27 April 2019

রোজার চার পণ্যের দাম আরেক দফা বাড়ল

ফাইল ছবি
স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ সপ্তাহের ব্যবধানে নতুন করে রমজাননির্ভর চার পণ্যের (পেঁয়াজ, চিনি, ছোলা ও মসুর ডাল) দাম বেড়েছে। অন্যান্য সবজির দাম না বাড়লেও রোজায় অতি প্রয়োজনীয় সবজি শসা ও বেগুনের দাম বাড়তে শুরু করেছে। গত সপ্তাহে যে বেগুনের কেজি মান ভেদে ৪০-৫০ টাকা ছিল, শুক্রবার তা ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ৬০-৭০ টাকায়। তাছাড়া এ দিন ব্রয়লার মুরগি, গরুর মাংস ও সব ধরনের মাছ বিক্রি হয়েছে চড়া দামে। রাজধানীর কারওয়ান বাজার, নয়াবাজার ও রামপুরা কাঁচাবাজারসহ একাধিক বাজার ঘুরে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

রাজধানীর নয়াবাজারের তুহিন স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. তুহিন বলেন, এক সপ্তাহের ব্যবধানে নতুন করে ছোলা, চিনি, মসুর ডাল ও পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। শুক্রবার খুচরা চিনি মান ভেদে বিক্রি করছি ৫৫-৬০ টাকা কেজি। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৫২-৫৫ টাকা। এদিন ছোলা বিক্রি হয় মানভেদে ৮০-৮৫ টাকা কেজি। যা আগে ৭০-৭৫ টাকায় বিক্রি করেছি। এছাড়া মসুরের ডাল বিক্রি করছি ৯৫-১০০ টাকা কেজি। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয় ৮৫-৯০ টাকায়। দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ২৮-৩৫ টাকা কেজি। যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয় ২৫-৩০ টাকায়। আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২৫-২৮ টাকা কেজি। যা ৭ দিন আগে বিক্রি হয়েছে ২২-২৬ টাকায়। তিনি আরও বলেন, পাইকারি বাজারে এসব পণ্যের দাম নতুন করে বাড়ানো হয়েছে। পাইকারদের কাছে দাম বাড়ার কথা জানতে চাইলে তারা বলেন, মোকাম থেকে তাদের বেশি দাম দিয়ে আনতে হচ্ছে। আর আমাদের মতো খুচরা বিক্রেতারা বেশি দামে কেনার পর তো বেশি দামেই বিক্রি করবে।

অন্যদিকে রাজধানীর পাইকারি মার্কেট কারওয়ান বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুক্রবার পাইকারি পর্যায়ে চিনি বিক্রি হয়েছে ৫২ টাকা কেজি। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয় ৪৯ টাকায়। ছোলা বিক্রি হয়েছে ৭২ টাকা কেজি। যা ৭ দিন আগে বিক্রি হয় ৬৬ টাকা থেকে ৬৮ টাকা কেজি। মসুরের ডাল বিক্রি হয়েছে ৮৮-৯০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৮২ টাকা। আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২১ টাকা কেজি। যা গত সপ্তাহে ছিল ১৭ টাকা। একই বাজারের পাইকারি বিক্রেতা মো. আলাউদ্দিন বলেন, মোকাম এসব পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই বেশি দামে পণ্যগুলো কিনতে হচ্ছে। আর এ হিসাবেই বিক্রি করতে হচ্ছে বেশি দামে। খাতুনগঞ্জের শাহ আমানত ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী মো. মহিউদ্দিন জানান, বাজারে রোজার পণ্যের কোনো সংকট নেই। মাঝে-মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ে। তখন ব্যবসায়ীরা সেই দরের সঙ্গে সমন্ব^য় করেন। এতে জিনিসপত্রের দাম সাময়িকভাবে বেড়ে যায়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন ২৪ এপ্রিল নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের তালিকা প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা আছে ২৪ এপ্রিল চিনির আন্তর্জাতিক দাম ৩০ টাকা কেজি। যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৩৬ টাকা। একইভাবে এ দিন ছোলার দাম দেয়া আছে ৫৯ টাকা কেজি। যা গত এক সপ্তাহ আগে ছিল ৬০ টাকা। ২৪ এপ্রিল মসুরের ডালের কেজি ৪৫ টাকা। আমদানি করা পেঁয়াজ ১৩-১৪ টাকা কেজি। এ তালিকায় দেখা যায় রমজান নির্ভর এ চার পণ্যের গত এক সপ্তাহ আগের তুলনায় ২৪ এপ্রিল দাম কমেছে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা বলছেন আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়েছে, তাই এ চার পণ্যের দাম আমাদের বাজারেও বেড়েছে। কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, একজন ব্যবসায়ী আজকে যে পণ্য বাজারে তুলেছেন, সেটা অনেকদিন আগের এলসির। সেই হিসাবে বর্তমানে পণ্যের দাম আজকের আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয়ের কোনো সুযোগ নেই। এটা অসাধুতা। কিন্তু দেখা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে গত এক সপ্তাহের তুলনায় পণ্যের দাম কমেছে। তবুও তারা কারসাজির আশ্রয় নিয়ে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করছে। তাই বাজারে কঠোর মনিটরিং দরকার। আর মনিটরিংয়ের মাধ্যমে অসাধুদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

এদিকে বিভিন্ন কাঁচাবাজারে দেখা গেছে, দাম বেড়েছে রোজার অতি প্রয়োজনীয় সবজি শসা ও বেগুনের। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে শসা বিক্রি হয়েছে ৫০-৬০ টাকা কেজি। আর গত সপ্তাহে ৪০-৫০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া বেগুন শুক্রবার বিক্রি হয়েছে ৬০-৭০ টাকা কেজি। এছাড়া বাজার ও মানভেদে কাঁচা পেঁপে বিক্রি হয় ৫০ থেকে ৭০ টাকা কেজি। গত সপ্তাহে যা ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে গরুর মাংস বাজার ভেদে বিক্রি হয়েছে ৫৪০-৫৬০ টাকা কেজি। ব্রয়লার মুরগির কেজি আগের সপ্তাহের মতোই ১৬০-১৭৫ টাকা কেজি। তবে কারওয়ান বাজারে ১৫৫-১৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে এ মুরগি। তাছাড়া লাল লেয়ার মুরগি বিক্রি হয়েছে ২১০-২২০ টাকা কেজি। সোনালি কক বিক্রি হয়েছে ২৭০-২৮০ টাকা কেজি। পাঙ্গাশ ও তেলাপিয়া ছাড়া সব মাছই বেশি দামে বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি তেলাপিয়া ১৪০-১৬০ টাকা, পাঙ্গাশ ১৬০-১৮০ টাকা, রুই আকারভেদে ৩৫০-৬০০ টাকা, পাবদা ৬০০-৭০০ টাকা, টেংরা ৭০০-৭৫০ টাকা, শিং ৪০০-৫৫০ টাকা কেজি, বোয়াল ৫০০-৮০০ টাকা ও চিতল ৫০০-৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, রমজান উপলক্ষে আমাদের বাজার তদারকি টিম কাজ করছে। বিশেষ করে রমজাননির্ভর পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে আজ থেকে স্পেশাল মনিটরিং শুরু হবে। খুচরা, পাইকারি ও মোকামে অভিযান চালানো হবে। অনৈতিকভাবে দাম বাড়ালে অসাধুদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। কোনোভাবে অসাধুদের ছাড় দেয়া হবে না।


শেয়ার করুন

0 facebook: