স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ ফেনীর সোনাগাজীতে মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যার ঘটনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় ফেনীর সোনাগাজী থানার প্রাক্তন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন জামিন আবেদন নামঞ্জুর হয়েছে।
সোমবার (১ জুলাই) বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চে উত্থাপিত হয়নি মর্মে তা খারিজ করে দেন।
জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আহসান উল্লাহ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
শুনানির সময় মোয়াজ্জেমের পক্ষের আইনজীবী আহসান উল্লাহ তার জামিন প্রার্থনা করে বলেন, ‘তিনি বয়স্ক লোক, হার্টে সমস্যা আছে, তাছাড়া কানেও কম শোনেন।’
ভিডিও করার সময় ওসি মোয়াজ্জেম নুসরাততে ওই ধরনের প্রশ্ন কেনো করছিল, কোর্টের এই প্রশ্নে তার আইনজীবী জানান, ওসি মোয়াজ্জেমের কানে সমস্যা আছে, তিনি কানে কম শোনেন বলে বারবার প্রশ্ন করছিলেন। তবে ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার বিষয়ে জানান, ওসি মোয়াজ্জেম ভিডিওটি ভাইরাল করেনি। সজল নামে স্থানীয় এক সাংবাদিক ভিডিওটি ভাইরাল করেছে।
এ বিষয়ে কোর্ট তার বক্তব্যে বলেন, কিছু কিছু এসপি, ওসি আছে যারা নিজেকে জমিদার মনে করে, মনে হয় তারাই অল ইন অল।
ওসি মোয়াজ্জেমের উদ্দেশ্যে বলেন, ওনি যদি নিজে এত প্রশ্ন করে তাহলে আদালত আছে কি জন্য। আর তিনি কানে কম শুনলে ওসি থাকেন কী করে?
মোয়াজ্জেমের আইনজীবী বলেন, ‘দেশে সাংবাদিকদের সংখ্যা বেশি হয়ে গেছে। ওই সাংবাদিক ওসির মোবাইল থেকে ভিডিওটি নিয়ে ছড়িয়েছে এবং তা স্বীকার করেছে। যে ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তার সাজার মাত্রা কম, অপরাধটি জামিনযোগ্য এবং তিনি অসুস্থ হওয়ার কারণে তার চিকিৎসা দরকার বলেই জামিন আবেদন করেছি। এছাড়াও তিনি একজন সরকারি কর্মকর্তা, তার পেনশনের একটা বিষয় রয়েছে। জামিন দিলে তো তিনি পালিয়ে যাবেন না।’
এসময় আদালত বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগটি গুরুতর। সে অপরাধে সাজা বেশি না কম তা বড় কথা নয়।’
এরপর মোয়াজ্জেমের আইনজীবী মামলার বাদী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের ব্যক্তিগত বিষয়ে মন্তব্য করলে আদালত বলেন, ‘সাংবাদিকরা যদি শুরু থেকেই এ ঘটনার পেছনে লেগে থাকতো, তাহলে এ ঘটনা (নুসরাতের মৃত্যু) ঘটতো না। সাংবাদিকরা সমাজের দর্পনের। ব্যারিস্টার সুমনও সমাজের দর্পন।’ তখন মোয়াজ্জেমের আইনজীবী বলেন, ‘সরকারি চাকরি যারা করেন তারাই জানেন তাদের কী কষ্ট!’
এরপর শুনানি করতে গিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আদালতকে বলেন, ‘সরকারি অফিসার হয়ে তিনি (মোয়াজ্জেম) ভিডিও করলেন, তা ভাইরাল হলো। তাকে জামিন দিলে জনমনে কী মেসেজ যাবে? তিনি অসুস্থ থাকলে জেল অথরিটি রয়েছে, তারাই তাকে চিকিৎসা করাবেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রিজনারস সেলে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশ অফিসারদের এমন দায়িত্বহীন কাজ আগে দেখিনি। মেয়েটিকে যেসব প্রশ্ন করেছে তা শোনা যায় না (অশ্লীল ভাষা)!’ তখন আদালত বলেন, ‘কিছু কিছু অফিসার নিজেদের জমিদার মনে করে, সবাই কিন্তু না। কিছু কিছু অফিসার এমন আছে। অনেক দেশেই এমন আছে, তবে আমাদের দেশে বেশি।’
আদালত তখন বলেন, ‘মেয়েটি থানায় অভিযোগ করতে এলো। এজাহারের জন্য তাকে (নুসরাত) লিখিত বক্তব্য দিতে বললেই হতো। সেখানে এসব প্রশ্নের কোনও দরকার হয়? ওসির প্রশ্নগুলোর কোনও প্রসঙ্গ দেখি না।’
মাহবুবে আলম বলেন, ‘এখানে কোন প্রেক্ষাপট কাজ করছে? এসব প্রশ্ন করে মজা করবে আবার ভাইরাল করবে? একেবারেই দায়িত্বহীনতার কাজ করেছে।’ আদালত বলেন, ‘ঘটনা শুনে তার সহানুভূতি দেখানো উচিত ছিল। তখন যদি মেয়েটিকে নিরাপত্তা দেওয়া হতো তাহলে এ ঘটনা এতদূর এগোতো না।’
এরপর আদালত মোয়াজ্জেমের জামিন আবেদন উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দেন। এর ফলে মোয়াজ্জেমের কারামুক্তি মিলছে না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
0 facebook: