প্রতিকি ছবি |
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ ভারতের হরিয়ানার গুঁরগাওতে বিনা নোটিশে একটি মসজিদ সীল করে দেওয়া হল। কয়েকদিন আগে একটি হিন্দু সংগঠন এই মসজিদে আজান দিতে বাধা দেয়। ৬৯ বছরের মুহম্মদ আখতার সাহেব আক্ষেপ করে বলছেন যে, ভারতে এখন আর মুসলমানদের কোন জায়গা নেই!
নিচের ভিডিওতে, পবিত্র মসজিদকে সীল করা নিয়ে মুহম্মদ আখতার সাহেব আক্ষেপ করে বলেনঃ "বলুন এটা কোথাকার নিয়ম যে কোন নোটিশ না দিয়ে একটা মসজিদকে সিল করে দেওয়া হল? কি কারণে সিল করা হল সেটাও আমাদের জানান। আমরা কাউকে মারি নি, কাউকে গালি দিই নি, কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করি নি; কোন মিছিল বের করি নি; কেবলমাত্র নামাজ পড়তাম। কেন সিল করা হল? আমরা ডীসিপি, কমিশনার, ম্যাজিস্ট্রেট - সবার কাছে ফরিয়াদ করেছি কিন্তু কেউ আমাদের কথা শোনে নি। আমাদের ঘরে বউ-মেয়েরা নামাজ পড়ে, তাহলে আমাদের ঘরগুলোও সিল করে দিন। আর বলে দিন যে দেশে মুসলমানদের কোন অধিকার নেই, না মরার পর কোন জায়গা আছে, না বেঁচে থাকতে কোন জায়গা আছে।"
ঘটনার বিস্তারিতঃ ভারতের হরিয়ানার গুরুগ্রামে (অতীত নাম গুরগাও) গত বুধবার শীতলা কলোনির বিজেপি দ্বারা পরিচালিত নগর নিগম মুসলমানদের ইবাদতের অন্যতম মাধ্যম মসজিদ সীল করে দেয় এবং সেই পবিত্র মসজিদে নামাজ পড়া বন্ধ করে দেয়। যার ফলে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভের বাতাবরণ সৃষ্টি হয়। সংবাদ দ্রুত হারে ছড়াতে থাকে, মুসলিমরা আদালতের শরণাপন্ন হন। এর মধ্যে হাজির হয় দলিত হিন্দুদের সংগঠন "ভীম সেনা"। ভীম সেনা মুসলিম সম্প্রদায়ের পাশে দাঁড়িয়ে সরকার এবং প্রশাসনের বিপক্ষে তীব্র কটাক্ষ করে এবং উগ্র আন্দোলনের সতর্ক বার্তা দেয়। ভীম সেনার সংস্থাপক এবং রাষ্ট্রীয় অধ্যক্ষ 'সতপাল তম্ভর' প্রেস রিপোর্ট জারি করে বলেছেন- এই মসজিদের জমি সরকারের নয়, এটা মুসলিমদের সম্পত্তি। এই জমিতে প্রশাসন সরকারের সঙ্গে মিলে অবৈধভাবে কব্জা করে অপরাধ করেছে। এর ফল বিজেপি সরকার এবং হরিয়ানা নগর নিগমের অফিসারদের ভুগতে হবে। তিনি আরোও বলেন, এই মসজিদ অবৈধভাবে সীল করাকে কেন্দ্র করে যদি অবস্থার অবনতি হয় তবে এর জন্য দায়ী হরিয়ানা সরকার এবং কেন্দ্র সরকার হবে। ভীম সেনার অধ্যক্ষ মুসলিম সম্প্রদায়ের পাশে দাঁড়িয়ে সরকারকে উগ্র আন্দোলনের জন্য সতর্ক বার্তা দিয়েছেন। তিনি প্রশাসনকে চরম হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন সময় থাকতে থাকতে মসজিদের সীল সরিয়ে নিন, নচেৎ পুরো শহর শীল করে দিব আর এর ফল আপনাদের ভুগতেই হবে, আর যদি অবস্থার অবনতি হয় তবে সরকার এর জন্য দায়ী থাকবে।
আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে সরকার মসজিদের জায়গাকে কারোর ব্যক্তিগত জায়গা বলে সীল করে দিয়েছে। তার সঙ্গে মসজিদে ব্যবহৃত লাউড স্পিকার ও মসজিদ সীল করার কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন প্রশাসন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কারোর ব্যক্তিগত জায়গা প্রশাসন অবৈধভাবে কি কব্জা করতে পারে? শহরে বহু এমন ব্যক্তিগত জায়গায় মন্দির তৈরী করে লাউডস্পিকারে মন্ত্র উচ্চারণ করা হয়। তবে মুসলিমদের সঙ্গে এমন দ্বিচারিতা কেন?
এর আগে দলিত হিন্দু সম্প্রদায়, উগ্রপন্থী উঁচু জাতের হিন্দুদের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ায় তারা এখন মুসলমানদের পাশে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছে। কারণ বিজেপি সরকার চরম ব্রাহ্মন্যবাদী।
এদিকে মুসলিম সম্প্রদায়ের পাশে ভীম আর্মি দাঁড়িয়ে যাওয়ায় প্রশাসনের হাত-পা ফোলা শুরু হয়ে গেছে। আদালতও মুসলিমদের পক্ষে কথা বলছেন। অপরদিকে ভীম সেনা প্রমুখ্য "সতপাল তম্ভরের" হুঁশিয়ারিতে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে ভূমিকম্প শুরু হয়ে গেছে, তাদের বুকের ভিতর এখন কাঁপুনি দিচ্ছে। কেননা এর পূর্বে ভীম সেনা গুরগ্রামে 'চক্কা জ্যাম' করে দিয়েছিল। এছাড়া ভীম সেনা বহুবার নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করে প্রশাসনকে তাদের ক্ষমতা দেখিয়ে দিয়েছে। বহু আন্দোলন করে ভীম সেনা বহু তাবড় তাবড় অফিসারদের ঘাম বের করে দিয়েছে। রাজধানী দিল্লিতে ও ভীম সেনা বহুবার আন্দোলন করে তাদের ক্ষমতা দেখিয়েছে। এখন বিষয় মুসলিমদের তাই ভীম সেনা আবার আক্রামানাত্মক মুডে চলে এসেছে। প্রশাসনের একটি ভুল শহরের আবহাওয়া খারাপ হয়ে যেতে পারে যার মাশুল দেওয়া পরবর্তীতে হবে অনেক কঠিন।
খবর বিভাগঃ
আন্তর্জাতিক
ধর্মীয় বিদ্বেষ
ভারত
0 facebook: