সম্প্রতি ভারতে ৩৭৭ ধারা বিলুপ্তির মাধ্যমে পায়ূকামিতার স্বীকৃতি দিয়েছে সেদেশের সুপ্রীম কোর্ট। যেহেতু দেশটি ভারত, সেহেতু এই পদক্ষেপের পেছনে অবশ্যই হিন্দুধর্মীয় কারণ রয়েছে। এর আগেও সেদেশের কোর্ট লিভ টুগেদারের স্বীকৃতি দিয়েছিল, কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল যে রাধাকৃষ্ণও লিভ টুগেদার করেছিল।
প্রথমত বলতে হয়, সমকামিতা হচ্ছে এলজিবিটি আন্দোলনের একটি অংশ, অর্থাৎ লেসবিয়ান (নারী-নারী), গে (পুরুষ-পুরুষ), বাইসেক্সুয়াল, ট্রান্স-সেক্সুয়াল (হিজড়া)। আর পুরুষ-পুরুষে বিকৃত যৌন সম্পর্ক হচ্ছে পায়ূকামের সাথে সম্পর্কিত, যা অনেকক্ষেত্রে হিজড়াদের সাথেও সমকামী পুরুষ করে থাকে। যে কারণে ভারতে হিজড়া পতিতাও পাওয়া যায়।
অর্থাৎ ‘গে’ আর ‘হিজড়া’ এরা পরস্পর সম্পর্কিত। ঠিক সেভাবেই লেসবিয়ানিজম সম্পর্ক রাখে পতিতাবৃত্তি ও পর্ণোগ্রাফির সাথে। তাছাড়া হিন্দু পুরাণে ‘ভগীরথ’ নামে একটি চরিত্র রয়েছে, যার জন্ম হয়েছিল দুই নারীর মিলনে তথা লেসবিয়ানিজমের মাধ্যমে।
আর এই হিজড়া এবং পতিতা, দুটি শ্রেণীই অঙ্গাঙ্গিভাবে হিন্দুধর্মের সাথে জড়িত। হিন্দুধর্মে পতিতাবৃত্তিকে উৎসাহদান নিয়ে বেশি কিছু বলার নেই, বিষয়টি আমরা সবাই কমবেশি জানি। কিন্তু অনেকেই হয়তো জানে না যে, হিজড়াদের নিজস্ব ধর্মীয় বিশ্বাস রয়েছে এবং তা হিন্দুধর্মের সাথে সম্পর্কিত। হিন্দু দেবতা শিবকে প্রায়ই অর্ধনারীশ্বর হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। যার দ্বৈত পুরুষ ও মহিলা প্রতিকৃতি আছে। এদেশের হিজড়ারা অনেকেই মুসলিম হলেও তারা অনেক হিন্দু রীতি নীতিতে বিশ্বাস করে। তাই তাদের যদিও কবর দেয়া হয়, কিন্তু তারা মনে করেন তাদের আবার পুনর্জন্ম হবে।
প্রত্যেক হিজড়াকে কবর দেয়া হয় তারা যে বিছানায় থাকে তার নিচে- এটাই তাদের রীতি। কিন্তু তাদের কবর দেয়ার নিয়মটি খুবই অদ্ভূত। তাদের কবরে প্রথমে ঢালা হয় লবণ তারপর লাশ। তারপর দেয়া হয় ফুল এবং তারপর আবার লবণ। এরপর একটা অদ্ভূত কান্ড তারা করে। তাহলো- কবর দেয়ার পূর্বে সবাই মিলে লাশটি জুতা পেটা করে। এটার মূল কারণ হলো তাদের বিশ্বাস এভাবে করা হলে সে আর কখনও হিজড়া হয়ে জন্ম নিবে না এবং তার আগের সকল পাপ ধুয়ে পরবর্তী জনমে সে পূর্ণ নারী বা পুরুষ হিসেবে জন্মগ্রহণ করতে পারবে। উইকিপিডিয়াতে রয়েছে, অনেক হিন্দু বিশ্বাস করে হিজড়াদের আশির্বাদ করার এবং অভিশাপ দেয়ার বিশেষ ক্ষমতা আছে।
কোনো ধর্মেই পতিতাবৃত্তিকে সমর্থন দেয়া হয় না হিন্দুধর্ম ব্যতীত, যে কারণে ভারতে পতিতার সংখ্যা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি। ঠিক সেভাবেই ধর্মীয় স্বীকৃতির কারণেই ভারতবর্ষে হিজড়া হতে আগ্রহীরও অভাব নেই। একটি বিষয় সবাই স্বীকার করবে, তা হলো জন্মগত হিজড়ার সংখ্যা খুবই কম, এদের দিয়ে হিজড়া কমিউনিটি গঠিত নয়। হিজড়াদের একটি বড় অংশই পুরুষ থেকে অপারেশনের মাধ্যমে হিজড়াকৃত। ভারতে নিজ পৌরুষত্ব বিসর্জন দিয়ে হিজড়া হতে আগ্রহী হওয়ার মূল কারণই হলো হিন্দুধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা এবং সমকামিদের নিকট চাহিদা।
মূলত অসামাজিক গোষ্ঠীগুলোকে উৎসাহপ্রদান হিন্দু সমাজ ও ধর্মের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। কারণ মুসলিম শাসনামলে সিভিল সোসাইটি গঠিত হতো মুসলমানদের নিয়ে, ইসলামী আদব-কায়দায় অভ্যস্ত খুব কমসংখ্যক হিন্দুই পারত মুসলমানদের সাথে উঠাবসা করতে। নীরদ সি চৌধুরী এ নিয়ে লিখেছে- “তখনকার দিনে উচ্চ শ্রেণীর বাঙালি হিন্দুর বাহ্যিক রূপ ও আচরণ প্রায় মুসলমান আমিরদের মতো হইতো। তাহাদের কেহ কেহ মুসলমান রায় নবাবের উচ্চপদস্থ কর্মচারী হইতো। পক্ষান্তরে নিম্ন শ্রেণীর হিন্দুরা নেঙটি পরিয়া থাকিতো, অন্য ভদ্র হিন্দুরা (কথিত) হেটো ধুতি পরিতো। কথাবার্তায় ভদ্র ভাষা শোনা যাইতো না, ফারসী বলা দূরে থাকুক।” (সূত্র: শতবর্ষ সংকলন, নীরদচন্দ্র চৌধুরী, মিত্র এন্ড ঘোষ পাবলিশার্স, পৃষ্ঠা ৬৪৪-৬৪৫)
এই যে অধিকাংশ হিন্দু যারা নিন্মশ্রেণীর, যারা ফারসী শিখত না, আদব-কায়দা জানত না, এরা আলাদা ঘেটো বা সমাজ গঠন করে থাকত, মুসলমানদের সাথে এরা মিশত না। হাজার বছরের মুসলিম শাসনামলে অসামাজিক গোষ্ঠী গঠন করে থাকার কারণে হিন্দুরা পতিতা, হিজড়া, সমকামী এদের সাথে একাত্মতা বোধ করে। এদেশে নাস্তিক, নারীবাদী এরাও মূলধারার মুসলিম সমাজ থেকে পৃথক অসামাজিক গোষ্ঠী, তাই এদের সাথেও রয়েছে হিন্দুদের বিশেষ সুসম্পর্ক। মূলত সমকামী, পতিতা, নাস্তিক, নারীবাদী এবং সর্বোপরি হিন্দু, এসব সমস্তপ্রকার অসামাজিক গোষ্ঠীগুলোকে একটি প্ল্যাটফর্মে একত্রিত করে বৃহৎ ইসলামবিরোধী কোয়ালিশন গঠন করার প্রচেষ্টা চলছে বর্তমানে। ট্রাম্পের মতো নিজ মেয়ের সাথে অজাচারে লিপ্ত প্রেসিডেন্ট এদের মূল নেতা।
এখন মুসলমানদের অনুধাবন করতে হবে যে, সব ধর্ম ভালোর দিকে ধাবিত করে এটি ভুল। দ্বীন ইসলাম ব্যতীত কোনো মূল্যবোধ নেই, হতে পারে না। তাই যেই জাতির মধ্যে ইসলাম নেই, সেই জাতি কখনোই ভালো হতে পারে না। তার মধ্যে পতিতাবৃত্তি, সমকামিতা, অজাচার দেখা যাবেই। মুসলমানকে পাঠানো হয়েছেই এসব শয়তানি কার্যক্রমকে নির্মূল করতে, আর কেবলমাত্র দুনিয়াতে দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই তা করা সম্ভব।
গোলাম মোরশেদঃ যুক্তরাজ্য প্রবাসী ইসলামিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।
0 facebook: