![]() |
স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ এই মুহূর্তে দেশের রাজনীতি নিয়ে সদরে-অন্দরে যতটা আলোচনা হচ্ছে তার চেয়ে ঢের বেশি কথা হচ্ছে সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার একের পর এক বক্তব্য নিয়ে। সরকারের মন্ত্রী ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা সেসব বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে গলদঘর্ম হচ্ছেন। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমও বিচারপতি সিনহার বক্তব্য গুরুত্বসহকারে প্রচার করছে প্রায়ই। অবস্থা এত দূর গড়িয়েছে যে খোদ আইনমন্ত্রী বলতে বাধ্য হয়েছেন আদালতের মাধ্যমে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।
যদিও আইনমন্ত্রীর এই বক্তব্যকে ‘রাজনৈতিক’ ও ‘অবাস্তব’ বলে উল্লেখ করেছেন আইনজ্ঞরা। এরই মধ্যে গত মঙ্গলবার এককালের বিএনপি নেতা এবং বর্তমানে সরকারি দলের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বিচারপতি সিনহার বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে শাহবাগ থানায় দু’টি মামলা করেছেন। মামলায় তিনি প্রধান বিচারপতি থাকাকালে তাকে খাস কামরায় ডেকে ৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করার অভিযোগ এনেছেন। মামলার একটিতে ২ কোটি এবং অপরটিতে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগ করা হয়েছে।
মামলাটি গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করে গতকাল বুধবার দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনকে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। এস কে সিনহার ভাই অনন্ত কুমার সিনহা ২ লাখ ৮০ হাজার ডলার ব্যয় করে কিভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ি কিনেছেন সে বিষয়টি নিয়েও তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন। দুদকের চেয়ারম্যান অবশ্য গত সপ্তাহে সাবেক প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে কোনো তদন্ত করার বিষয় অস্বীকার করেছিলেন।
নিজের লেখা বই ‘এ ব্রোকেন ড্রিম’ এর প্রকাশনা উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বলেছেন, ‘একটি বই নিয়ে তারা (সরকার) এত ভীত কেন?’ তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে মোটেও তিনি চিন্তিত নন। জীবনের ভয়েই তিনি দেশে ফিরছেন না। কেননা দেশে ফিরলে তাকে হত্যা করা হতে পারে। এ কারণেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন। বিচারপতি সিনহা বলেন, তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ আনা হয়েছে তখন, যখন তিনি সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে আপিল বিভাগের রায় প্রদানে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বিচারপতি এস কে সিনহার বই এবং সাংবাদিক সাক্ষাৎকারে সরকারের বিরুদ্ধে দেয়া বিভিন্ন বক্তব্য সরকারকে বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে। বিশেষ করে বইটি ইংরেজিতে হওয়ায় বিদেশীদের কাছে তা সহজে পৌঁছে যাচ্ছে এবং সরকারকে ভাবমর্যাদা সঙ্কটে ফেলছে। সিনহার বক্তব্যে দেশের একজন প্রধান বিচারপতি কোন পরিস্থিতিতে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন সে বিষয়ে সবিস্তার উল্লেখ থাকায় সরকারের ইমেজ ক্ষুণ হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ‘দেশে আইনের শাসন, বিচারব্যবস্থার অধঃপতন নিয়েও কথা বলেছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি। সরকারের মেয়াদের শেষ সময়ে এবং নির্বাচনের আগে বিচারপতি সিনহার এসব বক্তব্য আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে।
সূত্র জানায়, বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বই লিখেই ক্ষান্ত হননি। ইতোমধ্যেই প্রতিবেশী দেশের উচ্চপর্যায়েও তিনি যোগাযোগ করেছেন এবং আওয়ামী লীগ সরকারকে কোনোভাবেই সমর্থন না করার জন্য তাদের অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, দেশের মানুষ বর্তমান সরকারকে পছন্দ করেন না। তারা সরকারের ওপর বিরক্ত। প্রতিবেশী দেশের উচিত হবে না এই সরকারকে কোনোভাবেই সমর্থন দেয়া। আজ হোক কাল হোক দেশের মানুষ বিদ্রোহ করবে এবং তখন বর্তমান সরকারকে সমর্থন দেয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে ভারতের। তিনি বর্তমান সরকারকে কর্তৃত্ববাদী বলে উল্লেখ করে বলেন, ভবিষ্যতে কোনো পরিবর্তন হলে বাংলাদেশের ওপর ভারত নিজেদের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলবে। বক্তব্যের সমর্থনে তিনি বিভিন্ন দলিলপত্র পেশ করেছেন এবং ভারত সরকারের উচ্চপর্যায়ে এসব জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছেও তিনি বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন।
জানা গেছে, বিচারপতি সিনহার এসব তৎপরতা সরকারের মধ্যে অস্বস্তি সৃষ্টি করেছে। সরকারিভাবে ভারত ও অন্যান্য দেশের প্রতিনিধিদের কাছে বিচারপতি সিনহার তৎপরতা সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। প্রাথমিক খবরে এসবের সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পরই বাংলাদেশে সিনহা ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। জানা গেছে, মামলার তদন্ত দ্রুত করার জন্য ইতোমধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সাবেক এই প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ১৪ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের অফিস থেকে ১১ দফা অভিযোগ উত্থাপন করা হয়। এতে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং মানিলন্ডারিংয়ের মতো গুরুতর অভিযোগ আনা হয়। পরে অবশ্য এসব অভিযোগ সম্পর্কে উভয়পক্ষই নিশ্চুপ হয়ে যায়। বিচারপতি সিনহার সাম্প্রতিক বই প্রকাশের পর আগের অভিযোগগুলোই মামলায় রূপান্তর ঘটেছে। সরকার এখন চাইছে বিচারপতি সিনহার অভিযোগের জবাব দেয়ার চাইতে তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাগুলো শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে। আর সেটি সম্ভব হলে এক ঢিলে দুই পাখি মারা যাবে।
খবর বিভাগঃ
জাতীয়
0 facebook: