06 August 2019

মূলত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরের পরিচিতি কেড়ে নেওয়ার অপচেষ্টাই করছে বিজেপি


আন্তর্জাতিক ডেস্ক।। সংবিধানের ৩৭০ ধারা তুলে দিয়ে কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন ও বিশেষ মর্যাদা বাতিলের মাধ্যমে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যের পরিচয় হারাবে কাশ্মীর। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু এক প্রতিবেদনে কাশ্মীরি জনগণের এমন মনোভাবের কথাই তুলে ধরেছে।

দ্য হিন্দু জানায়, সোমবার ভারতীয় পার্লামেন্টের রাজ্যসভায় ৩৭০ ধারা বাতিলের পর কাশ্মীরের জনগণ উপত্যকার পরিস্থিতি নিয়ে ব্যাপক উদ্বিগ্ন অবস্থায় রয়েছেন।

অধিকাংশ কাশ্মীরিই মনে করছেন যে, রাজ্যের স্বায়ত্তশাসন ও ৩৭০ ধারার মাধ্যমে অর্জিত বিশেষ মর্যাদা বাতিলের বিষয়টি তাদের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পরিচয়ের পরিবর্তন ঘটাতে পারে।

জম্মু ভ্রমণরত কাশ্মীরের শ্রীনগরের বাসিন্দা ফারুক আহমদ শাহ বলেন, এই সিদ্ধান্তে আমরা হতবাক হয়ে পড়েছি। আমরা হতাশ কারণ এই বিশেষ সুবিধা আমাদের অনুভূতির সঙ্গে জড়িত। এটা বাদ দেয়ার অর্থ হলো রাজ্যটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ চরিত্র হারাবে।

তার অভিযোগ, কেন্দ্রের সঙ্গে সমঝোতা করে রাজ্যের ক্ষমতাসীন নেতারা গত ৭০ বছরে এই অনুচ্ছেদটিকে কেবল একটি কঙ্কাল হিসেবেই উপস্থাপন করেছেন। তবুও এই সাংবিধানিক অধিকার বাতিলের বিষয়টি জনগণকে ক্ষুব্ধ করে তুলবে বলেই মনে করেন ৫০ বছর বয়সী এই ব্যক্তি।

২০ বছরের আরশিদ ওয়ারসি জম্মু ঘুরতে এসেছেন। তার কণ্ঠেও একই অভিযোগ। বলেন, তারা কতদিন আমাদের গৃহবন্দি করে রাখবে? কথিত ৩৭০ ধারা বাতিল মানে এই নয় যে আমরা নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে পারব না।

উপত্যকার এমন অনিশ্চিত পরিস্থিতি নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করে ব্যবসায়ী জলিল আহমদ বাট বলেন, কারফিউয়ের মতো অবস্থার অবসানের পর পরিস্থিতি কোনও দিকে যাবে তা আমরা জানি না। মনে হচ্ছে আমরা সবচেয়ে খারাপ সময়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।

ভারত কর্তৃক ফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার বিষয়ে হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, উপত্যকার লোকেরা এখন বাইরের বিশ্ব থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

ভারত সরকারের এমন বাড়াবাড়ির সমালোচনা করে ব্যবসায়ী জলিল বলেন, আমার দুই সন্তান রাজ্যের বাইরে পড়াশোনা করে, এখন তাদের সঙ্গে আমার কোনও যোগাযোগ নেই। আমি জানি তারা এখানকার পরিস্থিতি নিয়ে বেশ চিন্তিত। তারা কোথায় কী করছে তাও আমি জানি না।

কেন্দ্রের এমন সিদ্ধান্তকে ভারতীয় গণতন্ত্রের কালদিনবলে উল্লেখ করেছেন জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি। রোববার রাত থেকেই মুফতিসহ রাজ্যটির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ, কংগ্রেস নেতা উসমান মজিদ, সিপিএম বিধায়ক এমওয়াই তারিগামিসহ বেশ কয়েক নেতাকে গৃহবন্দি করা হয়েছে।

এর মধ্যে সোমবার মেহবুবা মুফতি ও ওমর আবদুল্লাহকে আটক করে হেফাজতে নেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

প্রসঙ্গত, ভারতের সংবিধানের ৩৫-ক ধারা ও ৩৭০ অনুচ্ছেদ কাশ্মীরকে যে মর্যাদা দিয়েছে তা বাতিল করেছে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার।

সোমবার সকালে ভারতীয় পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ ৩৭০ ধারা বাতিলের প্রস্তাব করেন। সংসদের অনুমোদনের পরই রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ এই প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেন।

রাষ্ট্রপতির সইয়ের সঙ্গে সঙ্গেই কাশ্মীরকে বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা দেয়া ৩৭০ ধারা বিলুপ্ত হল। সেই সঙ্গে একটি স্বায়ত্বশাসিত রাজ্যের মর্যাদাও হারাল কাশ্মীর।

ভারতীয় সংবিধানের ৩৫-ক ধারা অনুযায়ী কাশ্মীরের বাসিন্দা নয় এমন ভারতীয়দের সম্পদের মালিক হওয়া এবং চাকরি পাওয়ায় বাধা ছিল।

৩৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জম্মু ও কাশ্মীরের এমন এক স্বায়ত্তশাসন রয়েছে যা ১৯৪৭ সালের পর দক্ষিণ এশিয়ার আর কোনো দেশের রাজ্য পায়নি।

অনুচ্ছেদ ৩৭০ ভারতীয় রাজ্য জম্মু ও কাশ্মীরকে নিজেদের সংবিধান এবং একটি আলাদা পতাকার স্বাধীনতা দিয়েছে। এ ছাড়া পররাষ্ট্র সম্পর্কিত বিষয়াদি, প্রতিরক্ষা এবং যোগাযোগ বাদে অন্য সব ক্ষেত্রে স্বাধীনতার নিশ্চয়তাও দিয়েছে।

সংসদে ক্ষমতাসীন জোট সোমবার ধারা দুটি বাতিলের যে বিল উত্থাপন করে তা পাস হওয়ায় কাশ্মীরে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের দশা এখন ফিলিস্তিন কিংবা মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের মতো হতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন।


শেয়ার করুন

0 facebook: