স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ মাদক নির্মূলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চলমান অভিযানে রাজধানীর তেজগাঁওসহ ছয় জেলায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নয় ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। পুলিশ ও র্যাবের দাবি, নিহতরা সবাই মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন।
এদের মধ্যে তেজগাঁয়ের শিল্পাঞ্চল এলাকায় ১, ঝিনাইদহে ১, কক্সবাজারে ২, কলারোয়ায় ১, নেত্রকোনায় ২, ময়মনসিংহে ১, গাইবান্ধায় ১ ও কুমিল্লায় ১ জন নিহত হয়েছেন।
আমাদের সময়ের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
তেজগাঁও: রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় এলিটফোর্স র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ কামরুল নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত পৌনে ২টার দিকে র্যাব-২ এর একটি দল মাদকবিরোধী অভিযানে গেলে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে ওই মাদক ব্যবসায়ী নিহত হন। আহত হয়েছেন দুই র্যাব সদস্য।
র্যাবের দপ্তর থেকে পাঠানো ক্ষুদেবার্তায় জানানো হয়, র্যাব-২ এর একটি দল ও মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে গুলিবিনিময় হয়। এতে তেজগাঁও রেললাইন বস্তি এবং মহাখালী সাততলা বস্তি এলাকার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী কামরুল নিহত হন।
বার্তায় দাবি করা হয়েছে, নিহত কামরুল ১৫টির অধিক মাদক ও অস্ত্র মামলার আসামি। ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র, গুলি ও বিপুল পরিমাণ ইয়াবা উদ্ধার করেছে র্যাব। ঝিনাইদাহ: ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। পুলিশের ভাষ্য, নিহত ওই ব্যক্তি চিহ্নিত মাদকব্যবসায়ী। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার মোবারকগঞ্জ চিনিকলের উত্তরে আড়পাড়া অফদা মাঠে এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে।
নিহত ওই মাদক ব্যবসায়ীর নাম শামীম সরদার ওরফে মামুন (৪২)। তিনি কালীগঞ্জ পৌর এলাকার আড়পাড়া কাঁচারীমোড়ের মমিন সরদারের ছেলে। তাদের আদি বাড়ি পুরাতন ঢাকায়। পুুলিশ জানায়, এ ঘটনায় তাদের চার সদস্য আহত হয়েছে। আহত ওই পুলিশ সদস্যদের কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান খান জানান, মাদকবিরোধী অভিযানকালে তাদের একটি টহলদলকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে মাদক ব্যবসায়ীরা। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। এসময় উভয় পক্ষে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে মাদক ব্যবসায়ীরা পালিয়ে গেলে ঘটনাস্থল থেকে মামুনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে একটা বিদেশি পিস্তল, ৩ রাউন্ড গুলি, ১৭ বোতল ফেনসিডিল, ৫শ পিচ ইয়বা উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের ওই কর্মকর্তা আরও জানান, শামীম সরদারের নামে ১২টা মাদকের মামলা রয়েছে।
কলারোয়া : সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, নিহত ওই ব্যক্তি মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে উপজেলার সোনাবাড়িয়া ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর গ্রামে এ বন্দুকযুদ্ধেরে ঘটনা ঘটে। নিহত ওই ব্যক্তির নাম ইউনুস আলী দালাল (৪৫)। তিনি উপজেলার দক্ষিণ ভাদিয়ালি গ্রামের আব্দুল্লাহ দালালের ছেলে।
কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিপ্লব কুমার নাথ জানান, গতকাল দিবাগত রাত ২টার দিকে সোনাবাড়িয়া ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর-বড়ালি পাকা রাস্তা সংলগ্ন সীমান্ত এলাকায় দুই দল মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে গোলাগুলি হচ্ছে এমন খবর পেয়ে থানা পুলিশের টহলদল সেখানে যায়। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পাঁচরাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে হয়। এতে দুইপক্ষই পালিয়ে গেলে ঘটনাস্থলে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ইউনুসকে পাওয়া যায়। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে কলারোয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. শফিকুল ইসলাম তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পুলিশের ওই কর্মকর্তা আরও জানান, ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ একটি ওয়ান শ্যুটার গান, ২ রাউন্ড গুলি ও ৭০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়েছে। ইউনুস আলী দালাল একজন শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। তার নামে একাধিক মাদক মামলা রয়েছে। ইউনুসের লাশ সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
কক্সবাজার: কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ সড়কে দুই গ্রুপ মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে ইউপি সদস্য আকতার কামাল (৪১) নিহত হয়েছেন। আজ শুক্রবার সকাল নয়টার রামু উপজেলার খুনিয়াপালং ইউনিয়নের হিমছড়ির ২ নং ব্রীজ থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
টেকনাফের সাবরাং ইউপি’র চেয়ার্যান নুর হোসেন বলেন, নিহত আকতার কামাল উখিয়া-টেকনাফ আসনের সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির বড় বোন শামসুনাহারের দেবর। তিনি টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের সদস্য এবং একই এলাকার মৃত নজির হোসেনের ছেলে।
রামু থানার ওসি লিয়াকত আলী সিকদার বলেন, আজ ভোরে ইয়াবার লেনদেনকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের মধ্যে মেরিন ড্রাইভ সড়কে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আকতার কামালের মৃতদেহ খুজে পায়। এসময় সেখান থেকে পাশ থেকে ৩ হাজার ইয়াবা , ১ টি দেশিয় তৈরি এলজি এবং ৪ রাউন্ড কার্তুজ ও ৩ টি খোসা উদ্ধার করা হয়।
টেকনাফ থানার ওসি রনজিত কুমার বড়ূয়া জানান, আকতার কামাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ও পুলিশের তালিকাভূক্ত ইয়াবা কারবারী। তার বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় ৫ টি মামলা রয়েছে। এরমধ্যে দুটি ইয়াবা ও একটি মানবপাচার মামলা।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল বলেন, ‘নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে রয়েছে।’ অন্যদিকে মহেশখালী উপজেলার পাহাড়ি এলাকা বড় মহেশখালীর মুন্সির ডেইল পাহাড়তলী গ্রামে ‘বন্দুকযুদ্ধে’মোস্তাক আহমদ (৩৫) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
ত্রিমুখী গোলাগুলি হওয়ায় কার গুলিতে মোস্তাক মারা গেছেন তা নিশ্চিত না হলেও পুলিশের দাবি দু’গ্রুপের ‘বন্দুকযুদ্ধে’ই মোস্তাক নিহত হয়েছেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে এক হাজার পিস ইয়াবা, ৭ রাউন্ড কার্তুজসহ ৪টি থ্রি কোয়ার্টার বন্দুক জব্দ করেছে। মোস্তাকের বিরুদ্ধে দুটি অস্ত্র মামলা, একটি পুলিশ অ্যাসল্ট ও আরেকটি মাদক মামলা রয়েছে।
মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ জানান, রাত ১০টার দিকে বড় মহেশখালীর মুন্সির ডেইল পাহাড়তলী এলাকায় গোলাগুলির সংবাদ পেয়ে থানার এএসআই সঞ্জীব দত্ত, জুয়েলসহ বেশ কজন অফিসার ও সঙ্গীয় ফোর্স অভিযানে যায়। এসময় দুর্বৃত্তরা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। পুলিশও পাল্টা গুলি ছুড়ে।
নেত্রকোনা: নেত্রকোনা জেলার সদর উপজেলার মদনপুর ইউনিয়নের মনাং এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ অজ্ঞাত পরিচয়ের দুই মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। এ সময় ৩ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে ওই ইউনিয়নের মনাং এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে ৭০৫ গ্রাম হেরোইন, ৩ হাজার ৫ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট ও ২টি পাইপগান উদ্ধার করে পুলিশ।
মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বোরহান উদ্দিন খান জানান, মাদক কেনাবেচা হচ্ছে এমন সংবাদ পেয়ে ওই এলাকায় পুলিশের একটি টিম অভিযানে যায়। উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা গুলি ছুড়লে পুলিশের দুই কর্মকর্তা ও এক পুলিশ সদস্য আহত হন। এ সময় দুই মাদক ব্যবসায়ী নিহত হন।
শেরপুর: জেলার শীর্ষ সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী আবুল কালাম আজাদ ওরফে কালু ডাকাত পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’নিহত হয়েছেন। শুক্রবার ভোর সাড়ে ৩টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। ময়মনসিংহ: শহরের পুরোহিত পাড়ায় বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত পৌনে দুইটার দিকে গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ রাজন নামের এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। এসময় গোয়েন্দা পুলিশের ওসিসহ দুইজন আহত হয়েছেন।
গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশিকুর রহমান জানান, শহরের পুরোহিত পাড়া রেলওয়ে কলোনির ভাঙা ওয়াল এলাকায় রেনু বেগমের বাড়ির সামনে পুকুর পারে মাদক ব্যবসায়ীরা অবস্থান করছে জানতে পেরে অভিযান চালায় পুলিশ। এসময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে গুলি চালায় মাদক ব্যবসায়ীরা। পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালালে গুলিবিদ্ধ হয় রাজন। পরে তাকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত বলে জানান। ঘটনাস্থল থেকে চারশ’ পিস ইয়াবা, তিনটি গুলির খোসা, একটি চাইনিজ কুড়াল ও ১টি ধারালো হাসুয়া উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় গোয়েন্দা পুলিশের ওসি আশিকুর রহমান ও পুলিশ সদস্য কাওছার আহত হন বলেও জানান।
গাইবান্ধা: জেলার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী জুয়েল মিয়া শুক্রবার ভোররাতে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। এসময় তিন পুলিশ সদস্য আহত হন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ইয়াবা, অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করে। নিহত জুয়েল গাইবান্ধা শহরের কালীবাড়ি এলাকার মৃত নসিম ড্রাইভারের ছেলে।
পুলিশ জানায়, ডাকাতির প্রস্তুতি ও মাদক কেনাবেচা হচ্ছে এমন সংবাদ পেয়ে পুলিশ গাইবান্ধা সদরের শেষ সীমানার বালাসীঘাট এলাকায় অভিযান চালায়। এসময় পুলিশকে উদ্দেশ্য করে গুলি করে জুয়েল ও তার সহযোগীরা। এসময় পুলিশও পাল্টা গুলি করলে মাদক ব্যবসায়ী জুয়েল নিহত হয়। এসময় আহত হয় তিন পুলিশ সদস্য।
পুলিশ সুপার মো. মান্নান মিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
কুমিল্লা: কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলায় গোয়েন্দা পুলিশ ও থানা পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ কামাল ওরফে ফেন্সি কামাল নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। এসময় গ্রেপ্তার হয়েছে আরও দুই মাদক ব্যবসায়ী। আহত হয়েছেন গোয়েন্দা পুলিশের ৩ সদস্য। ঘটনাস্থল থেকে একটি এলজি ও ৫০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত কামালের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ১২ টি মাদক মামলা রয়েছে বলে জানায় পুলিশ। বুড়িচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনোজ কুমার দে জানান, বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে মাদকবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে গোয়েন্দা পুলিশ ও থানা পুলিশের একটি দল বুড়িচং উপজেলার মহিষমাড়া এলাকায় অভিযান চালায়। এসময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদকব্যসায়ীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি করে। পুলিশও পাল্টা গুলি করলে মাদক ব্যবসায়ী কামাল গুরুতর আহত হন। পরে তাকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে জানান। এসময় গ্রেপ্তার হন কামালের দুই সহযোগী হানিফ ও ইলিয়াছ।
নিহত কামাল আদর্শ সদর উপজেলার রাজমঙ্গলপুর গ্রামের হিরন মিয়ার ছেলে। আহত গোয়েন্দা পুলিশ সদস্যরা হলেন এসআই নন্দন চন্দ্র সরকার, এসআই সাহাবুল ইসলাম ও কনস্টেবল মো. সুমন মিয়া।
0 facebook: