10 February 2018

যেভাবে কারাগারে দুইদিন কেটেগেলো খালেদা জিয়ার


স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ দুর্নীতির মামলায় দন্ডিত বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে এখন অন্তরিনগত বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে একমাত্র বন্দি হিসেবে গৃহকর্মী ফাতেমা বেগমকে নিয়ে কারাবাস করছেন তিনি

এর আগে বকশীবাজারের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল থেকে তাকে একটি সাদা গাড়িতে করে র‌্যাব পুলিশের কঠোর নিরাপত্তায় কারাগারে নেয়া হয়এ সময় পুরো এলাকার পরিবেশ ছিল নীরব, নিস্তব্ধ

শুক্রবার দিবাগত রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার পাশাপাশি এবাদত-বন্দেগি করেন তিনিআজ ভোরে ফজর নামাজ পড়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনএরপর সকালে কারা কর্তৃপক্ষের দেয়া নাস্তা করেছেন তিনিকারাগারে তার চিকিৎসাসেবার জন্য একজন চিকিৎসকও রাখা হয়েছে

কারা অধিদফতরের ঢাকা বিভাগের ডিআইজি (প্রিজন্স) তৌহিদুল ইসলাম বলেন, কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খালেদা জিয়াকে কারাগারের মূলফটকের ভেতরে পুরনো অফিস ভবনে রাখা হয়েছেসিনিয়র জেল সুপারের ওই অফিস কক্ষে একটি খাট, টেবিল, চেয়ার, টিভি ও দুটি ফ্যান রয়েছেদেয়া হয়েছে টেলিভিশনপাশের রুমে গ্যাসের চুলায় রান্নার ব্যবস্থাও রয়েছে

তিনি বলেন, তার চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে একজন চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হয়েছেআদালতের অনুমতি নিয়ে কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে রয়েছেন তার ব্যক্তিগত পরিচারিকা ফাতেমাভিআইপি বন্দি ও জেলকোড অনুযায়ী খালেদা জিয়াকে সব সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে কারা কর্তৃপক্ষসকালে তাকে একটি জাতীয় দৈনিক তিনটি পত্রিকা পড়তে দেয়া হচ্ছে

ওই সেবিকা সার্বক্ষণিক তার সঙ্গে থাকবেনএছাড়া তার চাহিদা অনুযায়ী একটি জাতীয় দৈনিক সরবরাহ করা হবেভিআইপিবন্দি ও জেল কোড অনুযায়ী খালেদা জিয়া সব সুযোগ-সুবিধা পাবেন

কারাগারের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, কারাগারে প্রবেশ করার পরই খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়কারা ডাক্তার মাহমুদুল হাসান তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছেনতবে তিনি সুস্থ ও স্বাভাবিক রয়েছেন বলেও জানান ওই কর্মকর্তা

এর আগে শুক্রবার তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন পরিবারের সদস্যরাপরিত্যক্ত ওই কারাগারে একমাত্র বন্দি হিসেবে তিনি রয়েছেনকারা সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার কারাগারে খালেদা জিয়া প্রথম রাতে ভাত, মাছ ও সবজি খেয়েছেনসকালে কারা কর্তৃপক্ষের দেয়া রুটি-সবজি দিয়ে নাস্তা করেন তিনি

ঢাকার জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির জানান, শুক্রবার খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা দেখা করার আবেদন করেনদুপুরের পর তাদের দেখা করানো হয়

কারা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়াকে বন্দি হিসেবে কয়েদি পোশাক পরানো হয়নিনাম প্রকাশ না করার শর্তে কারা অধিদফতরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, নিয়মানুযায়ী প্রথম দিন কয়েদি পোশাক পরানো হয় নাদ্বিতীয় দিন থেকে পরানোর নিয়ম রয়েছেতিনি আরও বলেন, এ ব্যাপারে আমাদের কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি

এর আগে বকশীবাজারের বিশেষ আদালত থেকে একটি সাদা গাড়িতে করে পাঁচ বছরের সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়াকে নেয়া হয় ২০০ বছরের ঐতিহাসিক পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বকশীবাজারের মাঠ থেকে কারা অধিদফতরের উল্টো দিকে ঢাকা বিভাগের ডিআইজি প্রিজনের অফিস এলাকা দিয়ে গাড়ির বহরটি নাজিমুদ্দিন রোড হয়ে কারাগারের প্রধান ফটকে পৌঁছেযখন খালেদা জিয়াকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন সামনে কয়েকটি গাড়ি ছাড়াও দুই শতাধিক হেলমেট পরা র‌্যাব পুলিশ সদস্যের বেষ্টনীর ভেতরে ছিলেন খালেদা জিয়াএরপর পেছনে ছিল আরো কয়েকটি নিরাপত্তা কর্মকর্তার গাড়িবহরকারাগারে নেয়ার সময় পর্যন্ত পুরো এলাকাটি ছিল নীরব, নিস্তব্ধশুধু আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর হেঁটে যাওয়ার শব্দই জনতা শুনতে পাচ্ছিলেন

এদিকে নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে শুধু খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কারাগারের ভেতরে ও বাইরে পালাক্রমে নিয়োজিত রয়েছেন কারারক্ষী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শতাধিক সদস্যব্যারিকেড বসিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে কারাগারসংলগ্ন চারটি মূল সড়কসড়কগুলো হলো নাজিমউদ্দিন সড়ক, জেলখানার ঢাল, বেগমবাজার সড়ক ও ১ নম্বর জেল রোডএসব সড়কে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে যান চলাচলদু-চারটি সরু গলিপথ খোলা থাকলেও সেগুলোয় অসহনীয় যানজট

স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, দুইশ বছরের পুরনো এই কারগারে বহু নামি-দামি, কুখ্যাত-স্বনামধন্য আসামিকে আনা হয়েছে; ফাঁসি পর্যন্ত কার্যকর করা হয়েছেকিন্তু এখানকার বর্তমান নিরাপত্তাব্যবস্থা নজিরবিহীনখালেদা জিয়াকে কারাগারে আনার পর থেকে নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে মূল সড়কগুলোর যান চলাচলএতে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে ওই এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্যেরচলাচলে বাধা পেয়ে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বাসিন্দাদেরনিরাপত্তার কারণে কয়েক দিন হলে এই দুর্ভোগ সহ্য করবেন; কিন্তু সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান তারা

প্রস্তুতি চলছে আপিল ও জামিন আবেদনের।

খালেদা জিয়ার দুর্নীতির মামলায় বিচারিক আদালতের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের প্রস্তুতি চলছেরায়ের কপি হাতে পাওয়ার পর সাজা স্থগিত চেয়ে খালেদা জিয়ার জামিনের জন্য চলতি সপ্তাহেই হাইকোর্টে আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবীরা

এরই মধ্যে মামলার ওকালতনামায়ও সই করেছেন নাজিমুদ্দীন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি খালেদা জিয়াগত শুক্রবার তার সই করা ওকালতনামার কপি সংশ্নিষ্ট আইনজীবীদের কাছে হস্তান্তর করেছে কারা কর্তৃপক্ষবিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া

এর আগে গত বৃহস্পতিবার বিচারিক আদালতে ঘোষিত রায়ের সত্যায়িত কপি সংগ্রহের জন্য খালেদা জিয়ার পক্ষে আবেদনও করা হয়েছে

এ মামলার অন্যতম আইনজীবী সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন  জানান, আগামীকাল রোববার রায়ের সত্যায়িত কপি হাতে পেলে সোমবারের মধ্যেই আপিল করা হবেএখন আপিলের ড্রাফটিং চলছেপূর্ণাঙ্গ কপি পেলে গ্রাউন্ড চূড়ান্ত করা হবে


শেয়ার করুন

0 facebook: