স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ দুর্নীতি দমন
কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ জানিয়েছেন। কোনও কাজে ব্যবসায়ীরা যেন
কাউকে ঘুষ না দেন, সে আহ্বান কোনও প্রকার তদবির ও
প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপ কাঙ্খিত নয় মন্তব্য করে বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায়
বিভিন্ন চেম্বারের ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ আহ্বান জানান। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন
কর্তৃপক্ষের (বিডা) উদ্যোগে ‘প্রভাইডিং করাপশন ফ্রি পাবলিক
সার্ভিস ফর ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড বিজনেস ফ্রেন্ডলি ইনভায়রনমেন্ট ইন বাংলাদেশ’
শীর্ষক এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
দুদক
চেয়ারম্যান বলেন, ‘গত বছরই ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে
প্রায় ২৫ জন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেফতার করে দুদক। ব্যবসায়ীদের প্রতি আমাদের অনুরোধ, কোনও কাজে ঘুষ দেবেন না, ঘুষ দেওয়ার আগে বিষয়টি দুদককে জানালে ঘুষ গ্রহীতাকে আইনের আওতায় আনা হবে। একইসঙ্গে ব্যবসায়ীদের বৈধ কাজ
সঠিক সময়েই সম্পন্ন করার ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।’
দুর্নীতি
ব্যবসার পরিবেশ নষ্ট করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ব্যবসার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো মুক্তবাজার ব্যবস্থাপনা। এই বাজার ব্যবস্থাপনায় যে কোনও
ধরনের অনৈতিক হস্তক্ষেপ বা দুর্নীতি ব্যবসার পরিবেশ বিনষ্ট করে এবং দেশীয়
বিনিয়োগের পথকে বাধাগ্রস্ত করে। দেশীয় বিনিয়োগ না হলে বৈদেশিক বিনিয়োগও আসবে না।’
ইকবাল মাহমুদ
বলেন, ‘দুদকের কোনও কোনও কর্মকর্তা ব্যবসায়ীদের হয়রানি করেন,
এমন অভিযোগ কখনও কখনও শোনা যায়। আমি এ বিষয়ে দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই, এমন কোনও ঘটনা আপনাদের নজরে এলে তা দুদককে জানান। আমাদের দ্বার ব্যবসায়ীদের জন্য
সর্বদা উন্মুক্ত। তবে ব্যবসার একটি নৈতিক মানদণ্ড থাকা উচিৎ। ভ্যাট ফাঁকি, ট্যাক্স ফাঁকি,
ওভার ইনভয়েসিং অথবা আন্ডার-ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে অনৈতিক
উপায়ে অর্থ উপার্জন দেশের সংবিধানও সমর্থন করে না।’
তিনি বলেন,
“সংবিধানের ২০(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্র এমন অবস্থা সৃষ্টি চেষ্টা করিবেন, যেখানে সাধারণ নীতি হিসাবে কোনও ব্যক্তি অনুপার্জিত আয় ভোগ
করতে সমর্থ হইবেন না’।” যখন অনুপার্জিত আয় কেউ ভোগ করেন এবং দুদকে অভিযোগ আসে, তখন কমিশনের আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার বিষয়টি আইনি প্রক্রিয়ার অংশ হয়ে যায়।’
দুদক
চেয়ারম্যান বলেন, ‘ব্যাংক ঋণ বিতরণ কিংবা আদায়
প্রক্রিয়ায় দুদক হস্তক্ষেপ করে না। তবে ব্যাংক ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে কেউ যদি জাল কাগজপত্র বা দলিলাদি ব্যবহার
করেন, তাহলে বিষয়টি দুদকের এখতিয়ারে এসে যায়। সবাইকে মনে রাখতে হবে, সরকারি-বেসরকারি সব ব্যাংকের অর্থই পাবলিক মানি। এটার যে কোনও প্রকার অপচয়
বা ক্ষতিসাধনই দুর্নীতি।’
পদ্ধতিগত
উন্নয়ন ছাড়া সরকারি পরিষেবার মান উন্নয়ন সম্ভব নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দ্রুত সেবা নেওয়ার নামে ঘুষ বা স্পিড মানি সহ্য করা হবে না। সরকারি সব সেবা নির্ধারিত টাইম-ফ্রেমে
দিতে হবে। নির্ধারিত সময়ে সেবা দিতে না
পারলে দায়ী কর্মকর্তাকেই এর ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, এমন ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। সরকারি কর্মকর্তারা যদি সচিবালয় নির্দেশিকা মানেন, তাহলেই ঘুষ বা স্পিড মানির প্রবণতা কমে আসবে।’
মতবিনিময় সভায়
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় সব ধরনের বিধি-বিধান, আইন-কানুন হবে বৈষম্যহীন ও সম-সুযোগের ক্ষেত্র।’ তিনি আরও বলেন, ‘ব্যবসার ক্ষেত্রে দুর্নীতি থাকলে পণ্য এবং সেবার মূল্য বেড়ে যায় এবং
বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় অসমতার সৃষ্টি হয়।’
মতবিনিময় সভায়
আরও বক্তব্য রাখেন– এফিসিসিআইয়ের পরিচালক হাসিনা
নেওয়াজ, ডিসিসিআইয়ের পরিচালক সেলিম আখতার খান, এফসিসিআইয়ের মহাসচিব ফারুক আহমেদ, মালোয়েশিয়া-বাংলাদেশ চেম্বারের প্রেসিডেন্ট মোয়াজ্জেম হোসেন প্রমুখ।
খবর বিভাগঃ
জাতীয়
ব্যবসা ও বাণিজ্য
0 facebook: