আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ পণ্যে ক্যানসার ঝুঁকির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক কোম্পানি জনসন অ্যান্ড জনসনকে জরিমানা করেছেন দেশটির আদালত। তাদের পণ্য ব্যবহারের করে ওভারিয়ান ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগকারী ২২ নারীকে ৪৭০ কোটি ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৩৯ হাজার ৫১৬ কোটি টাকা) ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে মিসৌরি অঙ্গরাজ্যের একটি আদালত।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, জনসনের বেবি পাউডার ও কয়েকটি সামগ্রী ব্যবহারে ক্যানসারের ঝুঁকির বিষয় সম্পর্কে সতর্ক না করায় এই জরিমানা করেছেন আদালত। ওই ২২ নারীকে প্রাথমিকভাবে ৫৫ কোটি (বাংলাদেশি মুদ্রায় যার মূল্য ৪ হাজার ৬২৪ কোটি টাকা) ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া শাস্তিমূলক ক্ষতিপূরণ হিসেবে তাদেরকে দিতে হবে আরও ৪১০ কোটি ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩৪,৪৭১ কোটি টাকা)।
এ বিষয়ে জনসন অ্যান্ড জনসন কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা আদালতের এই রায়ে গভীরভাবে হতাশ। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার পরিকল্পনার কথা জানান তারা।
জনসন অ্যান্ড জনসন কোম্পানির ট্যালকম পাউডার ব্যবহারের কারণে ওভারিয়ান ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগ তোলেন ২২ জন নারী ও তার পরিবার। ২২ নারীর মধ্যে ছয়জন এরইমধ্যে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
আদালতে গত ছয় সপ্তাহ ধরে চলা শুনানিতে জীবিত থাকা ১৬ নারী ও ৬ মৃত নারীর পরিবারের সদস্যরা দাবি করেন, কয়েক দশক ধরে জনসনের বেবি পাউডার ও ট্যালকম পণ্যসামগ্রী ব্যবহারের কারণে তাদের শরীরে ওভারিয়ান ক্যানসারের সৃষ্টি হয়েছে। নারীদের আইনজীবীরা অভিযোগ করেন, জনসনের ট্যালকম পণ্যে যে অ্যাসবেস্টসের দূষণ রয়েছে তা ১৯৭০ সাল থেকেই কোম্পানি অবগত আছে; কিন্তু এরপরও তারা পণ্য ব্যবহারের ঝুঁকি সম্পর্কে ভোক্তাদের সাবধান করতে ব্যর্থ হয়েছে।
ট্যালকম পাউডার তৈরির প্রধান উপাদান ট্যালক একটি খনিজ পদার্থ। মাটিতে অ্যাসবেস্টসের কাছাকাছি অবস্থান থেকে এটি সংগ্রহ করা হয়। জনসন অ্যান্ড জনসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো, তাদের ট্যালকম পাউডারে অ্যাসবেস্টসের দূষণ রয়েছে, যা ক্যানসার সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। তবে জনসন অ্যান্ড জনসন তাদের পণ্যে অ্যাসবেস্টস থাকার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। কোম্পানিটির দাবি, তাদের পণ্য ব্যবহারে ক্যান্সার হওয়ার শঙ্কা নেই; তারা বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে ওই পাউডার তৈরি করছে। প্রতিষ্ঠানটি আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবে বলেও জানিয়েছে।
জনসনের আইনজীবী বলেন, বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে তাদের ট্যালকম পাউডার নিরাপদ এবং পণ্যে ক্যান্সার ছড়ানোর মতো ক্ষতিকারক কোনো উপাদান নেই। একই সঙ্গে আদালতের বিচারপ্রক্রিয়া অন্যায্য বলেও দাবি করেছে মার্কিন এই বহুজাতিক জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান।
এর আগে গত বছর, একই ধরনের অভিযোগকারী এক নারীকে চারশ ১৭ মিলিয়ন (৪১ কোটি ৭০ লাখ) ডলার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য জনসন অ্যান্ড জনসনকে নির্দেশ দেয় যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার একটি আদালত। একই বছর মিসৌরি অঙ্গরাজ্যের এক জুরি বোর্ড জরায়ুর ক্যান্সারে আক্রান্ত এক নারীকে ১১০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে জনসন অ্যান্ড জনসনকে নির্দেশ দেয়।
২০১২ সালে ভার্জিনিয়ার ৬২ বছরের নারী লইস স্লেম্প জরায়ুর ক্যান্সারে আক্রান্ত বলে ধরা পড়ে। এরপর তিনি কোম্পানিটির বিরুদ্ধে মামলা করেন। তিনি অভিযোগ করেন, বেবি পাউডার ও গোসলের বিভিন্ন প্রসাধন ব্যবহারে ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার কথা গোপন করেছে জনসন অ্যান্ড জনসন। তার আগেও একই ধরনের বেশ কয়েকটি মামলায় জরিমানার মুখে পড়ে কোম্পানিটি। এর মধ্যে তিনটি মামলায় ৭২,৭০ ও ৫৫ মিলিয়ন ডলার জরিমানা গুনতে হয় জনসন অ্যান্ড জনসনকে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে একই ধরনের আরও অন্তত নয় হাজার অভিযোগ আদালতে ঝুলছে।
খবর বিভাগঃ
আন্তর্জাতিক
0 facebook: