কৃষকরা বলছেন,
গরুর দুধের দাম যেখানে লিটার প্রতি ২০ থেকে ২২ টাকা,
সেখানে এক লিটার গোমূত্র কেউ বিক্রি করছেন ১৫ থেকে ৩০ টাকায়। কেউবা আবার দাম নিচ্ছেন ৫০ টাকাও।
তবে গরুর দুধ
দোয়ানোর থেকে গোমূত্র সংগ্রহ করা অনেক বেশী কষ্টসাধ্য কাজ। সারা রাত জেগে বসে থাকতে হয় গোমূত্র সংগ্রহ করার
জন্য। তবে যে বাড়তি রোজগার হচ্ছে
গোমূত্র বিক্রি করে, তার জন্য ওইটুকু কষ্ট সহ্য
করতেও রাজী রাজস্থানের গরুচাষীরা।
তবে দেশি
প্রজাতির গরু, যেমন গির বা থারপার্কার গরুর
মূত্রের চাহিদা বেশ বেশী। অন্য দিকে জার্সি গরুর মূত্র তুলনায় কম বিক্রি হয়।
কৃষি বিজ্ঞানীরা
বলছেন, গোমূত্র থেকে তৈরি জৈব সার যেমন চাষের জন্য
প্রয়োজনীয়, তেমনই গোমূত্রের মধ্যে যেসব উপকারী রাসায়নিক রয়েছে,
যা ঔষধি হিসাবেও ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়াও হিন্দুদের পূজা অর্চনার জন্যও গোমূত্র
ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
রাজস্থানের
মহারানা প্রতাপ কৃষি ও বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয় গোমূত্র নিয়ে বড় আকারে গবেষণা
চালাচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়টির
উপাচার্য ইউ এস শর্মা বলেছেন, ‘গোমূত্র থেকে অনেক গোপালক
বাড়তি রোজগার করতে শুরু করেছেন। গোমূত্র সংগ্রহ করার জন্য বেশ কিছু স্বনির্ভর গোষ্ঠীও তৈরি হয়েছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা
আর জৈব চাষের ক্ষেতে দেওয়ার জন্যেও বেশ কয়েকশো লিটার গোমূত্র প্রয়োজন হয়
প্রতিমাসে। তবে এখনও গোটা ব্যবস্থাটাই
অসংগঠিত অবস্থায় চলছে।
কেন গোমূত্রের
চাহিদা বাড়ছে?
আঞ্চলিক গবেষণা-পরিচালক
শান্তি কুমার শর্মা বলেছেন, গোমূত্রের মধ্যে ৯৫% পানি
থাকলেও বাকি অংশের মধ্যে আড়াই শতাংশ ইউরিয়া আর অন্য আড়াই শতাংশের মধ্যে হরমোন,
এনজাইম, অ্যাস্ট্রোজেন, ল্যাক্টোজসহ প্রায় ১৪-১৫ রকমের রাসায়নিক থাকে। গোমূত্রের মধ্যে গোবর আর গুড়
মিশিয়ে গাঁজানো হয়, তারপরে সেটি কৃষিকাজে ব্যবহার
করা যায়।
কৃষিবিজ্ঞানীদের
একাংশ বলছেন, দেশে জৈব চাষের হার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গোমূত্রের
চাহিদাও বাড়ছে। বিশেষত রাজস্থানে বাড়ছে জৈব-চাষের এলাকা। আর জৈব-ফসলের জন্য যে সার্টিফিকেট দেওয়া হয়,
সেখানে খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয় কী ধরনের সার ব্যবহার
করা হয়েছে ওই ফসল ফলাতে। রাসায়নিক সার ব্যবহৃত হলে সেই ফসলকে 'জৈব' বলে আখ্যা দেওয়া হয় না। তাই সরাসরি গোমূত্র অথবা তার থেকে তৈরি সার জৈব চাষের
জন্য অপরিহার্য।
কৃষি গবেষক
শান্তি কুমার শর্মা বলেন, জৈব ফসলের চাহিদা শহরাঞ্চলের
স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের মধ্যে বাড়ছে। তাই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গোমূত্রের চাহিদাও। অনেক ব্যবসায়ী গোমূত্রকে নানা
ভাবে বাজারজাত করছেন। গরুচাষীদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হলে গোমূত্রের যোগানও বাড়বে। তারাও গরু পালন করে বেশী
রোজগার করতে পারবেন।
জৈব চাষ ছাড়াও
হিন্দুদের পূজা অর্চনার জন্যও গোমূত্র মেশানো একটি উপাচারের প্রয়োজন হয় যার নাম
পঞ্চগব্য।
বিজ্ঞানীদের
একাংশের দাবী গোমূত্রের ঔষধিগুণও রয়েছে। নানা রোগ নিরাময়ে গোমূত্র থেকে আরোহিত উপাদান কাজ করে বলে
দাবী তাদের। যদিও এ নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে। নয়া দিগন্ত।
খবর বিভাগঃ
আন্তর্জাতিক
0 facebook: