমিক ঐ এলাকার উগ্রপন্থী হিন্দুদের ভয়ে মুখ খোলতে রাজী হননি৪-৫ দিন পর ঘটনাটি এ কান ঐ কান হয়ে ওই ইউনিয়নের বস্তিবাসী মুসলমানদের মধ্যে জানাজানি হলে তারা ঐ অঞ্চলের সাম্প্রদায়িক ঐতিহ্য বিনিষ্টকারী বাগানের কতিপয় ধর্মান্ধ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের এমন ঘৃণ্য নিন্দনীয় কাজের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানএমন মর্মান্তিক ঘটনা শোনার সাথে সাথে তাৎক্ষনিক তারা শনিবার সন্ধ্যায় (বাদ মাগরিব) ব্রাহ্মণবাজার জামে মসজিদের সামন থেকে ৫ শতাধীক মুসল্লিদের একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে বাজার প্রদক্ষিণ শেষে প্রতিবাদ পথসভা করেনওই পথসভায় বক্তব্য রাখেন স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গপথসভায় তারা ঘটনার সুষ্ট তদন্ত সাপেক্ষে এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানএবং ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, বাগান পঞ্চায়েত (হিন্দু) ও বাগান ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা লোকজনের বাগানের সনাতন ধর্মাবলম্বী লোকদের খুশি করার এমন প্রহসনের বিচারেরও তীব্র প্রতিবাদ জানানএরপর এমন স্পর্শকাতর ধর্মীয় বিষয় নিয়ে টনক নড়ে স্থানীয় প্রশাসনেরবয়ে চলা উত্তেজনা প্রশমিত করতে কুলাউড়া থানা পুলিশ ওই ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে থানায় বসেনএসময় বাগান মসজিদের ইমাম ঘটনার আদ্যোপান্ত বর্নণা দেনএখনো চা বাগান মসজিদের ইমামের গরু জবাইকে কেন্দ্র করে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছেজানা যায় সেখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক বেশি থাকায় তাদের প্রভাব বেশীএজন্য তারা গেল বছর থেকে নির্দিষ্ট জায়গাগুলোতেও গরু জবাই নিষিদ্ধ করে


এদিকে কথিত এই ধর্মান্ধ উগ্রপন্থী হিন্দুদের দাবি মসজিদের ইমাম মৃত গরু জবাই করেছেনপ্রশাসনের হস্তক্ষেপে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পরিস্থিতি শান্ত রয়েছেএ নিয়ে জেলাজুড়ে প্রতিবাদ ও উত্তেজনা বিরাজ করছেবিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানাজানি হওয়ার পর ব্যাপক ভাইরাল হয়অনেকেই এই সাম্প্রদায়িক উসকানী দেওয়ার জন্য সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দায়ি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেনএবং এই ঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন

সরেজমিনে লুয়াইনি চা বাগান গেলে মসজিদের ইমাম মোহাম্মদ সৈয়দ আহমদ চৌধুরী জানান গত মঙ্গলবার (০৯ মার্চ) সকাল সাড়ে ৮টায় মসজিদ থেকে মক্তব পড়ানো শেষে তার গৃহপালিত পশু (বাছুর) কে কলাপাতা দিয়ে বাসপাতি খাওয়াচ্ছিলেনবাছুরটি মোটাতাজা ও স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্যবাসপাতি খাওয়ানোর সময় হঠাৎ করে বাছুরের গলায় তা আটকে গেলে বাছুরটি মাটিতে পড়ে যায়মাটিতে পড়ে যাওয়ার পর তিনি মনে করেছিলেন গরুটি মরে যাবেতাই মরে যাওয়ার চেয়ে জবাই করাই ভালোপরে তিনি তার স্ত্রীকে নিয়ে গরুটি জবাই করেনতিনি বলেন গরুটি জবাই করার পর চা বাগানের সভাপতি ওজিত কৈরী, অন্তু, বিশ্বজিৎ, রতনলাল সহ শখানেক লোক লাটিসটা নিয়ে উপস্থিত হয়ে বলে আমি নাকি মরা গরু জবাই করেছিআর আমি কেন ওখানে গরু জবাই করলাম এজন্য তারা আমার বাড়িও ঘেরাও করে রাখেএসময় অন্তু গালিগালাজ করে আমার ঘরে দরজার পাশে এসে বলে তুই ঘর থেকে বের হওতোকে আজ জবাই করে দেবঅন্তু একটি কাটের খাড়ি নিয়ে আমাকে মারতে আসেআমার স্ত্রী আগলে ধরে ঘরের দরজা লাগিয়ে দেয়পরে আমি প্রাণ বাঁচাতে ঘরের পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে মুসলিম পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি সমছু মিয়ার দোকানে যাইতারা দলবেধেঁ আমার বসত ঘরেও হামলা করেএসময় তারা বলে হুজুরকে বিদায় করে দাও এবং মসজিদে যেন হুজুর আজান না দেয়ঘটনার দিনই ইমামকে চাকরিচ্যুত করা হয়পরবর্তীতে তিনি বাগানের জিএমের কাছে গিয়ে বলেন তার চাকুরী ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য

সৈয়দ আহমদ চৌধুরী জানান এখানে ১২ বছর ধরে তিনি ইমামতি করছেনতিনি আসার আগে আরেকজন ইমাম মসজিদের মাহফিলে গরু জবাই করেনএজন্য ওই ইমামকেও চাকরিচ্যুত করা হয়েছিলমসজিদের ইমাম আহমদ চৌধুরী বলেন আমি যখন পালিয়ে সমসু মিয়ার দোকানে যাই তখন চা বাগানের শ্রমিকরা বাগানের জিএমের বাংলোতে এসে বিক্ষোভ করেপরে এখানে সমছু মিয়া সহ মুসলিম পঞ্চায়েতের কয়েকজন লোক বাংলোতে যানবাংলোতে জিএম শ্রমিকদের বুঝাতে ব্যর্থ হনপরে সেখানে যান বাহ্মণবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মমরুদ হোসেনশ্রমিকরা চেয়ারম্যানকে বিচার করতে বলেনএসময় চেয়ারম্যানসহ বাগানের জিএম মুসলিম পঞ্চায়েতের সভাপতি সমছু মিয়া সহ কয়েকজনকে দায়িত্ব দেন বাছুরটি মাটিতে পুঁতে ফেলার জন্যপরে তারা এসে বাছুরটি পুঁতে ফেলেন

এব্যাপারে বাহ্মণবাজার ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের সদস্য সত্য নারায়ণ নাইডু বলেন, এখানে কিছু গন্ড-গোল হয়েছিল মসজিদের ইমামের গরু জবাইকে কেন্দ্র করেতবে বিষয়টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও বাগানের জিএম সমধান করে দিয়েছেনপরে বিষয়টি প্রশাসনকে অবহিত করা হয়

বাহ্মণবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মমরুদ হোসেন প্রথমে এই ঘটনার সাথে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি অস্বীকার করে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্ঠা করলেও পরে স্বীকার করে বলেন শ্রমিকরা বিক্ষোভ করলে আমাকে ফোন দেওয়ায় সেখানে যাইবাগান কর্তৃপক্ষকে বলি যে বিষয়টি সমাধান করার জন্যএবং শ্রমিকদের বলি কাজে ফিরে যাওয়ার জন্য

এ ব্যাপারে লুয়াইনি চা বাগানের সিনিয়র সহকারি ব্যবস্থাপক মোঃ শামসুল হক ভূঁইয়া বলেন চা বাগানের নির্দিষ্ট একটি আইন আছেএর আগে বাগানে কুরবানী হতো নাপরে কুরবানীর জন্য নির্দিষ্ট স্থান করে দেওয়া হয়েছিলএখন এই দুটি স্থান আছেএক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা গরুটিকে পুঁতে ফেলার জন্য বলিনিআমরা বলেছি মসজিদের ইমামের বাড়ি থেকে গরুটি সরিয়ে ফেলা হোকযাতে বিষয়টি সমাধান হয়।

কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইয়ারদৌস হাসান জানান বিষয়টি অবগত হওয়ার পর ওদের সকলকে থানায় এনে গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে ওই ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে তাদের বক্তব্য শোনেছিজনপ্রতিনিধি স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ নিয়ে বিষয়টি সমাধানের চেষ্ঠা চালানো হচ্ছেআমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য যাতে নষ্ট না হয় সবাইকে এবিষয়টি গুরুত্ব দেওয়ার অনুরোধ করছিবর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছেআমরা ঘটনাটি নজরদারিতে রেখেছিযাতে কোন অপ্রীতিকর অবস্থার তৈরী না হয়

জানা যায় এই বাগানের ৩০-৪০ পরিবার মুসলামান বসবাস করলেও তারা উগ্র কিছু হিন্দু ধর্মবলম্বী লোকদের কারনে অনেকটাই জিম্মি ভাবেই ধর্ম কর্ম পালন করতে বাধ্য হনমুসলামানদের নিজ বাড়িতে গরু কুরবানী করতে দেয়না ওই বাগানের হিন্দু ধর্মবলম্বীরাএমনকি বাগানের মসজিদের পুকুরে দূর্গা পূঁজার সময় কথিত দেবী দূর্গা বির্সজন দিলেও এ নিয়ে কোন টু শব্দও করতে পারেন না ওই বাগানের স্থানীয় মুসলমানরাকিন্তু মুসলামনরা তাদের বসত ভিটায় কুরবানী কিংবা অনান্য ধর্মীয় কাজে গরু জবাই করলে তারা নিষেধ দিয়ে দাঙ্গা ফাসাদ সৃষ্টি করে


শেয়ার করুন

0 facebook: