স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল বা সংস্কার করতে একটি কমিটি গঠনের রূপরেখা বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোজাম্মেল হক খান।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের তিনি এ তথ্য জানান। কোটা নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অগ্রগতি জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছি, সেটা আজ (বৃহস্পতিবার) সকালে পৌঁছেছে।
যদি প্রধানমন্ত্রী দেখেন তাহলে দু-একদিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত দেবেন, কমিটি হবে। কমিটি সুপারিশ করবে, কমিটির সুপারিশ সরকার অনেক সময় রাখে। তারপর একটা সিদ্ধান্ত হবে যেটা সবাই চাচ্ছে, আশা করি সেটা হবে।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে প্রধান করে কমিটি গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে জানিয়ে মোজাম্মেল হক খান বলেন, কমিটির সদস্য ৪ থেকে ৫ জন হতে পারে। কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের কমিটি গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করতে বৃহস্পতিবার (১০ মে) পর্যন্ত সরকারকে সময় বেঁধে দিয়েছে। এর মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি না করলে রোববার থেকে ফের আন্দোলনের ঘোষণা রয়েছে তাদের।
মোজাম্মেল হক খান বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল নাকি সংস্কার হবে সে বিষয়ে এ কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে। কমিটি সামগ্রিক বিষয়, আইন-কানুন বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে তারা প্রতিবেদনে সুপারিশ করবে। সরকার সেটাকে কতটুকু বিবেচনায় নেবে...। আমি আগেই বললাম, সরকার পুরোপুরি বিবেচনা করতে পারে, আংশিকও করতে পারে। যতটুকু গ্রহণযোগ্য ততটুকু নেবে। পরে সেটা সবাইকে (প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে) জানিয়ে দেয়া হবে। তবে কবে হবে সেটা বলতে পারব না। কোটা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন সেটা আমাদের মাথায় রাখা ভালো। পরে বাস্তবে কি ঘটবে সেটা পরে দেখা যাবে- বলেন মোজাম্মেল হক খান।
বর্তমানে সরকারি চাকরিতে সংরক্ষিত কোটা ৫৬ শতাংশ। বাকি ৪৪ শতাংশ নেয়া হয় মেধার ভিত্তিতে। বিসিএসে নিয়োগের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৩০, জেলা কোটায় ১০, নারী কোটায় ১০ ও উপজাতি কোটায় ৫ শতাংশ চাকরি সংরক্ষণ করা আছে। কোটায় পূরণযোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সেক্ষেত্রে ১ শতাংশ পদে প্রতিবন্ধী নিয়োগের বিধান রয়েছে।
উল্লেখ্য, কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে বেশ কিছুদিন ধরেই আন্দোলনে রয়েছে শিক্ষার্থীরা। এ দাবিতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করেন তারা। ৯ এপ্রিল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠকে বসে আন্দোলনকারীরা।
সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে কোটার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ৭ মে পর্যন্ত সময় নেন ওবায়দুল কাদের। এরপরও আন্দোলন চালিয়ে যান শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদে কোটা বাতিলের কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘কোটা নিয়ে যখন এতকিছু, তখন কোটাই থাকবে না। কোনো কোটারই দরকার নেই। যারা প্রতিবন্ধী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী তাদের আমরা অন্যভাবে চাকরির ব্যবস্থা করে দেব।’
তবে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী কোটা নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা না হলে ফের সোচ্চার হন শিক্ষার্থীরা। এ অবস্থায় ২৭ এপ্রিল কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের একটি প্রতিনিধি দল আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর নানকের সঙ্গে বৈঠক করে।
অস্ট্রেলিয়া সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরলেই দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে- এ আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বৈঠকে ৭ মে পর্যন্ত কোটাবিরোধী আন্দোলন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ৭ মে’র মধ্যে কোটার প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় ফের আন্দোলনের ডাক দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
খবর বিভাগঃ
জাতীয়
0 facebook: