22 September 2019

মিসরের স্বৈরশাসক সিসির পদত্যাগের দাবিতে দ্বিতীয় দিনেও বিক্ষোভ অব্যাহত


আন্তর্জাতিক ডেস্ক।। মিসরের স্বৈরশাসক আব্দেল ফাত্তাহ আল-সিসির পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। দ্বিতীয় দিন শনিবার বন্দরনগরী সুয়েজ এবং রাজধানী কায়রোর পার্শ্ববর্তী গিজা ও মাহাল্লাসহ বেশ কিছু শহরে বিক্ষোভ হয়েছে। এর আগে শুক্রবার রাজধানীর সেই ঐতিহাসিক তাহরির স্কয়ারে কয়েক বছর প্রথমবারের মতো বিক্ষোভ হয়।

এ সময় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। বিক্ষোভকারীদের হটাতে নিরাপত্তা বাহিনী টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট ও লাইভ বুলেট ব্যবহার করেছে। এতে বেশ কিছু লোক আহত হয়েছে।

আলজাজিরা বলছে, শুক্রবারের বিক্ষোভের সময় অন্তত ৭৪ জনকে আটক করা হয়। এর পর শনিবারের বিক্ষোভে তাদের মুক্তি দাবি করা হয়। সেইসঙ্গে সিসির পদত্যাগ দাবি করেন তারা। সিসি তুমি চলে যাও’, ‘ভয় নেই জেগে উঠোএ রকম নানা স্লোগান দেন আন্দোলনকারীরা।

সুয়েজ শহরে এক বিক্ষোভকারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, শহরের পার্শ্ববর্তী এলাকায় দুই শতাধিক লোক দ্বিতীয় রাতে অবস্থান করেছেন। যেখানে ছিল নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতি ও সামরিক যান।

তিনি বলেন, ‘তারা (নিরাপত্তা বাহিনী) টিয়ার গ্যাস, রাবার ও লাইভ বুলেট ব্যবহার করেছে। এতে বেশ কিছু লোক আহত হয়েছে।

এদিকে, কায়রোর তাহরির স্কয়ারে নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে বলে খবর দিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো। এই তাহরির স্কয়ারে ২০১১ সালে যে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয় তার জেরেই পতন ঘটে দেশটির ৩০ বছরের স্বৈরশাসক হোসনি মুবারকের।

পরবর্তীতে দেশটির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত গণতান্ত্রিক নির্বাচনে বিজয়ী হন মুসলিম ব্রাদারহুড নেতা মহম্মদ মুরসি। কিন্তু ২০১৩ সালে তৎকালীন সেনাপ্রধান সিসি অভ্যুত্থান করে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুৎ করে। এর পর মুরসিসহ মুসলিম ব্রাদারহুডের অসংখ্য নেতাকর্মীকে বন্দি ও হত্যা করা হয়। সম্প্রতি আদালতে বিচার চলাকালে হার্টঅ্যাটাক করে মারা যান মুরসি। এর কয়েকদিন পর তার এক ছেলেও মারা যান।

এদিকে, ক্ষমতা দখলের পর ২০১৪ সালে নামমাত্র নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হ সিসি। যেখানে ছিল না কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী। তার পর এই প্রথম বিরোধিতার মুখে পড়ল সে

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, স্বেচ্ছায় নির্বাসিত মিসরীয় ব্যবসায়ী ও অভিনেতা মহম্মদ আলীর এক আহ্বানের পর শুক্রবার রাস্তায় নেমে আসতে শুরু করে মিসরের সাধারণ মানুষ। জেনারেল সিসির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে মানুষকে রাজপথে নামার আহ্বান জানিয়েছিলেন মহম্মদ আলী।

তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ যেখানে দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত সেখানে সিসি ও তার কর্মকর্তারা জনগণের বিপুল অংকের অর্থ অপচয় করছে। তবে নিজের বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির অভিযোগকে মিথ্যাচারহিসেবে আখ্যায়িত করেছে জেনারেল সিসি।

মঙ্গলবার সামাজিক যোগোগমাধ্যমে দেয়া এক পোস্টে মহম্মদ আলী বলেন, সিসি যদি বৃহস্পতিবারের মধ্যে পদত্যাগের ঘোষণা না দেয়, তবে শুক্রবার মিসরের জনগণ রাজপথে নেমে আসবে। এর আগে গত ২ সেপ্টেম্বর থেকেই জেনারেল সিসির দুর্নীতির বিরুদ্ধে ভিডিও পোস্ট করতে শুরু করেন মহম্মদ আলী। অনলাইনে এসব ভিডিও লাখ লাখ বার দেখা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে আন্দোলনকারীদের কার্যত নেতা হয়ে উঠেছেন স্বেচ্ছা নির্বাসিত এ ব্যবসায়ী।

নিজেদের দাবি আদায়ে বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন আন্দোলনকারীরা। তারা সবাইকে বিভেদ ভুলে সিসির দুর্নীতির বিরুদ্ধে এক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।


শেয়ার করুন

0 facebook: