![]() |
ফাইল ছবি |
স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ বাংলাদেশের ভেতরে প্রদর্শিত ডাউনলিংক করা যে কোনো বিদেশি চ্যানেল বা টিভিতে বেআইনিভাবে বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধে সরকারের দৃঢ় অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
বুধবার সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স-এটকোর সঙ্গে মতবিনিময়কালে মন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বের সর্বত্র একই আইন। যুক্তরাজ্যে যখন বাংলাদেশের চ্যানেলগুলো প্রদর্শন করা হয় সেখানে বাংলাদেশের বিজ্ঞাপন দেখাতে পারে না। শুধু সেখানকার বিজ্ঞাপন দেখাতে পারে। বাংলাদেশের কোনো পণ্যের বিজ্ঞাপন দেখাতে হলে সেখানে ট্যাক্স দিয়ে অনুমতি নিয়ে যথাযথ আইন অনুসরণ করে নিয়মকানুন মেনে দেখাতে হয়। ভারতেও পাকিস্তানের কোনো বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করা যায় না। আমাদের দেশে আইন লঙ্ঘন করে এটি করা হচ্ছে। আমরা শুধু আইন বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিয়েছি।’
এ সংক্রান্ত আইন তুলে ধরে সম্প্রতি তথ্য মন্ত্রণালয় বাংলাদেশে বিদেশি চ্যানেলের পরিবেশক যাদুভিশন ও নেশনওয়াইড মিডিয়াকে নোটিশ দেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের ভেতরে বিদেশি চ্যানেলে এখন যে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন হচ্ছে, তা আইন লঙ্ঘন করে হচ্ছে। আইন কার্যকরে দুই পরিবেশক যাদুভিশন ও নেশনওয়াইড মিডিয়াকে নোটিশ দেয়া হয়েছিল।’
এ সময় মন্ত্রী পরিবেশকদের উদ্দেশ করে বলেন, বাংলাদেশে যদি কেউ সরকারের কাছ থেকে লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করতে চায়, বাংলাদেশের আইন মানতেই হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু আইন বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। যারা ডাউনলিংকের লাইসেন্স পেয়েছেন, তারা ইতোপূর্বে কখনও নোটিশ পাননি। এই প্রথম আমরা তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো টেলিভিশন চ্যানেল বন্ধ করিনি। বন্ধ করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। আমরা শুধু বিদেশি চ্যানেলে কোনো ধরনের বিজ্ঞাপন আইন অনুযায়ী না দেখানোর জন্য অনুরোধ জানিয়েছিলাম। এটি নিয়ে শুরুতে স্বার্থান্বেষী মহল বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করেছিল।’ ক্যাবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইনে বিদেশি কোনো চ্যানেলের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন সম্প্রচার বা সঞ্চালন করলে লাইসেন্স বাতিল এবং দুই বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘যাদুভিশন ও নেশনওয়াইড মিডিয়া ইতোমধ্যে নোটিশের জবাব দিয়েছে। সাত দিন সময় দেয়া হয়েছিল। এর মধ্যেই উত্তর দিয়েছে এবং তারা ১৫ দিন সময় চেয়েছে। আমরা তাদের সে সময় দিয়েছি।’
সময় দেয়ার কারণ জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আইন কার্যকরের জন্য যৌক্তিক কারণ দেখিয়ে যৌক্তিক সময় চাইলে সেটি দেয়া যেতে পারে। কিন্তু আইন লঙ্ঘন করে বা পাশ কাটিয়ে যাওয়ার জন্য কালক্ষেপণের সুযোগ নেই।’
মন্ত্রী বলেন, ‘এখানে সাংবাদিক ভাইদের স্বার্থ নিয়োজিত রয়েছে। এই আইন ভঙ্গ করার কারণে, আইনবহির্ভূত কাজ করার কারণে টেলিভিশন এবং টেলিভিশনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরাই শুধু নয়, সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপন খাতসহ বাংলাদেশের সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
‘ডিস্ট্রিবিউটরদের আমরা পনেরো দিন সময় দিয়েছি, তবে অনেক সময় দেয়া সম্ভব নয়’ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘ক্লিনফিড চালানো জন্য তাদের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে অথবা তারা যাদের চ্যানেল এখানে ডাউনলিংক করে সম্প্রচার করছে তাদের সঙ্গে আলোচনা করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এটা তাদেরই দায়িত্ব। তারা সেই শর্তে লাইসেন্স নিয়েছে।’
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আরেকটি বিষয় হচ্ছে ক্যাবল নেটওয়ার্ককে ডিজিটালাইজেশন করা। সমগ্র দেশ ডিজিটাল হয়ে গেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন স্বপ্ন নয় বাস্তবতা। ১৭ কোটি মানুষের দেশে ১৫ কোটি সিম, ১৪ কোটি মোবাইল ব্যবহারকারী। মধ্যপ্রাচ্য থেকে ছেলের পাঠানো টাকা গ্রামে দরিদ্র পিতার কাছে মুহূর্তের মধ্যে পৌঁছে যায়। বারাক ওবামা তার বাবার দেশ কেনিয়াতে গিয়ে বলেছেন, মোবাইল নেটওয়ার্কে ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করেছে। সেখান থেকে আফ্রিকার দেশগুলোর অনেক কিছু শেখার আছে। আমাদের গ্রামের কৃষক ক্ষেতে গিয়ে পোকার ছবি তুলে সেই ছবি উপজেলা হেডকোয়ার্টারে অথবা কৃষি অফিসারের কাছে পাঠায়। কৃষি অফিসার সেখান থেকে দেখে কোন ওষুধ দিতে হবে সেটি বলে দেয়। মোবাইলের মাধ্যমে এসএমএস করলে ফিরতি এসএমএসের মাধ্যমে পরীক্ষার রেজাল্ট পাওয়া যায়। মোবাইলের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির দরখাস্ত করা যায়। কিন্তু ক্যাবল নেটওয়ার্কটা ডিজিটাল হয়নি। সুতরাং এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবার মতামত নিয়ে একটি সময় নির্ধারণ করা প্রয়োজন।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, গণমাধ্যমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক, কলাকুশলী বিনিয়োগকারী- সবার স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য আমরা একযোগে কাজ করব।
এটকোর সভাপতি অঞ্জন চৌধুরী, সিনিয়র সহ-সভাপতি মোজাম্মেল বাবু, বাংলাভিশনের চেয়ারম্যান আবদুল হক, সময় টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আহমেদ জোবায়ের, বাংলা টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ সামাদুল হক, আরটিভির চেয়ারম্যান মোরশেদ আলম এমপি, দীপ্ত টিভির পরিচালক কাজী জাহিন হাসান, চ্যানেল ২৪’র চেয়ারম্যান এ কে আজাদ, ডিবিসি টিভির চেয়ারম্যান ইকবাল সোবহান চৌধুরী এবং তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আজহারুল হক সভায় অংশ নেন।
তথ্যমন্ত্রীর ঘোষণার বাস্তবায়ন চায় বিএফইউজে-ডিইউজে : বিদেশি চ্যানেলে দেশি বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিষ্ঠানের শুধু লাইসেন্স বাতিলের হুমকি নয়, অবিলম্বে তা কার্যকর করে দৃষ্টান্ত স্থাপনের আহ্বান জানিয়েছে বিএফইউজে-বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)। বুধবার এক যৌথ বিবৃতিতে বিএফইউজে সভাপতি মোল্লা জালাল, মহাসচিব শাবান মাহমুদ, ডিইউজে সভাপতি আবু জাফর সূর্য ও সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী বলেন, তথ্যমন্ত্রী বিদেশি চ্যানেলে দেশি বিজ্ঞাপন প্রকাশ ও প্রচারের বিরুদ্ধে যে অবস্থান নিয়েছেন তা সময়োপযোগী। তবে বিদেশি চ্যানেলে দেশি বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিলের বিষয়ে দৃঢ় সিদ্ধান্ত আশা করছে সাংবাদিক সমাজ। বিএফইউজের যুগ্মমহাসচিব আবদুল মজিদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিবৃতিতে নেতারা বলেন, বিভিন্ন কায়দায় প্রতি বছর ৬০০ কোটি টাকার বিজ্ঞাপন দেয়া হয় বিদেশি চ্যানেলে। এতে দেশের টিভি চ্যানেলগুলোই নয় সংবাদপত্রগুলোও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিজ্ঞাপনগুলো দেশের সংবাদ মাধ্যমগুলোকে দেয়া হলে প্রতিষ্ঠানগুলো বিকশিত ও শক্তিশালী হতো। উভয় সংগঠনের নেতারা দেশীয় প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের বিজ্ঞাপন বিদেশি চ্যানেলে প্রচারের সব পথ বন্ধ করার জন্য জরুরিভিত্তিতে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
খবর বিভাগঃ
জাতীয়
0 facebook: