![]() |
ফাইল ছবি |
স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ মেডিকেল কলেজের আদলেই বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা চান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপুমনি। বুধবার শিক্ষা বিটের সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি বলেন, আগামী মাসখানেকের মধ্যে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নতুন করে এমপিওভুক্তির কার্যক্রম শেষ করা সম্ভব হবে।
দুপুরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ওই সভায় বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক, অনলাইন এবং টেলিভিশনের সাংবাদিকরা যোগ দেন। শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের কাছ থেকে মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চান। এ সময় সাংবাদিকরাও গত ৩ মাসে নেয়া পদক্ষেপ সম্পর্কে মত দেন।
এছাড়া জনস্বার্থের কার্যক্রমসহ বিভিন্ন দিকে মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। সাংবাদিকদের অনেক বিষয়ের সঙ্গে একমত হলেও কয়েকটি ব্যাপারে তিনি দ্বিমত পোষণ করেন। সভায় শুরুতেই কিছু শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রীদের যৌন হয়রানি এবং সহিংসতার প্রসঙ্গের অবতারণা হয়। শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্যের বিষয়টিও উঠে আসে। এছাড়া মাঠপর্যায়ের শিক্ষাপ্রশাসনে ঘুষের প্রভাব, পাঠ্যবইয়ের কারিকুলাম পর্যালোচনা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়ন নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়। প্রায় একযুগ ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা চালুর চেষ্টা চলছে। কিন্তু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরোধিতার কারণে সম্ভব হচ্ছে না। সর্বশেষ গত বছর রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চ্যান্সেলর এ বিষয়ে ভিসিদের ডেকে নির্দেশনা দেন। সময় স্বল্পতার অজুহাতে গত বছরও চালু করা যায়নি। চলতি এইচএসসি পরীক্ষার্থীরাই কয়েকদিন পর ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেবে। সুতরাং সেই সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার অগ্রগতি কতদূর?
এমন প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমি জানি কিছু বড় বিশ্ববিদ্যালয় নানা কারণে এর বিরোধিতা করছে। কিন্তু সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষাটি শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের জন্যে খুবই জরুরি।’ তিনি বলেন, এতে হয়রানি এবং অর্থ অপচয় অনেক কমে যাবে। বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের পক্ষে এখানে-ওখানে গিয়ে পরীক্ষা দেয়া কষ্টকর। তিনি বলেন, ‘অনেক সময় আমি শুনি ছেলেরা মসজিদে রাতে ঘুমিয়ে পরীক্ষা দেয়। মেয়েরা কোথায় গিয়ে থাকবে? তাদের বাবা-মা এবং সব বাব-মায়ের পক্ষে কি তা সম্ভব? এটা তো সম্ভবও নয়।’ মন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা যদি মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা সমন্বিত করতে পারি, তাহলে কেন অন্য ভর্তি পরীক্ষা সমন্বিত করতে পারব না? আমার বিশ্বাস, সবার একটু সদিচ্ছা থাকলে, নিশ্চয়ই আমরা পারব। এক্ষেত্রে আমি আশা করি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের সহযোগিতা দেবে।
এক মাসের মধ্যে এমপিওভুক্তি : সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, চলতি বা আগামী মাসের মধ্যে আড়াই হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তি (মাসিক বেতন-ভাতার সরকারি অংশ) কার্যক্রম চূড়ান্ত করা হবে। এমপিওভুক্তির ব্যাপারে গত বছর চারটি ক্রাইটেরিয়া ঠিক করে অনলাইনে আবেদন নেয়া হয়েছিল। প্রতিষ্ঠানগুলো যে তথ্য দিয়েছে, সেই তথ্যের ভিত্তিতে সম্পূর্ণভাবে স্বয়ংক্রিয় কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে আমরা যোগ্যতার নিরিখে যোগ্য প্রতিষ্ঠান নিরূপণ করেছি। সেটির সংখ্যা আড়াই হাজারের কিছু বেশি বা কাছাকাছি। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরা তথ্য দিয়েছে। এখন তা সরেজমিন যাচাই করা হবে।
সবগুলো একসঙ্গে ঘোষণা হবে কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা একবারেই করতে চাইছি যতটুকুই পারি। শিক্ষকরাও বলেছেন, আমাদের সবাইকে দেন, কম করে হলেও দেন। কিন্তু আমি পেলাম, উনি পেলেন না- এর মধ্যে একটা অন্যায্য বিষয় চলে আসবে। আমরা চাই সবার প্রতি একটা ন্যায্য আচরণ করতে। তাই আমরা চাই যেক’টি প্রতিষ্ঠান যোগ্য নির্বাচিত হবে তাদের সবাইকেই দেয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনেক জায়গায় প্রাপ্যতার চেয়ে অনেক বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে। পাবলিক পরীক্ষায় পাস করাতে ব্যর্থ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে। তাই এমন বাস্তবতায় আমাদের একটু চিন্তা-ভাবনা করতে হবে যে, কিছু প্রতিষ্ঠান একীভূত করে দিতে পারি কিনা। কিংবা অন্য কোনোভাবে কিছু করা যায় কিনা।
এ বছরের শেষে শিক্ষা আইন : এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দেশে শিক্ষাসংক্রান্ত অনেক আইন আছে। এর কোনোটির সঙ্গে যেন শিক্ষা আইন সাংঘর্ষিক না হয়। কারণ, আইন করলাম, আর বিদ্যমান আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হল- তাহলে কার্যকর করা কঠিন হবে। সেই কারণে একজন পরামর্শকের সহায়তা নিয়ে সব আইনের সঙ্গে যাতে সাংঘর্ষিক না হয়, সেটি আমরা দেখছি। আশা করছি, মন্ত্রণালয় থেকে পরবর্তী পর্যায়ে পৌঁছে দিতে পারব এ বছরের শেষ নাগাদ।’ শিক্ষানীতির ব্যাপারে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, শিক্ষানীতির বাস্তবায়ন চলছে। মনে রাখা প্রয়োজন, কোনো একটা পরিবর্তন করতে চাইলে প্রক্রিয়াগত কারণেই চিন্তা থেকে বাস্তবায়নে যেতে ২-৩ বছর সময় লাগে। আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, শিক্ষানীতিতে শিক্ষা কমিশনের কথা আছে। আমরা তা করতে চাই।
স্বতন্ত্র মাদ্রাসা সরকারিকরণের সিদ্ধান্ত হয়নি : ডা. দীপু মনি বলেন, ‘স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা সরকারিকরণ বা এমপিওভুক্তি নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কিছুদিন ধরে তারা আন্দোলন করছেন, তাদের সঙ্গে আমার আলাপ-আলোচনা হয়েছে। তারা সামান্য মাসোয়ারা পান। তাদের নিয়ে কী করা যায়, তা ভাবা হচ্ছে।’ এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘আসলে এসব প্রতিষ্ঠান নিয়ম-কানুন মেনে যে তৈরি হয়, তাও না। কিছু কিছু আছে, বাড়িতে পাঞ্জেগানা মসজিদ, হেফজখানায় বাচ্চাদের পবিত্র কোরআন শেখানো হয়। সেখান থেকে তৈরি হয়ে গেছে প্রতিষ্ঠান। আমাদের এখন সময় এসেছে একটা কিছু করার। যেমন প্রাথমিক বিদ্যালয় করার বিষয়ে বলা হয়েছে, কেউ আর করবেন না। এখন যা করার সরকার করবে। ঠিক একইভাবে মাদ্রাসা, মাধ্যমিক স্কুলগুলোতে এ ধরনের নিয়ম আসা উচিত। এলাকার জনসংখ্যা, আয়তন ও প্রয়োজনসহ সব কিছুর নিরিখে প্রাপ্যতা যাচাই করব। কারণ, আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে।’
সচিবরা কী সিনিয়রদের এসিআর লেখেন না : তিনি বলেন, সরকারি চাকরিতে একটি সময়ের পর বদলি খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। এটা নিয়ে কারও আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তবে কেউ যদি আতঙ্কে থাকেন, সেটা দুটি কারণে হতে পারে। একটি হচ্ছে- এমন এক জায়গায় তিনি আছেন যেখানে তিনি অন্যায় সুবিধা নিচ্ছেন। সেখান থেকে বদলি হওয়ায় আর অন্যায় সুবিধাটি নিতে পারবেন না। আরেকটি হতে পারে, তিনি চরম দুর্নীতিবাজ। বদলি হয়ে গেলে তিনি যদি ধরা পড়ে যান। এছাড়া দীর্ঘদিন একই জায়গায় বসে আছেন, সেখান থেকে তিনি নড়তে চান না। এছাড়া আতঙ্কিত হওয়ার কথা নয়। কেননা, সরকারি কর্মকর্তারা নিয়োগের সময়েই জানেন যে, তাদের বদলি হতে হবে।
সিনিয়র পদে জুনিয়রের পদায়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সিনিয়র-জুনিয়রের কথা বলছেন। সরকারি চাকরিতে অনেক কর্মকর্তা জুনিয়র হয়েও সিনিয়রের এসিআর লিখছেন। এটি কোনো বিষয় নয়। আর সিনিয়রিটি-জুনিয়রিটির প্রশ্ন তুললে তো শুধু এখানে নয়, সব ক্ষেত্রেই; তাহলে তো আমরা যারা আছি, আমাদের এখনও অনেকেই তো জুনিয়র মনে করেন। তাহলে তো আমরাও এখানে এ দায়িত্বে আসব না কখনও।
আরও নানা বিষয় : মতবিনিময়কালে সাংবাদিকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত ফি আদায়, শিক্ষা প্রশাসনে বছরের পর বছর একই ব্যক্তিদের একই ধরনের পদে চাকরি, সরকারি হাইস্কুলের জাতীয়করণে ধীরগতি, সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কারিগরির ২টি করে ট্রেড চালুসহ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের পদে শূন্যতা, অবসর-কল্যাণ বোর্ডের সদস্য সচিব নিয়োগ, রাজধানীর ৭ কলেজের শিক্ষার্থীদের দুরবস্থা ও সেশন জট, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিরতা ও রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির ক্যাম্পাসে অবস্থান না করা, উপবৃত্তি কার্যক্রম, কলেজ পর্যায়ে উচ্চশিক্ষার বেহাল দশা, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্যিক মানসিকতা ও কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে সনদ বাণিজ্যের অভিযোগ, মাল্টিমিডিয়া প্রকল্পে দুর্নীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনায় উঠে আসে।
0 facebook: