আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ একজন মৃত নারীর জরায়ু অন্য নারীর শরীরে প্রতিস্থাপন করা হলে তিনি মা হয়েছেন বলে দাবি করেছেন ব্রাজিলের চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, বিশ্বে এটিই এ ধরনের প্রথম ঘটনা। খবর বার্তা এপির।
এর আগে অন্য ব্যক্তির শরীরে জীবিত ব্যক্তির প্রতিস্থাপিত জরায়ু থেকে ১১ বার সন্তান জন্ম হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। যদি ব্রাজিলের ওই চিকিৎসকদের দাবি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে মৃত একজন ব্যক্তির জরায়ু, জীবিত কোনও ব্যক্তির শরীরে প্রতিস্থাপন করার পর মা হওয়ার ঘটনা এটিই প্রথম।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর ফলে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের জরায়ু আরও অনেক জীবিত ব্যক্তির শরীরে প্রতিস্থাপন সম্ভব হবে। এর আগে মৃত ব্যক্তি জরায়ু জীবিত কোনও ব্যক্তির শরীরে প্রতিস্থাপনের ১০টি চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন চেক প্রজাতন্ত্র, তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসকরা।
জরায়ু প্রতিস্থাপিত করা ওই নারী গত ডিসেম্বরে একটি মেয়ে সন্তানের জন্ম দেন। একটি বিরল রোগের কারণে জরায়ু ছাড়াই ওই নারীর জন্ম হয়েছিল। ইউনিভার্সিটি অব সাও পাওলো স্কুল অব মেডিসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই জরায়ু প্রতিস্থাপন টিমের প্রধান চিকিৎসক ডা. দানি এজেনবার্গ বলেন, পেশায় মনোবিজ্ঞানী ৩২ বছর বয়সী ওই নারী জরায়ু প্রতিস্থাপনের বিষয়ে প্রথমে ভয় পাচ্ছিলেন।
তিনি বলেন, এটা তার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। এখন সে আমাদেরকে তার শিশুকে দেখাতে নিয়ে এসেছে এবং সে খুব খুশি।
জরায়ু প্রতিস্থানের সাত মাস পর ভিট্রো ফার্টিলাইজেশনের মাধ্যমে ওই নারী গর্ভবতী হন। এই জরায়ুর দাতা ছিলেন তিন সন্তানের জননী ৪৫ বছর বয়সী এক নারী, যিনি স্ট্রোক করে মারা যান।
অজ্ঞাত গ্রহীতা সিজারের মাধ্যমে সন্তানের জন্ম দেন। চিকিৎসকরা এসময় তার গর্ভের কিছুটা অংশ সরিয়ে ফেলে, যাতে ওই নারীকে আর অ্যান্টি-রিজেকশন মেডিসিন নিতে না হয়। ওই ঘটনার প্রায় এক বছর পর মা ও সন্তান দুজনেই সুস্থ আছে।
গবেষণার অংশ হিসেবে আরও দুজনের জরায়ু প্রতিস্থান করা হবে জানা গেছে। তবে প্রথম ঘটনার বিস্তারিত মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেটে মঙ্গলবার প্রকাশ পায়।
জরায়ু প্রতিস্থানের পথিকৃত বলা হয় সুইডেনের চিকিৎসক ম্যাটস ব্রানস্ট্রমকে। পরিবারের সদস্য বা বন্ধু-বান্ধবের শরীর থেকে নিয়ে গ্রহীতার শরীরে জরায়ু প্রতিস্থাপনের অন্তত আটজন নারী মা হয়েছেন। জীবন্ত দাতার শরীর থেকে প্রতিস্থাপিত জরায়ুর মাধ্যমে দুজন শিশুর একজন টেক্সাসের বেইলর ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টার এবং আরেকজন সার্বিয়ায় জন্ম নেয়।
এর আগে ২০১৬ সালে ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক একজন মৃত নারীর জরায়ু অন্য নারীর শরীরে প্রতিস্থাপন করেন, কিন্তু একটি সংক্রমণের কারণে সেটি ব্যর্থ হয়।
ওই ক্লিনিকের চিকিৎসক ডা. টোমাসো ফ্যালকন বলেন, ব্রাজিলের গ্রুপ প্রমাণ করেছে যে মৃত ব্যক্তিকে দাতা হিসেবে ব্যবহার একটি সম্ভাব্য অপশন। এর ফলে আমাদের ভাবনার চেয়েও বেশি পরিমাণ অঙ্গ সরবরাহ সম্ভব হবে।
ক্লিভল্যান্ডের ওই দলটি এখনও মৃত দাতার জরায়ু প্রতিস্থাপনের কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে। ফ্যালকন বলেন, বরফের মধ্যে প্রায় আট ঘণ্টা ওই জরায়ু সংরক্ষণ করে রাখার পর প্রতিস্থাপন সফল হয়েছে, যা প্রমাণ করে যে ওই জরায়ুটি কতটা স্থিতিস্থাপক ছিল।
অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এর ফরে গর্ভবর্তী হতে বিলম্ব হওয়ার রহস্য হয়তো উদঘাটন করা সম্ভব হবে।
ল্যানসেটে একই বিষয় নিয়ে এক যৌথ লেখায় ডা. সিজার ডিয়াজ বলেছেন, গর্ভধারণের অনেক বিষয় আছে যেগুলো আমরা এখনও জানি না, যেমন ভ্রূণ কীভাবে প্রতিস্থাপন করা যায়। এই প্রতিস্থাপন আমাদের জরায়ু প্রতিস্থাপন এবং গর্ভধারণের প্রতিটি ধাপ বুঝতে সাহায্য করবে।
খবর বিভাগঃ
আন্তর্জাতিক
0 facebook: