স্বদেশবার্তা
ডেস্কঃ হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ্ আহমদ শফীর এক ওয়াজ নিয়ে সম্প্রতি
দেশব্যাপী নিন্দার ঝড়ের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ শনিবার গণভবনে এক অনুষ্ঠানের
বক্তব্যে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, “শফীর
একটা কথা/দুই একদিন ধরে টেলিভিশনে দেখছি। শফী যা বলেছেন, তা
অত্যন্ত জঘন্য বলে আমি মনে করি। উনি মেয়েদের সম্পর্কে অত্যন্ত নোংরা ও জঘন্য কথা
বলেছেন।”
হাটহাজারীতে ওই ওয়াজের
ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক ও নিউজ সাইটগুলোতে ছড়িয়ে পড়ার পর
বিভিন্ন মহল থেকে এর তীব্র সমালোচনা ওঠেছে।
হাসিনা বলেন, ওয়াজে আহমদ
শফী নারীদের চতুর্থ শ্রেণির বেশি পড়াতে নিষেধ করেন, সমালোচনা করেন সহশিক্ষার। নারীদের চাকরি
না করে বাড়িতে রাখার পরামর্শ দেন তিনি। নারীদের নিয়ে আরো যেসব কথা তিনি বলেছেন, তাও
কুরূচিপূর্ণ বলে সমালোচনা উঠেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, “উনার
কি মা নেই? উনি
কি মায়ের পেট থেকে জন্মাননি?
উনার কি বোন-স্ত্রী নেই? আমাদের মা-বোন-স্ত্রীদের সম্মান তো আমাদের
রক্ষা করতে হবে।”
এমনকি সেই ওয়াজে নারীদের পোশাক-আশাক নিয়ন্ত্রণ এবং জন্ম নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধেও কথা
বলেন হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক শফী।
তিনি বলেন, মেয়েদের
কাজ ঘরের ভেতর। তাদের কাজ স্বামীর ঘরের আসবাবপত্র দেখাশোনা করা ও ছেলে সন্তান লালন-পালন
করা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ইসলাম
ধর্ম শান্তির ধর্ম। ইসলাম ধর্ম প্রথম যিনি গ্রহণ করেছিলেন- তিনি একজন মহিলাই ছিলেন।
ইসলাম ধর্ম প্রথম গ্রহণ করেন হযরত খাদিজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম। তখন তা আর কেউ
সাহস করেনি। এটা ওনার (শফী) মনে রাখা উচিত ছিল।
“ইসলাম ধর্মে যে যিহাদ হয়। সেই যিহাদে
প্রথম যে শহীদ হন- তিনি হযরত সুমাইয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা।”
“তাদের সম্পর্কে এই নোংরা আর জঘন্য কথা
বলা, আবার
এই নারী নেতৃত্বকে মেনে নিয়েই,”
গণজাগরণবিরোধী হেফাজতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কের দিকে ইঙ্গিত
করেন শেখ হাসিনা।
“চৌঠা মে বিরোধীদলীয় নেতা একটা সমাবেশ
করলেন। আমাকে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিলেন; বললেন যে, আমি পালানোরও পথ পাব না।”
“আর, ৫ মে হেফাজতে ইসলাম ঢাকা অবরোধ করল। তারা
এক জায়গায় বসতে চাইল; আমরা
কিন্তু, আপত্তি
করিনি। তারা শাপলা চত্বরে বসল। এরপর, বায়তুল মোকাররম মসজিদের ভেতরে আগুন দেয়া
হল। জায়নামাজ পোড়ানো হল।”
“এরপর, প্রতিবাদ কিন্তু উনি (খালেদা জিয়া) করেননি।
কেউই করেননি।”
বায়তুল মোকাররমে হামলার
সঙ্গে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে
উল্লেখ করেন।
“পাঁচ তারিখ বায়তুল মোকাররমের সামনে শত
শত কোরআন শরিফ পোড়ানো হয়েছে। আমি জানি না, ইসলামের ইতিহাসে এত কোরআন শরিফ এভাবে
কোথাও পোড়ানো হয়েছে কি না।”
“কারা পুড়িয়েছে? হেফাজতের
আর জামাত-শিবিরের ক্যাডাররা। সব টেলিভিশনে লাইভ দেখানো হচ্ছিল। তাদের হাত-পা ধরে
হকাররা কাঁদছিল। বলছিল,
আমাদের রুটি-রুজির পেটে লাথি দিয়েন না।”
“যারা হেফাজতের আর ইসলামের নাম নিয়ে
কোরআন শরিফ পোড়ালো-তারা ইসলামের কী হেফাজত করবে?”
“তারা ধর্মের এত বড় অবমাননা করে- কীভাবে
ধর্মকে রক্ষা করবে?”
মতিঝিলে হেফাজতের
সমাবেশকে কেন্দ্র করে অরাজকতার কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
“এই সব ঘটনা ঘটিয়ে মহিলাদের সম্পর্কে এখন
নোংরা কথা বলছেন। উনি কী মায়ের পেট থেকে জন্মাননি? মায়ের সম্মানটুকু রাখবেন না? ওনার
কি স্ত্রী নেই? তাদের
সম্মান রাখবেন না?”
“ওনার জিবে পানি আসে। উনি যে নেত্রীর
পাশে বসতেন-তাকে যদি তেঁতুল মনে করে ওনার জিবে পানি আসে-তাহলে আমার কিছু বলার নাই।”
হেফাজত আমিরের এই ধরনের
বক্তব্যের বিরুদ্ধে দেশের নারীরা সোচ্চার হবে বলে আশা করছেন প্রধানমন্ত্রী।
“আর নেতৃত্বে কে থাকবে, না
থাকবে তা জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে। যদি জনগণ সিদ্ধান্ত নেয়- সেখানে তাদের কী বলার আছে?
আওয়ামী লীগের অবস্থান
ব্যাখ্যা করে শেখ হাসিনা বলেন,
“আমরা শালীনভাবে চলাফেরা করার পক্ষে। পোশাক পরিধেয় কিন্তু দেশ
কাল পাত্র হিসাবে। জলবায়ুর ওপর নির্ভর করে পোশাক-পরিচ্ছদ।
“সব দেশের পোশাক তো এক না। আমি যদি শীতের
দেশের পোশাক এখন পরি, আর
গরমের পোশাক শীতের দেশে পরি- তাহলে তো হবে না। যেখানে বালুর ঝড়, সেখানে
মুখ ঢাকার ব্যবস্থা রাখতেই হয়।”
“আমি বহুবার হজ্জ করেছি। মাথার ওপর একটা
ওড়না দিয়ে রাখতেই হয়। শালীনতার সঙ্গে সকলে চলবে-এটা আমরা চাই।”
জামায়াতে ইসলাম অপপ্রচার
চালাতে তাদের নারীকর্মীদের ব্যবহার করে বলেও শেখ হাসিনা অভিযোগ করেন।
যুদ্ধাপরাধের বিচারের
দাবিতে গড়ে ওঠা গণজাগরণের মঞ্চের বিরুদ্ধে নাস্তিকতার অভিযোগ তুলে পাঁচ মাস আগে
রাজপথে নামে চট্টগ্রামভিত্তিক হেফাজতে ইসলাম।
এর আগে জাতীয় নারী
উন্নয়ন নীতিমালা বাতিলের দাবিতে তারা মাঠে নামলেও সম্পত্তিতে নারী ও পুরুষের সমান
অধিকার না দেয়ার বিষয়ে আশ্বস্ত করার পর তাদের আর মাঠে দেখা যায়নি।
গত ৬ মার্চ মতিঝিলে
সমাবেশ করে ১৩ দফা দাবি উপস্থাপন করে হেফাজতে ইসলাম। ১৩ দফার চার নম্বর দাবিতে বলা
হয় ‘ব্যক্তি
ও বাকস্বাধীনতার নামে সব বেহায়াপনা,
অনাচার,
ব্যভিচার,
প্রকাশ্যে নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ, মোমবাতি
প্রজ্বালনসহ সব বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে।’
এছাড়া প্রাথমিক স্তর
থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করারও দাবিও
তোলে সংগঠনটি।
খবর বিভাগঃ
জাতীয়
0 facebook: