ছবিঃ সংগৃহীত |
স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আপনারা তৃণমূল পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দুর্নীতি বন্ধে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করবেন। যাতে করে আমাদের এত কষ্টের অর্জনগুলো দুর্নীতির কারণে নষ্ট না হয়ে যায়।’
প্রধানমন্ত্রী শনিবার তার কার্যালয়ে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সরকারি জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এত খেটে, সারাদিন এত কাজের পর যদি দুর্নীতির কারণে সব অর্জন নষ্ট হয়ে যায় সেটা হবে খুব দুঃখজনক। এটা কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না।’ তিনি বলেন, ‘যে ঘুষ নেবে সেই কেবল অপরাধী নয়, যে ঘুষ দেবে সেও অপরাধী। কাজেই দুর্নীতির কারণে আমাদের উন্নয়নটা যেন বাধাগ্রস্ত না হয়, সে বিষয়ে সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে।’ এপিএ মূলত প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা দলিল। এবার ৬ষ্ঠ বছরের মতো এ চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে একেবারে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষগুলোকে সব নাগরিক সুবিধাটা আমরা দিতে চাই। যাতে তাদের কাজ খোঁজার জন্য আর গ্রাম থেকে শহরে আসতে না হয়।
তিনি বলেন, মানুষের আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য বাড়ার ফলে এবং যেহেতু আমরা ঘোষণা দিয়েছি ‘আমার গ্রাম আমার শহর’, তাই যত্রতত্র দালানকোঠা ও স্থাপনা তৈরি হওয়ায় কৃষিজমি কমে যাওয়ার একটা আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা বোধহয় আমাদের একটু দেখা উচিত যে, কিভাবে আমাদের কৃষি জমিগুলোকে আমরা রক্ষা করব। পরিবেশ এবং প্রতিবেশ রক্ষা করে উন্নয়ন যেন পরিকল্পিতভাবে করা যায়।’ শিল্পায়নের জন্য সারা দেশে একশ’ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেখানে সেখানে ঘরবাড়ি এবং কল-কারখানা এভাবে যদি হতে থাকে তাহলে যেমন আমাদের আবাদি জমিও নষ্ট হবে, তেমনি গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য নাগরিক সুবিধা দেয়াটাও একটু কঠিন হয়ে যাবে।’ তিনি এজন্য মানুষকে বোঝানোর এবং নির্দিষ্ট স্থানে স্থাপনা নির্মাণ করলে তারা যে সুবিধাগুলো পাবেন সেগুলো সম্পর্কে তাদের অবহিতকরণের জন্য প্রশাসনের কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান। সেই সঙ্গে কোনোভাবেই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, সে বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকারও আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২১ সালে আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করব। সেই সঙ্গে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত সময়কে আমরা ‘মুজিব বর্ষ’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছি। তিনি বলেন, এর মধ্যে বাংলাদেশে একটা ভিক্ষুকও থাকবে না। একটা মানুষও গৃহহারা থাকবে না। একটা মানুষও না খেয়ে কষ্ট পাবে না।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘অন্তত মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো আমরা পূরণ করব। তাদের জীবনের ন্যূনতম চাহিদা, সেটা যেন আমরা পূরণ করতে পারি, সে লক্ষ্যকে সামনে রেখে সব পরিকল্পনা, সব কাজ করতে হবে।’
চীনের প্রবৃদ্ধির প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘চীনের থেকেও আমাদের প্রবৃদ্ধি বেশি। আমাদের প্রবৃদ্ধি ইতিমধ্যে ৮ দশমিক ১ ভাগে পৌঁছেছে। এ অর্থবছরের শেষ নাগাদ ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনই আমাদের লক্ষ্য। আর এটা আমরা করতে পারব বলেই বিশ্বাস করি।’
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সরকারের সাফল্য তুলে ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা প্রসঙ্গে সরকারের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি থাকার আভাস দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি প্রশাসনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘বন্যায় মানুষের যেন প্রাণহানি না ঘটে এবং খাদ্যের জন্য মানুষ যেন কষ্ট না পায়। তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত এ বিষয়ে নির্দেশনা দেবেন।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি, লাল ফিতার দৌরাত্ম্য কমেছে এবং আমাদের কাজে গতিশীলতা বেড়েছে, দক্ষতা বেড়েছে। সেই সঙ্গে কাজের আগ্রহটাও বেড়েছে।’ সরকারপ্রধান বলেন, ‘এখন তো ডিজিটাল যুগ। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের চলতে হবে। কিভাবে কোন কাজটা করলে দেশটা আরও উন্নত হতে পারে বা দ্রুত আমরা কাজটি করে লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে পারব, সেটা আপনাদের চিন্তা করতে হবে।’ অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দফতরের সিনিয়র সচিব ও সচিবরা একযোগে চুক্তিতে স্বাক্ষর করে একে একে তা প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন। সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ অনুষ্ঠানে ১০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে সম্মাননাপত্র ও ক্রেস্ট দেয়া হয়। ২০১৭-১৮ সালের বার্ষিক কর্মসংস্থান চুক্তি সম্পাদনে সাফল্যের বিবেচনায় বিদ্যুৎ বিভাগ প্রথম, বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ দ্বিতীয় এবং জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ তৃতীয় স্থান অর্জন করে।
শুদ্ধাচার চর্চা ও দুর্নীতি প্রতিরোধের মাধ্যমে রাষ্ট্র ও সমাজে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য এবং সরকারি কর্মচারীদের শুদ্ধাচার চর্চায় উৎসাহ প্রদানে সরকার প্রদত্ত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে শুদ্ধাচার পুরস্কার লাভ করেছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুল মালেক চুক্তিতে তার মন্ত্রণালয়ের সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সম্মাননাপত্র গ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. শফিউল আলম, মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান এবং বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস বক্তৃতা করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় বিষয়, বিশেষ করে তার সাম্প্রতিক চীন সফর এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদযাপনের সম্ভাব্য কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করেছেন। প্রেস সচিব বলেন, সরকার প্রধান তার সাম্প্রতিক ৫ দিনব্যাপী চীন সফরের ফলাফল সম্পর্কে রাষ্ট্রপ্রধানকে বিস্তারিত অবহিত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী ১ জুলাই চীনের প্রেসিডেন্ট লি কেকিয়াংয়ের আমন্ত্রণে চীন সফরে যান এবং ৬ জুলাই দেশে ফেরেন। চীন সফরকালে প্রধানমন্ত্রী ২ জুলাই ডালিয়ানে ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের বার্ষিক সভার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
৪ ও ৫ জুলাই তিনি চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন এবং বেইজিংয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী চায়না কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক বিষয় সম্পর্কিত মিনিস্টার সান তাওয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন।
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভবনে এসে পৌঁছলে রাষ্ট্রপতি ফুলের তোড়া দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। প্রধানমন্ত্রীর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেন ও অন্যরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মো. নজিবুর রহমান, রাষ্ট্রপতির সচিব সম্পদ বড়ুয়া, সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এসএম শামীম-উজ-জামান, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।
0 facebook: