স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ গাজীপুরের
নির্বাচন স্থগিতের বিরুদ্ধে দুই মেয়র প্রার্থীর আবেদনের ওপর আপিল বিভাগের নিয়মিত
বেঞ্চে আজ শুনানি হচ্ছে না। ইসির আইনজীবী আপিল বিভাগে সময় চেয়ে বলেন, আমরা আপিল করব। এজন্য তিনি সময়ের আবেদন করেন। কিন্তু বাদীপক্ষের আইনজীবীরা শুনানির কথা বললে আদালত কাল শুনানির নতুন তারিখ
দেন।
প্রধান
বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদের নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ আজ বুধবার এ আদেশ
দেন। এর আগে মঙ্গলবার গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে
হাইকোর্টের দেয়া স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের দুই মেয়র প্রার্থীর
আবেদন শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে আজ শুনানি হওয়ার কথা ছিল।
মঙ্গলবার আপিল
বিভাগের বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর চেম্বারজজ আদালত এই আদেশ দেন। হাইকোর্টের আদেশের বিষয়ে
চেম্বার বিচারপতি নতুন করে কোনো আদেশ না দেয়ায় গাজীপুর সিটি কর্পোরেশেনের নির্বাচন
স্থগিতই থাকছে বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন।
গাজীপুর সিটি
করপোরেশন নির্বাচন স্থগিত করে হাইকোর্টের দেয়া তিন মাসের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার
চেয়ে বিএনপি প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার ও সরকারি দল আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী
জাহাঙ্গীর আলমের আবেদনের শুনানি গতকাল মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ
হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়। অসমাপ্ত অবস্থায় শুনানি আজ
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মুলতবি করেন আপিল বিভাগ।
আপিল বেঞ্চের
অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার। আদালতে আপিলের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ,
সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন,
ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন প্রমুখ। এ ছাড়া এ মামলার রিট আবেদনকারী
আজহারুল ইসলাম সুরুজের পে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ। অপর দিকে আওয়ামী লীগের মেয়র
প্রার্থীর পে এস এম শফিকুল ইসলাম বাবু শুনানি করেন।
বুধবার আপিল
বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে। মঙ্গলবার উভয়পরে শুনানি শেষে চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর আদালত
হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত না করে আবেদন দুটি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠানোর
আদেশ দেন।
নির্বাচন
কমিশনের তফসিল অনুযায়ী আগামী ১৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশনে নির্বাচন হওয়ার কথা
রয়েছে। গত সোমবার হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে
আবেদন করেন গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী।
হাইকোর্টের
স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে আবেদনের বিষয়ে বিএনপি প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার
বলেন, ক্ষমতাসীনরাই আদালতের মাধ্যমে এই নির্বাচন বন্ধ
করিয়েছে। তারা জানে যে এই নির্বাচনে আমি
বিপুল ভোটে জয়ী হবো। এটি জানার পরই তারা নির্বাচন স্থগিতের এই প্রক্রিয়ায় গিয়েছে।
অন্য দিকে
আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, চলমান প্রক্রিয়ায় গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন চাই। যেকোনো প্রক্রিয়ায় নির্বাচনটা যেন হয়। গাজীপুর সিটির উন্নয়নের
স্বার্থে আমরা নির্বাচন চাই। আমরা গণতন্ত্র চর্চা করতে চাই। গত রোববার গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন
হাইকোর্ট। বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও
বিচারপতি জাফর আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশনের একটি বেঞ্চ সাভারের
শিমুলিয়া ইউনিয়নের ছয়টি মৌজা অন্তর্ভুক্ত করার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদনের
শুনানি গ্রহণ করে এ আদেশ দেন। একইসাথে আদালত সাভারের শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ছয়টি মৌজাকে গাজীপুর সিটি
করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত করার গেজেট এবং গাজীপুর সিটি নির্বাচন সংক্রান্ত তফসিল কেন
অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন।
স্থানীয় সরকার
মন্ত্রণালয় সচিব, ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার,
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (সিটি করপোরেশন-২),
ঢাকা জেলা প্রশাসক, গাজীপুর সিটি
করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রধান
নির্বাচন কমিশনারসহ ৯ জনকে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
গত রোববার
সকালে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি দায়ের করেন সাভার উপজেলার আশুলিয়া থানার
শিমুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা এ বি এম আজহারুল ইসলাম সুরুজ। এ বিষয়ে রিটকারীর আইনজীবী বি এম ইলিয়াস জানান, ২০১৩ সালে সাভারের ছয়টি মৌজাকে (শিমুলিয়া ইউনিয়নের দণি
বড়বাড়ি, ডোমনা, শিবরামপুর,
পশ্চিম পানিশাইল, পানিশাইল ও
ডোমনাগ) গাজীপুর সিটি করপোরেশনের অধীনে অন্তর্ভুক্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। তখন বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সরকার
মন্ত্রণালয়ে শিমুলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এ বি এম আজহারুল ইসলাম সুরুজ
আপত্তি তোলেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপ সে
আপত্তি নিষ্পত্তি না করায় তিনি হাইকোর্টে রিট করেন। সেই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত সুরুজের আবেদনটি
নিষ্পত্তি করতে সংশ্লিষ্টদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন।
কিন্তু বিষয়টি
নিষ্পত্তি না করেই ২০১৬ সালে শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে এ ছয়টি মৌজা
শিমুলিয়ার মধ্যেই ছিল। পরে সে নির্বাচনে (আওয়ামী লীগ থেকে) আজহারুল ইসলাম সুরুজ চেয়ারম্যান নির্বাচিত
হন। কিন্তু পরে চলতি বছরে ৪ মার্চ
ওই সব মৌজাকে সিটি করপোরেশনের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে ফের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ফলে প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী গত ৩ এপ্রিল
গাজীপুর সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এরপর ওই সব মৌজা গাজীপুর সিটির অন্তর্ভুক্ত হলেও
স্থানীয়দের ভোটাধিকার নির্ধারণ না করা, ২০১৩ সালের
ছয়টি মৌজা অন্তর্ভুক্তির গেজেট এবং চলতি বছরের ৪ মার্চ গাজীপুর সিটি নির্বাচনের
গেজেট ও তফসিলের চ্যালেঞ্জ করে রিটটি দায়ের করা হয়।
0 facebook: