অধ্যাপক আব্দুল কাফি |
স্টাফ রিপোর্টার।। পশ্চিমবঙ্গের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক মুসলিম অধ্যাপককে চড় মারে ঐ বিশ্বিবিদ্যালয়ের সাবেক এক হিন্দু শিক্ষার্থী। পরে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করলেও ওই অধ্যাপক তার কোনো শাস্তি চান না।
ভারতীয় গণমাধ্যমে জানানো হয়েছে, শুক্রবার দুপুরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের চার নম্বর গেটের সামনে সাবেক ছাত্র রাজেশ সাঁতরার হামলার মুখে পড়েন বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল কাফি। গোটা ঘটনায় স্তম্ভিত শিক্ষকরা। অভিযুক্ত ছাত্রকে পুলিশি হেফাজতে নেয়া হয়।
মার খেয়েও প্রাক্তন ছাত্রের প্রতি নম্র মনোভাব প্রকাশ করেছেন ওই অধ্যাপক। ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দিয়ে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে জানিয়েছেন, রাজেশের কোনো ক্ষতি চান না তিনি। অভিযুক্তর বাবা ফোনে দুঃখ প্রকাশ করেন তার কাছে।
ঘটনাটির প্রসঙ্গে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আব্দুল কাফি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ঘটনার সূত্রপাত দিন কুড়ি আগে। রাজেশ আমাকে ফেসবুক মেসেঞ্জারে একটি মেসেজ পাঠায়। সে আমার বন্ধু তালিকায় না থাকার ফলে সেই মেসেজ আমি চট করে দেখতে পাইনি। দিন কয়েক পরে আমাকে বেশ কয়েকজন জানান যে রাজেশ নামের কেউ একজন বারবার তাদের জানাচ্ছে, আব্দুল কাফি যেন রাজেশের মেসেজটি দেখেন।
গত পাঁচ-ছয় মাস ধরে আমি আমার মায়ের চিকিৎসা নিয়ে ভয়ানক বিড়ম্বনায় আছি, দুরারোগ্য ব্যধির সঙ্গে লড়াই চালাতে হচ্ছে একটানা। ফলে ফেসবুকে খুব নিয়মিত থাকতে পারিনি। কিন্তু অনেকের কথা শুনে রাজেশের সেই মেসেজটি আমি দেখি এবং যারপরনাই বিব্রত ও বিড়ম্বিত হই।’
অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে, রাজেশ সাঁতরার বিরক্তিকর মেসেজের উত্তর আব্দুল কাফির পক্ষে দেওয়া সম্ভব হয়নি। সে কারণেই হামলা! অধ্যাপকের কথায়, ‘‘সেই সময় আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের সামনে চায়ের দোকানে চা খাচ্ছিলাম। আচমকা সে আমার সামনে এসে দাঁড়ায় এবং বলে ‘বলুন কী বলবেন’। আমি কিছু বলার আগেই হাত চালায়। চশমার কাচ ভেঙে পড়ে, সামান্য চোখের পাশে এবং ঠোঁটে আঘাত লাগে।’’
অধ্যাপক আব্দুল কাফি পড়ানোর দক্ষতার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ জনপ্রিয়। এই মুহূর্তে তার মায়ের ক্যান্সারের চিকিৎসা চলছে। এমন পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক ভাবেই ফোনে খবর নিচ্ছেন তার স্বজন-বন্ধুরা।
তাদের উদ্দেশ্যে কাফি জানিয়েছেন, তিনি ভালো আছেন। তার সামান্য চোট লাগলেও ওষুধ খেয়ে এখন সুস্থ। অন্যদিকে তাকে আক্রমণের খবর সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই তার ছাত্রছাত্রীরা রাজেশ সাঁতরার শাস্তি দাবি করেন।
কিন্তু, অধ্যাপক আব্দুল কাফি রাজেশের বড় কোনো সাজা হোক তা চান না। তার কথায়, ‘পুলিশ অফিসারকে আমি সহ-উপাচার্যের সামনেই অনুরোধ করি, তাকে যেন অত্যাচার না করা হয়, যেন বড় কোনো সাজার মুখে ঠেলে না দেওয়া হয়। ঘটনার বিবরণ আমি দিয়েছি, এর রহস্য কী তা অনুসন্ধান করতে অনুরোধ জানিয়েছি।
বলেছি, আমি কেবল জানতে চাই কেন সে এই আচরণ করছে, কেন তার আমার প্রতি ক্রোধ, কেন সে বারবার আক্রমণ করছে। নিশ্চয় সে কোনও একটি ধারণার দ্বারা গভীরভাবে বিচলিত হয়ে আছে। তার সেই ধারণা কী করে হল- সেইটুকুই আমার জানা দরকার। তার ভুল ভাঙানোটাই আমার মূল চাহিদা। অফিসার আমাকে বলেন, তিনি চেষ্টা করবেন।’
খবর বিভাগঃ
আন্তর্জাতিক
ভারত
হিন্দু সমাচার
0 facebook: