স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের কোনো সন্ধান পাচ্ছেন না তাদের স্বজনরা। তারা বেঁচে আছেন না মরে গেছেন, কিছুই জানেন না তারা। সরকারের পক্ষ থেকেও এ ব্যাপারে কোনো সহযোগিতা করা হচ্ছে না। এমতাবস্থায় তাদের লাশ হলেও ফেরত চান স্বজনরা।
শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে গুম হওয়াদের পরিবারের সদস্যদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’ আয়োজিত গণশুনানিতে অংশ নিয়ে স্বজনরা এসব কথা বলেন। এতে ৫০টি পরিবার অংশ নেয়।
পরিবারের সদস্যরা জানান, তারা আজও স্বজনের অপেক্ষায় দিন কাটাচ্ছেন। কিন্তু তাদের ফিরে পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না। অন্যদিকে এই গুমের পেছনে কারা দায়ী, সেটাও চিহ্নিত করছে না সরকার। এসব ঘটনার কোনো বিচার হবে কিনা, প্রশ্ন রাখেন তারা।
সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা এ পর্যন্ত ২৫ বার সংবাদ সম্মেলন করেছেন। এ সময় স্বজনরা প্রশ্ন রাখেন- আর কতদিন আমরা অপেক্ষা করব? কেউ যদি মৃত্যুবরণ করে থাকে অন্তত তার লাশটি আমরা ফেরত চাই।
গুম হওয়া ছাত্রদল নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন সানজিদা বলেন, ‘আমার ভাইকে র্যাব-১ এর গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হয়। কোনো সংস্থা দেশের কোনো নাগরিককে এভাবে গুম করতে পারে না। গুম করার পর তাদের কী রকম টর্চার সেলে রাখা হয় আমি জানি না। সে বেঁচে আছে নাকি তাও জানি না। আমার ভাইয়ের দোষ সে বিএনপি করত। পুলিশ আমাদের কোনো মামলা নেয়নি। কোর্টে রিট করেছি, কোনো অগ্রগতি নেই। যতক্ষণ তারা ফিরে না আসে আমরা রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যাব।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মো. শাহিনুর আলমকে ২০১৪ সালের ২৯ এপ্রিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ধরে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ তার পরিবারের। তারা প্রথমে নবীনগর থানায় খোঁজ নেন, কিন্তু সেখানে তাকে পাওয়া যায়নি। সাতদিন পর তারা শাহিনুরের লাশ পান। পরিবারের সদস্যদের প্রশ্ন- যার নামে কোনো মামলা নেই, কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই তাকে কেন হত্যা করা হল?
শাহিনুর আলমের ছোট ভাই মেহেদি হাসান বলেন, পরে আমরা বিচারের আশায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে মামলা করি। ম্যাজিস্ট্রেট নাজমুন নাহার মামলা আমলে নেন। কিন্তু সেই মামলা এখনও ঝুলে আছে। কোনো শুনানি হয়নি।
চট্টগ্রামে গুম হওয়া নুরুল আলম নুরুর স্ত্রী বলেন, তার চোখের সামনেই পুলিশ পরিচয়ে তার স্বামীকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাসায় এসে কলিংবেল চেপে পুলিশ পরিচয় দেয়ায় তিনি গেট খুলে দেন। খালি গায়েই তার স্বামীকে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যায় তারা। তিনি বলেন, আমাদের আশা ছিল নিয়ে গেছে যখন কোর্ট থেকে জামিনের আবেদন করব।
কিন্তু তার আগেই ভোর ৪টায় খবর আসে তার লাশ পাওয়া গেছে কর্ণফুলী নদীর পাড়ে। আমরা সকাল ৭টায় সেখানে পৌঁছি। তার মাথায় দুটি গুলি করা হয়েছে। তিন মাসের বাচ্চা রেখে গেছে সে। সেই বাচ্চা বড় হয়ে গেছে এখন।
বাবা বলে কিছু নাই তার। এদিকে ভাইয়ের আশায় এখনও পথ চেয়ে আছেন রেহানা আজাদ মুন্নি। তার ভাই পিন্টুকে সাদা পোশাকধারীরা নিয়ে যায়। পরে কোথাও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, একটা লোক হারিয়ে যাবে তার দায় কী সরকারের নেই? কার কাছে বিচার দেব? ছেলের আশায় থেকে আমার মা পাগল হয়ে গেছেন। যখনই বাসায় কোনো ফোন আসে আমার কাছে তখনই আঁতকে উঠি। আমি ভয়ে থাকি সব সময়। এভাবে কি বাঁচা যায়?
খবর বিভাগঃ
জাতীয়
0 facebook: