স্টাফ রিপোর্ট।। রাজশাহীতে ধর্মীয় পরিচয় গোপন রেখে কলেজ ছাত্রীকে বিয়ে করেছে বিএসটিআই’র পরিদর্শক মিঠুন কবিরাজ নামের এক লম্পট উগ্র হিন্দুত্ববাদি। এরআগে নাটোর টিএমএসএস টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের ইনচার্জ ছিল সে। মিঠুন কবিরাজ রাজশাহীর পবা থানাধীন নওহাটা বড় মসজিদ সংলগ্ন এলাকার শ্রী রতন কবিরাজের ছেলে।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী রাজশাহী জেলার পুঠিয়া উপজেলার বাড়ইপাড়া গ্রামের সাজ্জাদ হোসেনের মেয়ে সাবনাম আক্তার সাথি অভিযোগ করে বলেন, ২০১৩ সালে এসএসসি পাশ করার পর নাটোর টিএমএসএস টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউটে কম্পিউটার বিভাগে ভর্তি হই।
আমাদের বিভাগে ক্লাশ নিত মিঠুন কবিরাজ। সেই থেকে নিজের ধর্মীয় (ইসকনী-হিন্দু) পরিচয় গোপন রেখে আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয় এবং বিয়ে করবে বলে প্রলোভন দেখায়। এক পর্যায়ে আমাদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে উঠে। যখন বুঝতে পারি, সে হিন্দু ধর্মালম্বী তখন তার সাথে সম্পর্ক না রাখার সিদ্ধান্ত নিই। পরে মিঠুন ২০১৪ সালের ৩ ডিসেম্বর নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে হিন্দুধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে।
তার তিনদিন পর ২০১৪ সালে ৬ ডিসেম্বর দুপুর ১২ টার দিকে রাজশাহী নগরীর হেতেম খাঁ এলাকায় মিঠুনের বন্ধুর বাসায় ইসলামী শরিয়তের বিধান মোতাবেক আমরা বিয়েরবন্ধনে আবদ্ধ হই। কিন্তু কথিত একজন মাওলানার মাধ্যমে করা ওই বিয়ে যে ভুয়া ছিল তখন তা বুঝতে পারিনি। পরে মিঠুনের বিএসটিআইয়ে পরিদর্শক পদে চাকুরি হয়।
এরপর পোস্টিং নিয়ে রংপুরে চলে যায় সে। আর আমাকে ঢাকার ধানমন্ডি এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় রেখে দেয়। সেখানে প্রতি সপ্তাহে যাওয়া আসা করত মিঠুন। ইতোমধ্যে আমাদের সংসারে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ১১ মাস বয়সে শিশুটি মারা যায়। তার তিন মাস পর থেকে মিঠুন কবিরাজ আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।
ভুক্তভোগী আরো জানান, পরবর্তীতে স্বামীর সন্ধানে আমি শশুর বাড়ি নওহাটা যাই। সেখানে মিঠুনের দুলাভাই রনজিৎ ও মিলন আমাকে বলে, মিঠুন একটি হিন্দু মেয়েকে বিয়ে করেছে।
তাই আমি যেনো তাকে ভুলে যাই এবং আমাকে অন্যত্র বিয়ে করে নেয়ার কথা বলে তারা। সেখান থেকে ফিরে আসার পর আমার উপর চলে মিঠুনের নজরদারি।
কিছুদিন পূর্বে তিনটি মোটরসাইকেল করে মুখে মাস্ক পরিহিত অবস্থায় ৬ জন যুবক আমার বাড়িতে গিয়ে গলায় ধারালো ছুরি ধরে হুমকি প্রদান করেন। যাতে করে আমি আর কখনো মিঠুনের বিরুদ্ধে থানায় বা সাংবাদিকদের কাছে কোনো অভিযোগ না দিই। আর তাদের অবাধ্য হলে আমার বাবাসহ আমাকে কেটে নদীতে ভাসিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়।
এখানেই শেষ নয়, পুঠিয়া উপজেলার চেয়ারম্যান বাচ্চুও তার চেম্বারে ডেকে গালিগালাজসহ বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার জন্য বলে। বর্তমানে আমি ও আমার পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আর আমি নিরাপত্তাহীনতার কারণে ঘর ছেড়ে আত্নগোপনে রয়েছি।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মিঠুন কবিরাজ বলে, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সঠিক নয়। ধর্মীয় পরিচয় গোপন রেখে ভুয়া বিয়ে করার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে সে ক্ষুব্ধ হয়ে বলে, যা পারেন লিখেন। আপনার কাছে কী প্রমাণ রয়েছে।
এ ব্যাপারে পুঠিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান জিএম হীরা বাচ্চু বলেন, আমি তো প্রশাসনের কেউ না। আমি কীভাবে পদক্ষেপ নেবো। এক পর্যায়ে তিনি জানতে চান-আপনার কাছে কী প্রমাণ রয়েছে। তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ সঠিক নয়।
এদিকে, মিঠুন কবিরাজের এই প্রতারণার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন পুঠিয়ার বাড়ইপাড়া ও পবার নওহাটা এলাকার লোকজন। একইসঙ্গে মিঠুনের প্রতারণার অভিযোগ অনেক পুরনো বলেও স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
পুঠিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। এ ব্যাপারে কেউ থানায় অভিযোগ করেনি। এখন যেহেতু বিষয়টি শুনলাম খোঁজ নিয়ে নিয়ে দেখছি। আমি ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠাচ্ছি।
খবর বিভাগঃ
জেলা সংবাদ
ধর্মীয় বিদ্বেষ
হিন্দু সমাচার
0 facebook: