04 August 2019

শূকর খাওয়া তো হারাম বুঝলাম, কিন্তু কেন হারাম আমরা কি তা জানি?


গোলাম দস্তগির লিসানী।। একটা মাত্র কোম্পানি আমাদের মাত্র ৩০ কোটি কেজি শূকরের পচা গলা দেহাবশেষ খাইয়েছে। তাতে রেগেমেগে আমরা ফেটে পড়ছি। ধর্মে হারামবিষয়টা শুধু ধর্মের নয়বিষয়টা মানুষের প্রতি মানুষের নূনতম দায়িত্ববোধেরও।

পড়েছিলাম বায়োটেকনোলজি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। সে বিদ্যায় চোখ রাখার একটু বাস্তব সুযোগ হলচলুন দেখা যাক শূকরনামাঃ

শূকর খাওয়া হারামকেন বলেন তোমহান আল্লাহ পাক যা খেতে নিষেদ করেছেন তাই হারামতাতো ঠিক আছেই। কিন্তু মহান আল্লাহ পাক তো কারণ ছাড়া কিছু বলেন না। সেই কারণগুলোর কিছু কিছু আমরা জানতেও পারিকিছু আমাদের অজানা থেকে যায়, জ্ঞান স্বল্পতার কারনে। জানা কারণগুলো কী?

১. এগুলো বাই ডিফল্ট মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকরঃ শূকরের গায়ে অনেক বেশি কার্সিনোজেন থাকেমানে ক্যান্সারের বীজ। এদিকে ডায়াবেটিস মোটামুটি সকল রোগের পিতা। আর টেনশন সকল রোগের মাতা। শূকরের চর্বি এমনকি গোশত ও ডায়াবেটিস এবং টেনশন উভয় ক্রিয়েট করে।

২. এগুলো যা খায়তা সাধারণত বিষাক্ত হয়ে থাকেঃ শূকর মূলত মানব বর্জ্য (মল/পায়খানা)পশুপাখির বর্জ্য এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল বর্জ্যর অবশেষ খায়। প্রাণীদেহের একটা সাধারণ প্রক্রিয়া হলসে বিষাক্ত অংশটুকুর প্রায় সবই টয়লেটের সাথে বের করে দেয়। মানুষ ও পশুপাখি যা বিষ খায়তার বেশিরভাগই টয়লেটের সাথে বেরিয়ে যায়। সেটাই শুকর খায়।

শুকরের গায়ে এই বিষটা ধারণ করার দারুণ একটা প্রক্রিয়া আছে। যে কোন প্রাণীদেহে বিষ ধারণ করে আলাদা করে রাখার ক্ষেত্র হল চর্বি। শুকর যেহেতু নোংরা আবর্জনা সব সময় ঘাঁটে এবং নোংরা আবর্জনাতেই সব সময় থাকেতাই শুকরের গায়ে বিষও বেশি থাকেসেই বিষকে ধারণ করার জন্য তার বাই ডিফল্ট জেনেটিক পদ্ধতি তো থাকতে হবে বাঁচার জন্য। সেটা হল তার বাড়তি চর্বি। এখন শুকর তো চর্বিতে বিষ আটকে রেখে বেঁচে গেলসেই বিষাক্ত তেল যখন আমরা খাইআমাদের বাঁচার পথ তখন প্রাকৃতিকভাবে কমেই যায়। মানব বর্জ্যতে যে বিষ থাকেতারচে বেশি থাকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল বর্জ্যতে। শুকরের চর্বিতে সেসবও জমাট বেঁধে থাকে।

গুরুত্বপূর্ণ কথা হলএইসব বিষ কিন্তু জীবাণু নয়। জীবাণুর কথায় পরে আসছি। এইসব বিষ হল জৈব ও অজৈব যৌগ এবং ভারী ধাতু। এগুলো লক্ষ পানি ফোটানোতেও নষ্ট হয় না। কোন কোন ক্ষেত্রে খোলতাই হয়অর্থাৎ যত সেদ্ধ করবেনতত ক্ষুদ্র কণা ও ক্ষুদ্রতর অণুতে বিভাজিত হবে এবং সহজে ক্যান্সার সহ অপরাপর ভাইব্রাদার বাঁধাবে।

৩. এগুলো যে পরিবেশে থাকেতা রোগজীবাণুর জন্য সোনায় সোহাগাঃ আমরা জানি সব জায়গাতেই জীবাণু আছে। বাতাসে থাকেপানিতে থাকেপরিচ্ছন্ন জায়গাতেও থাকে। কিন্তু আমরা এটাও জানিসব জায়গায় সব জীবাণু থাকে নাএবং বেশি ধরনের ক্ষতিকর জীবাণু থাকতে হলে উপযুক্ত পরিবেশ লাগে। শুকর নোংরা কাদাপানিই পছন্দ করে। এটা কিন্তু নদীর কাদাপানি নয়বিলের কাদাপানি নয়বরং ছোট্ট আবদ্ধ জমাট কাদাপানি। নদীর পাশের কাদাপানিতে যতটুকু জীবাণুর বংশবিস্তারের সুযোগ থাকবেতারচে বেশি থাকবে মার্শল্যান্ড বা বিলের পানির মধ্যে। আর বিলের পানিতে যতটুকু জীবাণুর বংশবিস্তারের সুযোগ থাকবেতারচে বেশি থাকবে বদ্ধ ডোবায়। সেখানে প্রাণীজ মলের ঘনত্ব বেশি থাকবেসেখানে জীবাণুর খাদ্য বেশি থাকবে এবং যেখানে গলিত পশুর ঘনত্ব বেশি থাকে বা প্রাণীজ মল বেশি থাকে সেখানে জীবাণুর বৈচিত্র্যও বেশি থাকবে। জগতে সবচে বেশি প্রজাতির জীবাণুর সবচে বেশি বাড়ার উপযুক্ত পরিবেশ ছোট্ট নোংরা কাদাপানিতেই থাকেআর সেখানেই শূকর ঘুরে বেড়ায়।

সব জীবাণু কিন্তু একই মাত্রায় পানি ফুটালে মরে যায় না। কিছু কিছু জীবাণু চর্বিবদ্ধ হয়ে গেলে বহু মাস এমনকি বহু বছরও বেঁচে থাকে। ভাইরাসের একটা গুণ তো এমন যেলক্ষ কোটি বছরও তারা ‘ফ্রোজেন’ থাকার মত করে হাইবারনেশনে থাকতে পারে এবং উপযুক্ত পরিবেশ পাবার সাথে সাথে প্রতি সাড়ে তিন ঘন্টায় দ্বিগুণ হতে শুরু করে।

মহান আল্লাহ পাক ভাল জানেনকেন কীভাবে তিনি হারাম করেছেন শূকর। কিন্তু আমরা সেই কারণগুলোর মধ্যে তিনটা খুব গুরুত্বপূর্ণ কারণ পেলাম।

বলতে পারেনএখনকার আধুনিক ফার্মের শূকর পরিচ্ছন্ন কাদাপানিতে দাপায় কতটা পরিচ্ছন্নআর সবচে পরিচ্ছন্ন হলেও তো শূকরের জেনেটিক কোডই এমন যেতার চর্বি বেশি হবেচর্বির গঠনটা হবে অন্য প্রাণী থেকেও বেশি টক্সিন বাইন্ডিং এবং তার গোশত চর্বি ও হাড়ে সেডিমেন্টেশন বেশি জমবে (যেহেতু কাদাপানি মানেই সেডিমেন্ট পড়াআর সেডিমেন্ট মানেই ভারি ধাতু ও জটিল জৈব ও অজৈব যৌগ তথা মোক্ষম কার্সিনোজেন টক্সিন)।

কারণ জানা থাকলে আমাদের ঈমানটা আরো একটু তাজা হয়তাই নাকারণ জানা না থাকলে হারামকে হালকা একটু হারাম বলে মনে হয়কিন্তু কারণটা জানা থাকলে ‘ওরে বাপরে! হারাম!’ মনে হয়।


শেয়ার করুন

0 facebook: