স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ ঢাকার বাজারে এখন
গরুর গোশতের দাম কেজিপ্রতি ৪৮০ টাকার মতো। দেশে অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া ও ভারত থেকে
হিমায়িত গরুর গোশত আমদানি হয়। আমদানিতে এসব গোশতের কেজিপ্রতি দাম দেখানো হয় ১০৮ থেকে
২২৫ টাকা। এই দাম বাংলাদেশের বাজারের চেয়ে অনেক কম।
হিমায়িত গরুর গোশত
আমদানির এ তথ্য উঠে এসেছে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের (বিটিসি) এক প্রতিবেদনে। সম্প্রতি
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গরুর গোশত আমদানির বিষয়ে মতামত চেয়ে ট্যারিফ কমিশনের কাছে একটি
প্রতিবেদন চেয়েছিল। কমিশন তা তৈরি করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
বাণিজ্য
মন্ত্রণালয় সূত্রে পাওয়া ওই প্রতিবেদনে দেখা যায়, ট্যারিফ কমিশন
গরুর গোশত আমদানির বিষয়ে সাতটি মতামত বা পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে,
দেশে
গরুর খামার বাড়ছে এবং গরুর গোশতের উৎপাদন এখন চাহিদার চেয়েও বেশি হচ্ছে। ফলে
ভবিষ্যতে দাম কমে যাবে। ভারত থেকে হিমায়িত গোশত আমদানি বাড়লে বরং খামারিদের ক্ষতি
হতে পারে।
দেশের
ব্যবসায়ীদের একটি অংশ ভারত থেকে হিমায়িত গোশত আমদানির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের
অনুমোদন চেয়েছে। গত জুলাই মাসে ভারতের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল ঢাকায় এসে গোশত
রপ্তানির প্রস্তাব দেয়। ২৮ নভেম্বর এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি সভা হয়। এরপর
ওই সভায় এ বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, ট্যারিফ কমিশন,
জাতীয়
রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই) ও
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মতামত চাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এরই
পরিপ্রেক্ষিতে ট্যারিফ কমিশন এ বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেছে।
ট্যারিফ কমিশনের
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে দেশে শিক্ষিত বেকার যুবকেরা গরু পালন ও গরু
মোটাতাজাকরণ কাজে নিযুক্ত রয়েছেন। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে গরু কেনা, গরু
লালন-পালন, গরুর সংকরায়ণ, দুগ্ধজাতীয়
খাদ্যসামগ্রী উৎপাদন ও বিপণন খাতে বিপুল পরিমাণ ঋণ দেওয়া হয়েছে। দেশে সরকারি ও
বেসরকারি গবাদিপশু পালনে ব্যাপক বিনিয়োগ হচ্ছে। ফলে ভবিষ্যতে গরুর গোশতের দাম কমে
যাবে বলে অনুমিত হয়। কমিশন বলছে, হিমায়িত গোশত আমদানি বাড়লে এসব
খামারির ক্ষতি হবে। পাশাপাশি ব্যাংকঋণ আদায় কঠিন হবে।
চার বন্ধুর
উদ্যোগে দেড় বছর আগে ঢাকার উত্তরখানে একটি খামার গড়ে তোলা হয়েছে। ওই খামারে এখন ৫০টি
গরু আছে, বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকার মতো। গরুর গোশত আমদানির বিষয়ে জানতে
চাইলে ওই খামারের মালিকদের একজন আরিফুর রহমান খান বলেন, দেশে এখন বহু
গরুর খামার গড়ে উঠেছে। গোশত আমদানি হলে এসব খামারের মালিকেরা বিশাল ক্ষতির মুখে
পড়বেন। তিনি বলেন, ‘আমরা খামারের জন্য গরু কিনতে গিয়ে দেখেছি, গ্রামের
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাহীন খামারিরা উন্নত জাতের গরু পালন করছেন। দেশে খামারের
ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন ঘটে গেছে, তা সমীক্ষা ছাড়া বোঝা যাবে না।’
২০ হাজার কেজি গোশত
আমদানি!
কমিশনের
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে প্রায় ২০ টন বা ২০ হাজার কেজি
গরুর গোশত আমদানি হয়েছে। আগের অর্থবছরে দেশে প্রায় ৫৫ হাজার কেজি গরুর গোশত আমদানি
হয়েছিল। তবে তার আগের, অর্থাৎ ২০১৪-১৫ অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ১৮ হাজার
কেজি গরুর গোশত। এসব গোশত এসেছে ভারত, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া
ও অন্যান্য দেশ থেকে হিমায়িত অবস্থায়।
দেশে গত বছর বেশি
গোশত এসেছে অস্ট্রেলিয়া থেকে, যার পরিমাণ প্রায় ১৩ হাজার কেজি। আর মালয়েশিয়া থেকে
এসেছে ৪ হাজার ২০০ কেজি। এ ছাড়া ভারত থেকে এসেছে ৯২০ কেজি। বাকিটা আমদানি হয়েছে
অন্যান্য দেশ থেকে। কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, অস্ট্রেলিয়া থেকে
আমদানিতে গড় দাম পড়েছে কেজিপ্রতি ২২৫ টাকা। মালয়েশিয়া থেকে আমদানিতে গোশতের দাম
গড়ে কেজিপ্রতি ১০৮ টাকা ও ভারত থেকে আমদানিতে ১২০ টাকা পড়েছে।
আমদানি নিষিদ্ধ
নয়
বাংলাদেশে
হিমায়িত গরুর গোশত আমদানি নিষিদ্ধ নয়। আমদানি নীতি আদেশ ২০১৫-১৮ অনুযায়ী, দেশে
শূকর ছাড়া অন্যান্য পশুর গোশত আমদানি করা যায়। তবে এ ক্ষেত্রে প্রাণিসম্পদ
অধিদপ্তরের অনুমতি নিয়ে আমদানি করতে হয়। আমদানির ক্ষেত্রে নানা শর্ত আছে। শর্তের
মধ্যে অন্যতম হলো গরু, ছাগল ও মুরগির গোশত এবং মানুষের খাওয়ার উপযোগী
অন্যান্য পশুর গোশত আমদানির ক্ষেত্রে মোড়কের গায়ে রপ্তানিকারক দেশের উৎপাদনের
তারিখ ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ মুদ্রিত থাকতে হবে। পাশাপাশি পৃথক লেবেল ছাপিয়ে
মোড়কের গায়ে লাগানো যাবে না। এ ছাড়া গোশত নানা ধরনের ক্ষতিকর উপাদান, অ্যান্টিবায়োটিক
ও রোগমুক্ত বলে সনদ থাকতে হবে। গোশত বন্দরে পরীক্ষা করবে বাংলাদেশি সরকারি সংস্থা।
গরুর গোশত
আমদানিতে মোট করভার ৩৩ শতাংশ। এর মধ্যে আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ, অগ্রিম
আয়কর ৫ শতাংশ ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৩ শতাংশ।
খবর বিভাগঃ
জাতীয়
ব্যবসা ও বাণিজ্য
0 facebook: