05 February 2018

মিসরের অভ্যন্তরের বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের গোপন যুদ্ধ!


আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ ইসরায়েলের চিহ্নবিহীন হেলিকপ্টার, ড্রোন আর যুদ্ধবিমান দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে মিসরের অভ্যন্তরে হামলা চালিয়ে আসছে। মিসরীয় প্রেসিডেন্ট ফাতাহ আল সিসির সঙ্গে ইসরায়েলের সমঝোতা মেনেই সিনাই উপত্যকার বিদ্রোহীষ্ঠীগুলোর অবস্থান লক্ষ্য করে ওইসব হামলা চালানো হয়। বিস্ফোরক এই খবর দিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমস দাবি করেছে, ২০১৫ সাল থেকে মিশরের অভ্যন্তরে ইসরায়েলের এমন বিমান অভিযানের সংখ্যা ছিল শতাধিক। প্রভাবশালী ওই মার্কিন সংবাদমাধ্যম একে দুই পক্ষের অভিন্ন স্বার্থের গোপন যুদ্ধ আখ্যা দিয়েছে।

নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর খবরে বলা হয়, এক সময় মিসর ও ইসরায়েল ছিল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী। দুই দেশ কমপক্ষে তিনটি যুদ্ধে একে অপরের বিরুদ্ধে লড়েছে। তারপর শান্তি আলোচনার টেবিলেও মুখোমুখি ছিল দুই প্রতিবেশী। কিন্তু এখন মিসর ও ইসরায়েল এক অভিন্ন শত্রু অর্থাৎ বিদ্রোহীগোষ্ঠীদের বিরুদ্ধে গোপন মিত্রতা গড়েছে। খবরে বলা হয়েছে, সিনাই উপত্যকা ভিত্তিক বিদ্রোহীগোষ্ঠী নির্মূলে ব্যর্থ হয়ে প্রতিবেশী ইসরায়েলের শরণাপন্ন হয় দেশটির সেনাবাহিনী। ইসরায়েলও নিজ সীমান্তের অপরপাশে সৃষ্ট এই নিরাপত্তা হুমকি নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল। তাই দেশটিও সানন্দে সাড়া দেয় মিসরের প্রস্তাবে। নিউ ইয়র্ক টাইমস বলছে, এতে লাভবান হয়েছে দুপক্ষই। একদিকে ইসরায়েলি হস্তক্ষেপের ফলে সিনাই উপত্যকায় ৫ বছর ধরে চলা বিদ্রোহী-বিরোধী অভিযানে প্রথমবারের মতো চালকের আসনে বসে মিসরের সেনাবাহিনী। অপরদিকে, বিমান হামলা চালিয়ে বিদ্রোহীদের নিশ্চিহ্ন করায় সুরক্ষিত হয়েছে ইসরায়েলের সীমানা।

ইরান ও ইসরায়েলের মতো করেইবিদ্রোহী মুসলিম ব্রাদারহুডকেও শত্রু হিসেবে বিবেচনা করে অনেক আরব দেশ। অভিন্ন শত্রুদের বিরুদ্ধে অনেক আরব দেশই এখন ইসরায়েলের সঙ্গে গোপনে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তুলেছে। অথচ, আরব দেশগুলোর সরকারি বিবৃতি আর সেখানকার সংবাদমাধ্যমে নিয়মিতই ইসরায়েলের কড়া সমালোচনা করা হয়। মিসরের অভ্যন্তরে ইসরায়েলি বিমান অভিযানের খবর এবারই প্রথম এসেছে তা নয়। এর আগে বার্তাসংস্থা এপিও সিনাই উপত্যকায় ইসরায়েলি ড্রোনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ৫ বিদ্রোহী নিহত হওয়ার খবর দিয়েছিল। তবে সেবার মিসর এই দাবি অস্বীকার করেছিল।

এই ঘটনার দুই বছর পর সিনাই উপত্যকার বিদ্রোহীগোষ্ঠীগুলো ব্যাপক শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ততদিনে নিরাপত্তা বাহিনীর কয়েকশসদস্য ও সেনা নিহত হয়েছে সন্ত্রাসী হামলায়। ২০১৪ সালের নভেম্বরে এই বিদ্রোহীরা ইসলামিক স্টেটের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করে। পরের বছর জুলাইয়ে শেখ জুয়াইদ নামে একটি শহর সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য দখলে নেয় তারা। অক্টোবরের শেষের দিকে রাশিয়ার একটি চার্টার বিমান ভূপাতিত করে জঙ্গিরা। এতে নিহত হয় ২২৪ জন যাত্রী। নিউ ইয়র্ক টাইমস বলছে,  বিদ্রোহীদের ঠেকাতে যখন হিমশিম খেয়েই ইসরায়েলের শরণাপন্ন হন সিসি।

মূলত, অভ্যন্তরীণ বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কায় বিষয়টি শুধু খুব অল্প কজন জেনারেলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেন সিসি। অপরদিকে ইসরায়েলও সামরিক সেন্সরশিপের মাধ্যমে স্থানীয় গণমাধ্যমকে এই নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ থেকে বিরত রাখে। ২০১৬ সালে অবশ্য মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল যে, ইসরায়েল মিসরের অভ্যন্তরে ড্রোন অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু নিউ ইয়র্ক টাইমসের এই প্রতিবেদনেই ইসরায়েলের অভিযানের ব্যাপক আকারের বিস্তৃতি সম্পর্কে বিশদ ধারণা পাওয়া গেছে।


শেয়ার করুন

0 facebook: