15 January 2018

যদি মোল্লার দৌড় হয় মসজিদ পর্যন্ত! তবে আপনাদের দৌড় টয়লেট পর্যন্তই?

প্রতিকি ছবি
স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ ইমাম সাহেব হাসপাতাল যাওয়ার জন্য বাসে উঠলেন। খালি সিট পেয়ে বসে পড়লেন এক সিটে। আশেপাশের সিটগুলোতে শার্টপ্যান্ট পরা কয়েকজন লোক বসে আছেন। সবাই সম্ভবত সরকারী চাকরীজীবি। তারা দেশের অবস্থা নিয়ে আলোচনা করছেন। একেকজনে বিভিন্ন প্রসঙ্গে কথা বলছেন।

ইমাম সাহেব কিছু না বলে খুব মনযোগ সহকারে তাদের কথাবার্তা শুনছেন। যেনো তিনি নিশ্চুপ শ্রোতা। কথা না বলার আরেকটা কারন হলো, তিনি অসুস্থ মানুষ। কথা বলতে অস্বস্থিবোধ করছেন। পাশের এক শার্টপ্যান্ট পরা ভদ্রলোক বললেন, হুজুর আমরা সবাই কথা বলছি, আপনি কিছু বলছেন না যে। হুজুর বললেন, জনাব আমি অসুস্থ, কথা বলার ফিলিংস্টা তেমন নাই এখন। তাছাড়া আপনারা শিক্ষিত মানুষ, এখানে কথা না বলে শোনে যাওয়াই আমার জন্য শ্রেয়।

অমনিই পাশের এক ভদ্রলোক অট্রহাসি দিয়ে বলে উঠলেন, আরে হুজুররা আমাদের সাথে কেমনে কথা বলবেন! তারা দেশের অবস্থা কি-ই বা জানবেন! জানেন না, মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত??

সাথে সাথে প্যান্টশার্ট পরা সবাই হো হো করে হাসতে লাগলেন। হুজুর কিছুটা ইতঃস্ততায় পড়ে গেলেন। তারপর ভাবলেন, এসব শিক্ষিতদেরকে একটু শিক্ষা দেওয়া দরকার। অমনি হুজুর ভদ্রলোকদের উদ্দেশ্য বললেনঃ- কেমন আছেন আপনারা??

উনারা উত্তর দিলেন আমরা ভাল আছি হুজুর, কিন্তু কথা ঘুরানোর জন্য আপনি এখন অন্য প্রসঙ্গ আনছেন। (বলে সবাই আবার হাসতে লাগলেন)
হুজুর বললেনঃ অন্যপ্রসঙ্গ মানে, আমিতো আপনাদের হাল হাকিকত জিজ্ঞেস করছি!
উনারাঃ হুজুর, আমরা ভাল করেই বুঝছি, আপনি কথা ঘুরানোর জন্যই আমাদের ভাল মন্দ জিজ্ঞেস করছেন। (বলে আবার হাসি)
হুজুর বললেনঃ না ভাইয়েরা কথা ঘুরানোর জন্য নয়, আমাদের ইসলামিক কথাবার্তা বলার নিয়ম হলো, অপরিচিত কারো সাথে কথা বলার আগে তার শারিরীক হাল হক্বিকত জেনে নেওয়া।
দেখে নেই, আমার সাথে কথা বলার জন্য তার শারিরীক অবস্থা ঠিক আছে কি না??
আচ্ছা যাক বাদ দেন এসব, আপনাদের কথায় এবার আসা যাক। কী যেন বলছিলেন??
উনারা উত্তর দিলেন হুজুর বলেছি, “মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত বলেই বোয়াদবের মত আবার অট্রহাসি দিলেন। হুজুর বললেন ও আচ্ছা, তাই নাকি?? তা কেমনে বুঝলেন মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত?

উনারা বললেন কারন, আপনারা শুধু মসজিদ নিয়া আছেন, কি ভাবে নামায রোজা করবেন এটাই আপনাদের দিন রাতের ফিকির। দুনিয়ার কোন খবর নেই।
উনাদের কথা শুনে হুজুর বললেন ও আচ্ছা তাই যদি হয় তাহলে আমাদের দৌড় হল সারা পৃথিবী ব্যাপী! আর আপনাদের দৌড় হল ঘর থেকে টয়লেট পর্যন্ত।
(ভদ্রলোকরা পুরাই টাসকি খেল, সবগুলো নীরব) আর মনে মনে বলতে লাগল ওমা হুজুর কি বলেন এসব??
হুজুর আবার বললেন হ্যা, যদি মসজিদ নিয়ে পড়ে থাকার কারনে আমাদের দৌড় মসজিদ পর্যন্ত হয়; তাহলে আপনাদের দৌড় টয়লেট পর্যন্তই!! ভদ্রলোকেরা হুজুরের কথা শুনে সবাই একে অপরের দিকে চাওয়া চাওয়ি করছে। কিছুক্ষণ নীরব থেকে বললো। হুজুর, প্রমান করেন কেমনে আমাদের দৌড় টয়লেট পর্যন্ত!! আর আপনাদের দৌড় পৃথিবী ব্যাপী? (ভদ্রলোকদের এমন কথা শুনে ড্রাইভার গাড়ী থামিয়ে হাসতে লাগল)

হুজুর বললেন, ঠিক আছে, আমি কয়েকটা প্রশ্ন করি উত্তর দিন? মসজিদ শব্দের অর্থ কী? একটু বলেন আপনারা?
উনারা উত্তর দিলেন, যেখানে গিয়ে লোকেরা নামায আদায় করেন সেটাই মসজিদ।
হুজুর বললেন আরে এটাতো মসজিদের পারিভাষিক সংজ্ঞা। শাব্দিক অর্থটা বলেন। মসজিদকোন বাবের মাসদার এটাও বলেন?
উনারা বললেন আমরা পারি না হুজুর। হুজুর বললেন ঠিক আছে, কোন্ সিগাহ এটা বলেন। উনারা হা করে জবাব দিলেন আমরা পারিনা হুজুর। হুজুর আবার প্রশ্ন করলেন মসজিদ কোন সিগাহ এটাই জানেননা; আবার বলছেন মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত!! যেন মিষ্টি জীবনে না খেয়ে, মিষ্টি কত টক এই বলে ঘোষনা দিচ্ছেন!!

যাক, শুনেন মাসজিদশব্দটি আস সুজূদু মাসদার থেকে উদগত ইসমে যরফের একবচনজ্ঞাপক শব্দ। এর অর্থ; সেজদা করার জায়গা। অর্থাৎ যেখানে মহান আল্লাহ পাকের জন্য সেজদা করা হয়, শাব্দিক ভাবে সে জায়গাটাকেই মসজিদ বলে।

এখন সেজদা করার জন্য জায়গা পবিত্র হওয়াশর্ত। অপরদিকে নবীজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমার উম্মতের জন্য সমস্ত জগৎকে মসজিদ স্বরূপ বানানো হয়েছে, অর্থাৎ নবীজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাদীস শরীফ অনুযায়ী পৃথিবীর প্রতিটি পবিত্র জায়গাকেই মসজিদ বা সেজদা করার জায়গা বলা হয়। অর্থাৎ মসজিদে যেভাবে নামায আদায় করা যায় তেমনিভাবে সংসদেও নামায আদায় করা যায়, আদালতেও নামায আদায় করা যায়, অফিস ইনস্টিটিউশনেও সেজদা বা নামায আদায় করা যায়।

কারন, সংসদ, আদালত, অফিস সবগুলোই পবিত্র জায়গা । আর অপবিত্র হলো টয়লেট। সুতারাং মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত মানে মোল্লার দৌড় সংসদ, আদালত, অফিস, ইনস্টিটিউট সহ সমস্ত পৃথিবী পর্যন্ত!! আর আপনাদের দৌড় ঘর থেকে টয়লেট পর্যন্ত। বুঝলেন এবার??

উনারা রেগে গিয়ে উত্তর দিলেন কিন্তু এটা আমরা মানি না হুজুর, আমাদেরকে ভাল করে বুঝান আমাদের দৌড় টয়লেট পর্যন্ত কেমনে?? নাহলে আপনার খবর আছে বলে দিলাম। হুজুর বললেন ও আচ্ছা ঠিক আছে, তাহলে আরো বলছি। চিন্তা করবেন না একদম। আচ্ছা, আপনারা তো চাকরী করেন, তাই না?? –জ্বী, হুজুর আমরা চাকরী করি। বড় অংকের বেতন পান মাসে মাসে, ঠিক??  জ্বী, ঠিকই পাই।

ভাল, খুব ভাল। তা আপনারা যে এত টাকা কামাই করেন এসব কিসের জন্য?? আরে হুজুর আমাদের পেট আছেনা? বৌ বাচ্চা আছেনা? আমাদের খাওয়া দাওয়া করা লাগে না বুঝি?? চাকরী করে এত টাকা কামাই না করলে পেট বাঁচামু কেমনে??

হ্যা ঠিকই, তারমানে আপনারা পেটের জন্য চাকরী করছেন?? যদি এটাই মনে করেন তাহলে আপনাদের আসল চিন্তা হলো টাকা কামাই করে পেটকে সন্তুষ্ট রাখা, ভাল করে পেট ভরে খাওয়া; সর্বশেষ, সেই পেটকে ক্লিয়ার করতে রাতের বেলা টয়লেটে গিয়ে যুদ্ধ করা। তার মানে আপনাদের এই চাকরী বাকরি করার আসল টার্গেটই হলো সর্বশেষে টয়লেটে যাওয়া। সুতারাং আপনাদের দৌড়তো টয়লেট পর্যন্তই। তাহলে মানছেন না কেন??

এবার সকলেই নিরব হয়ে গেল। তাই একটা কথাই বলব যারা আলেমদেরকে এমন কথা বলেন তারা একটু সাবধান হোন। আলেমদের সম্মান করতে শিখুন। কেননা, আপনি মারা গেলে আপনার জানাযা কিন্তু ঐ আলেম দিয়েই পড়াতে হবে। আলেমরা না থাকলে আপনাকে জানোয়ার, গরু, ছাগল, কুত্তার মত রাস্তাঘাটে মরে থাকতে হবে জানাযা দেওয়ার মত একজন আলেম পাবেন না।


শেয়ার করুন

0 facebook: