স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ শনিবার রাতে দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বাইরে রেখে জাতীয় নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। রায় ঘোষণার পর তা রাজনৈতিক ও আইনগতভাবে মোকাবেলারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নেতাদের মতামত নিয়ে রায়-পরবর্তী করণীয় চূড়ান্ত করবে দলটি।
বিএনপি বলছে, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় দেখেই তারা তাদের কর্মসূচি ঘোষণা করবে। একই সঙ্গে দলের চেয়ারপারসনকে আগামী নির্বাচন থেকে বাইরে রাখার কোনো ষড়যন্ত্র হলে সেই নির্বাচন বয়কট করা হবে বলেও দলটির নির্ধারকরা একমত হয়েছেন। জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা আগামী ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার মামলার রায় 'তড়িঘড়ি' করাকে 'সরকারি ষড়যন্ত্র' দাবি করে এর বিরুদ্ধে দেশবাসীকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটি। বৈঠকের ফাঁকে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। মামলার ভবিষৎ রায় নিয়ে আইনি ও রাজনৈতিক পর্যালোচনা এবং করণীয় নির্ধারণে ওই বৈঠক ডাকা হয়। শনিবার রাত সাড়ে ৯টায় শুরু হয়ে পৌনে ১২টায় বৈঠক শেষ হয়। আজ রোববার জোটের সঙ্গে বৈঠক করবেন খালেদা জিয়া।
বৈঠক সূত্র জানায়, সরকারের তড়িঘড়ি দেখে মনে হচ্ছে খালেদা জিয়াকে মামলায় সাজা দিয়ে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে সরকার নীলনকশা করেছে। এ ক্ষেত্রে চেয়ারপারসনকে সাজা দেয়া হলে নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে সবাই মত দেন। এ সময় এক নেতা জানতে চান, সরকার যদি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে নির্বাচন দিতে চায় তখন আমরা কী করব?
এ সময় সবাই মত দেন, ওই সময়ের পরিস্থিতি দেখে তখন সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। রায় দেখে কর্মসূচি ঘোষণা করা উচিৎ হবে বলে বৈঠকে সবাই এক মত হন। রায় বিপক্ষে গেলে জামিন না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকার পক্ষে মত দেন সবাই। তবে জ্বালাও পোড়াও বা ধ্বংসাত্মক কোনো কর্মসূচি না দেয়ার ব্যাপারে কেউ কেউ মত দেন। এমন কোনো কর্মসূচি দেয়া হবে না যাতে তৃতীয় পক্ষ কোনো ফায়দা নিতে পারে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার মামলা নিয়ে শীর্ষ নেতারা নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেন। এ ক্ষেত্রে সাংগঠনিক প্রস্তুতির পাশাপাশি নেতাকর্মীদের সজাগ থাকতে বলা হয়েছে। রায়ে নেতিবাচক কিছু হলে তাত্ক্ষণিক সারা দেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখানোর কথা বলেছেন কোনো কোনো নেতা।
জানা গেছে, মামলার রায়ের তারিখকে সামনে রেখে দলের নির্বাহী কমিটির আরেকটি সভা ডাকা হতে পারে। সেখানে উদ্ভূত পরিস্থিতির আলোকে দলীয় নেতাদের পরামর্শ নেয়া হবে। খালেদা জিয়ার সাজা হলে দল কিভাবে চলবে কিংবা নির্বাচনে যাওয়া উচিত হবে কিনা- এ ব্যাপারে তাদের পরামর্শ নেয়া হবে।
খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে বৈঠকে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ছাড়াও স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এই রায়ের তারিখ ঘোষণা কেন্দ্র করে গোটা জাতি আজ উদ্বিগ্ন ও ক্ষুব্ধ। আমরা মনে করি, এটা বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংসের জন্য এবং সবার অংশগ্রহণে ইনক্লুসিভ ইলেকশন নষ্ট করার জন্য। এটি একটি গভীর ষড়যন্ত্র বলে আমরা মনে করি।
জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভা থেকে খালেদা জিয়াসহ কয়েকজন নিরপরাধ ব্যক্তিকে মিথ্যা, বানোয়াট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দিয়ে সরকারের আইন-আদালতের নিয়মনীতির বিরুদ্ধে আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। এ ব্যাপারে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ গণতানি্ত্রক আন্দোলনের মাধ্যমে বিচারের নামে সরকারি ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে কিনা- প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, এটা জানাব রায় ঘোষণা হওয়ার পর। পুরো বিষয় আমরা জানাব রায় ঘোষণা হলেই। তিনি বলেন, ২৫ জানুয়ারি বিশেষ জজ আদালতে বিবাদীপক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য হঠাৎ সমাপ্তি করে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। আমাদের উপস্থিত প্রবীণ আইনজীবীদের মতে, এমন ঘটনা শুধু অস্বাভাবিক ও অপ্রত্যাশিত নয়, রহস্যজনকও।
জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি ও দেশনেত্রীকে নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে বাইরে রাখতে দ্রুত রায় ঘোষণা সেই অপচষ্টোর অংশ বলেই দেশবাসী মনে করে। তিনি বলেন, সরকারপ্রধান থেকে শুরু করে কয়েক দিন ধরে সরকারের মন্ত্রীরা এবং বিশেষ দূত এই মামলার রায় এবং তার সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবেলার বিষয়ে সরকার ও সরকারি দলের বিভিন্ন প্রস্তুতির কথা যে ভাষায় বলে চলেছেন, তাতে প্রমাণিত হয়, মামলা আদালতে বিচারাধীন থাকলেও তার রায় কী হবে তা সরকার ও সরকারি দলের জানা আছে।
স্পষ্টত বোঝা যাচ্ছে, জাল-জালিয়াতি করে বিচারের নামে প্রহসন ও বিরোধী পক্ষকে দমনের জন্য আদালতকে ব্যবহার করার আরেকটি নোংরা দৃষ্টান্ত স্থাপিত হতে যাচ্ছে। বিচার বিভাগ ও আইনের শাসন নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের এমন আচরণ দেশের জনগণ এখন ক্ষুব্ধ ও ক্রুদ্ধ।
0 facebook: