20 August 2019

জুম্মাবারে জন্মাষ্টমী পালনের এতো বড় মিছিলের এলাকা যদি হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা লাগায়, দায় কার


চিফ রিপোর্টার।। আগামী শুক্রবার বাংলাদেশে উগ্র হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অনুষ্ঠান জন্মাষ্টমী। জন্মষ্টমী উপলক্ষে হিন্দুরা একটা মিছিল বের করবে। যার শুরু ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে এতিমখানা রোড, পলাশী মোড় থেকে বুয়েট, শহীদ মিনার থেকে ঢাকা মেডিকেল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, দোয়েল চত্বর থেকে হাইকোর্ট হয়ে বঙ্গবাজার ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন সহ গুলিস্তান গোলাপশাহ বাজার থেকে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ হয়ে নর্থসাউথ রোড ও নয়াবাজার মোড় থেকে রায়সাহেব বাজার মোড় এবং ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট থেকে ডিসি অফিস হয়ে জজ কোর্ট এবং জনসন রোড থেকে সদরঘাট বাহাদুর শাহপার্ক গিয়ে শেষ।

কি আজিব সমস্যা, জন্মাষ্টমীর মিছিলের এলাকা দেখে যেকোন বিবেকবানের মাথা ঘুরে যাবার কথা। এখানে কিছু কথা বলার প্রয়োজন আছে বলে মনে করছি-

(১) ঐ দিন থাকবে মুসলমানদের সাপ্তাহিক ধর্মীয় দিবস শুক্রবার তথা পবিত্র জুম্মাবারের নামাজের দিন। মুসলমানরা ঐ দিন জুম্মার নামাজকে কেন্দ্র করে মসজিদে মসজিদে জড়ো হবেন। এ দিন দুপুর বেলায় এত বিশাল এলাকা জুড়ে হিন্দুদের মিছিল করতে দেয়া কি ঠিক হবে? বিশেষ করে করে এই মিছিলের সাথে বেশি জড়িত উগ্রবাদী সন্ত্রাসী কৃষ্ণভক্ত ইসকন। এবং এই ইসকন কিছুদিন আগে মাত্র বাংলাদেশের স্কুলগুলোতে মুসলিম বাচ্চাদের হরে কৃষ্ণশ্লোগান পাঠ করিয়ে প্রসাদ খাইয়েছে। এ কারণে মুসলমানরা হিন্দুদের উপর বিশেষ করে ইসকনদের উপর বেশি ক্ষ্যাপা। এ অবস্থায় এত বিশাল এলাকাজুড়ে হিন্দুদের মিছিল করতে দেয়া রিক্স হয়ে যায় কি না? তাই নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে, বেশি দূর না গিয়ে ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে রমনা মন্দিরের মধ্যে মিছিল সীমাবদ্ধ রাখলে সবচেয়ে বেশি মঙ্গলজনক হয়। কারণ এমনও হতে পারে, উগ্রবাদী হিন্দুরা নিজেরাই নিজেদের উপর হামলা করে মুসলমানদের দোষ দিয়ে দেবে। এবং সেই অজুহাতে দাঙ্গা লাগবে, ট্র্যাম্প-মোদি করবে সরকার কে বেকায়দায় ফেলতে।

(২) জন্মাষ্টমী বা কৃষ্ণের জন্মদিন উপলক্ষে মিছিলটি শুরু হবে ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে। উল্লেখ্য ঢাকেশ্বরী মন্দির হচ্ছে শিব ও দূর্গার মন্দির। আর শিবের সাথে কৃষ্ণের সম্পর্ক মারাত্মক খারাপ। অনেকেই বলে কৃষ্ণ ছিলো শিবের থেকে ছোট ও তার অনুসারী। আবার কেউ কেউ বলে শিব ও কৃষ্ণের মধ্যে নাকি যুদ্ধ হয়েছিলো। সেই যুদ্ধ নাকি হরি-হর যুদ্ধনামে পরিচিত। তাই শিবের মন্দির থেকে কিভাবে কৃষ্ণের জন্মদিন অনুষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয়, সেটা আমার মাথায় আসে না।

(৩) মিছিলটি শেষ হবে সদরঘাটের বাহাদুর শাহ পার্কে গিয়ে। বাহাদুর শাহ পার্কটির নামকরণ করা হয় শেষ মোগল সম্রাট বাহাদুর শাহ্‌ জাফরের নাম অনুসারে। উল্লেখ্য ব্রিটিশদের কাছে বাহাদুর শাহ জাফরের পরাজয়ের সাথে হিন্দুদের একটি ঘনিষ্ট সম্পর্ক আছে। আসুন সে ইতিহাস আগে জেনে নেইঃ-
বাহাদুর শাহ জাফর হিন্দুদের খুব বিশ্বাস করতো, হিন্দুদের খুব তোয়াজ করতো। এমনি ক্ষেত্র বিশেষে সে মুসলিম নির্যাতন করে হিন্দুদেরকে সমর্থন দিতো। যেমন- উইলিয়াম ড্যালরিম্পেল তার দি লাস্ট মোগলবইতে উল্লেখ করেছে, সিপাহী বিদ্রোহের সময়ে দিল্লীতে ৫ জন মুসলিম কসাইকে গরু জবাই করার কারণে হত্যা করেছিলো হিন্দু সেপাইরা। এ খবর বাহাদুরশাহ জাফরের নিকট গেলে হিন্দুদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া তো দূরের কথা, উল্টো সে মুসলমানদের গরু জবাই নিষিদ্ধ করতে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে।এমনকি মুসলমান কাবাব ব্যবসায়ীদের পর্যন্ত ব্যবসা থেকে উচ্ছেদ করা হয়। সে বছর কুরবানীর ঈদে গরুকুরবানী ছিলো একদমই বন্ধ।। সেই সময় সম্রাটকে অনেকেই বলতো- হিন্দুরা হচ্ছে ব্রিটিশ দালাল, কিন্তু সম্রাট কিছুতেই তা মানতে চাইতো না, হিন্দুদের প্রতি তার ছিলো অগাধ বিশ্বাস। উল্লেখ্য সিপাহী বিদ্রোহের সময় অর্থ ও উন্নতমানের অস্ত্রশস্ত্রের অভাব দেখা দেয়। সে সময় হিন্দু ব্যবসায়ীদের কাছে অর্থ ছিলো। সম্রাট ভারতবর্ষ থেকে বিদেশী শত্রু তাড়াতে হিন্দু ব্যবসায়ীদের ঋণদিতে আহ্ববান করেছিলেন। কিন্তু হিন্দু ব্যবসায়ীরা সেই সম্রাটকে কোন প্রকাশ ঋণ দিতে অস্বীকার করে। সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফর হিন্দু ব্যবসায়ী রামজীমলকে বলেছিলেন- আমি তোমার কাছে অর্থ ঋণ হিসাবে চাচ্ছি, কর হিসাবে নয়। কিন্তু রামজীমল ঋণ দিতেও অস্বীকার করলো। অথচ আগ্রার হিন্দু ঠিকাদার জ্যোতিপ্রসাদ ইংরেজদের ত্রিশ হাজার টাকা যুদ্ধকালীন তহবিলে সাহায্য করে। এ দিকে হঠাৎ বাজার থেকে রসদ ও বারুদ উধাও হয়ে গেল। যামিনী দাসের মতো অর্থলোভীরা আটার মজুদ গড়ে তুললো। বারুদ লুকিয়ে সঙ্কট সৃষ্টি করলো দেবীলাল। ঐ বারুদ দিয়ে সে ইংরেজদের সহযোগিতা করলো। ফলে যুদ্ধের গতিপথ পরিবর্তন হয়ে গেল। এ যুদ্ধে ইংরেজ সৈন্যরা মীর্জা মোগল, মীর্জা খিজির সুলতান, মির্জা আবু বকর, আমির-ওমরাহ সেনাপতি ও বহু মুসলিম সৈন্যদের হত্যা করে। অর্থাৎ হিন্দু বিশ্বাসঘাতকদের কারণে পরাজয় ঘটে বাহাদুর শাহ জাফরের। বিশ্বাসঘাতক হিন্দুদের সহযোগীতায় ইংরেজরা বাহাদুর শাহ জাফরকে গ্রেফতার ও বন্দি করে। ইংরেজরা সম্রাটের ২ পুত্রসহ পরিবারের মোট ২৯ জন শিশু বালক-বালিকাকে দিল্লির প্রকাশ্য রাজপথে নির্মমভাবে হত্যা করে। সম্রাটকে পাঠানো হয় রেঙ্গুনে নির্বাসনে। জীবনের শেষ অবস্থায় প্যারালাইসিস হয়ে খুব করুণ পরিণতি বরণ করতে হয়েছিলো সম্রাটকে। অর্থাৎ মাত্রাতিরিক্ত হিন্দুতোষণ, হিন্দুদের প্রতি অগাধ বিশ্বাস ও মোহ শেষ পর্যন্ত কাল হয়েছিলো সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের।

যেহেতু হিন্দুদের বিশ্বাস ঘাতকতার কারণে বাহাদুর শাহ জাফরকে স্বপরিবারে করুণ পরিণতি বরণ করতে হয়েছিলো, তাই তার নামে নামকরণ করা পার্কে হিন্দুদের মিছিল করতে দেয়া মুসলমান সরকার প্রধানের কিছুতেই উচিত হবে না। আমার মনে হয়, ইতিহাস বিবেচনা করে সেই পার্কে হিন্দুদের মিছিলের আনুষ্ঠানিকতায় বাধা দেয়া উচিত।

সবশেষে বলবোঃ- ঈদের ছুটির পর অনেকেই বাড়ি থেকে এখনও ঢাকা ফিরে আসেনি। অনেকে ফেরত আসবে শুক্রবার দিন। এবং সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল হয়ে একটি বড় অংশ ঢাকায় ঢুকবে ঐ শুক্রবার দিনেই। কিন্তু হিন্দুদের জন্মাষ্টমির মিছিলকে কেন্দ্র করে যদি ঐ গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি ৪-৫ ঘণ্টা বন্ধ করে রাখা হয়, তবে কি যে দুঃসহ পরিস্থিতি তৈরী হবে, তা যারা সেই পরিস্থিতি একবার দেখেছেন কেবল তারাই বলতে পারবেন। তাই ঈদ ফেরত মানুষের ভোগান্তি হ্রাস করতেই জন্মাষ্টমীর মিছিলের যাত্রাপথ সংক্ষিপ্ত করা হোক, এটাই সবার কাম্য।


শেয়ার করুন

0 facebook: