14 July 2018

ওমান থেকে টাকার অভাবে ফিরতে পারছেন না নারী শ্রমিকরা


স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ ওমানের সেফহোমে আটকে থাকা ১৫ বাংলাদেশি নারী শ্রমিক টাকার অভাবে দেশে ফিরতে পারছেন নাশ্রমিকদের পরিবারের অভিযোগ, নিজ খরচে দেশে ফিরতে বলেছেন দূতাবাসের কর্মকর্তারাএসব নারী শ্রমিকদের মধ্যে ১০ জনকে দেশে ফেরাতে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের পক্ষে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানানো হয়েছেএরই মধ্যে একজন নিজ খরচে দেশেও ফিরেছেনসংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে

ওমানে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের দ্বি‌তীয় সচিব (শ্রম) আনোয়ার হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নির্যাতনের শিকার হয়ে নয়, তারা নিজেরাই দেশে ফিরতে চানএর আগেও তারা নিজেরা মারামারি করেছে, পুলিশ তাদের সবাইকে আটক করেছেদূতাবাস তাদের উদ্ধারও করেছেসম্প্রতি ১০ জনকে দেশে ফেরানোর জন্য ব্র্যাকের পক্ষ থেকে আবেদন জানানো হয়েছেপ্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় বিষয়টি জানতে চাইলে আমরা জানিয়েছিফেরার প্রক্রিয়ায় রয়েছে তারা

ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগাম প্রধান শরিফুল হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সেফহোমে থাকা নারীদের আর্থিক অবস্থা ভালো নাদূতাবাস থেকে তাদের বলা হয়েছে, বিমান ভাড়ার টাকা দিলে তারা দেশে ফিরতে পারবেতাদের পরিবার আমাদের কাছে আবেদন করেছেআমরা তাদের ফেরত আনতে মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছি

গত জুনের শেষ দিকে ওমান থেকে নিজ খরচে দেশে ফেরত আসেন নারায়ণগঞ্জের হোসনা বেগমতিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সেফহোমের দুটি কোয়ার্টারে ৯৫ জন নারী শ্রমিক অবস্থান নেয়তারা সবাই দেশে ফিরতে চাইলেও টাকার অভাবে ফিরতে পারছেন নাকেউ কেউ পাঁচ মাস ধরে রয়েছেনদেশে ফেরত আসার সময় সেফহোমে ১৫ জন নারী শ্রমিক ছিলআমি দেশ থেকে টাকা সংগ্রহ করে ৯০ রিয়াল জরিমানা দিয়ে এবং ৮০ রিয়ালে টিকেট কেটে দেশে ফিরে এসেছি

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশে ফিরতে না পারা নারীদের অনেকেই আবার নতুন করে কাজে যোগ দিতে বাধ্য হয়েছেনহোসনা বেগম অভিযোগ করেন, ‘চুক্তি অনুযায়ী নিয়োগকর্তা তাকে প্রশিক্ষণ না দিয়েই কাজে পাঠায়সে কারণে গৃহকর্তার নির্যাতনের শিকার হতে হয় তাকেএক মাস কাজ না করেই পালিয়ে আশ্রয় নেন সেফহোমেতারপরেও তাকে জরিমানা দিতে হয়েছে ওমানের সেফহোমে থাকা নারী গৃহকর্মী শিরিনা আক্তারের বোন নারায়ণগঞ্জের মমতাজ আক্তার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার বোনের সঙ্গে গতকাল (বুধবার) কথা হয়েছেসে দেশে আসার জন্য কান্নাকাটি করছেদূতাবাস থেকে বলা হয়েছে, বিমানভাড়া দিয়ে তাকে দেশে ফিরতে হবেকিন্তু তার কাছে এত টাকা নেইতিনি জানান, দূতাবাসের কর্মকর্তা ছুটিতে দেশে যাবেনসে কারণে তার দেশে ফেরা আরও দেরি হতে পারেদ্রুত ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি

দূতাবাস গৃহশ্রমিকদের নিজ খরচে দেশে ফেরার কথা বলেছেন কিনা জানতে চাইলে আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘একজন গৃহকর্মীকে ওমানে পৌঁছাতে দেড় লাখেরও বেশি টাকা খরচ করেন নিয়োগকর্তাতিন মাসের আগে কেউ ফেরত যেতে চাইলে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ তখন জানায়- টাকা দিয়ে দেশে ফিরে যেতে হবেএ অবস্থায় আমরা সমস্যায় পড়িশেষ পর্যন্ত যেকোনোভাবে তাদের দেশে ফেরত পাঠাই

জানা গেছে, ভাগ্য বদলাতে গত ৫ মার্চ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) ছাড়পত্র নিয়ে একমাত্র সন্তানকে রেখে ওমান পাড়ি জমান নারায়ণগঞ্জের শিরিনা আক্তারসেখানে যাওয়ার সপ্তাহখানেকের মধ্যেই নিয়োগকর্তার মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন তিনিএরপর দেশে ফিরতে চাইলেও টাকার অভাবে ফিরতে পারেননি

শিরিনের মতো যারা ফিরে আসতে চাইছেন তারা নির্যাতনের কারণে ফিরে আসছেন কিনা জানতে চাইলে দূতাবাসের কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘নির্যাতনের কারণে সবাই ফেরত যেতে চায় বিষয়টি ঠিক নয়কেউ কেউ নির্যাতনের কারণে ফেরত যেতে চাইলেও বেশিরভাগই ভালো লাগে নাবলে চলে যেতে চায়গৃহকর্মীরা এখানে (ওমানে) আসার পর কয়েকদিন যেতে না যেতেই ভালো না লাগলে তারা চলে যেতে চায়অনেকেই বাচ্চা রেখে চলে আসেছেলের জন্য ফেরত যেতে চায়বাংলাদেশিরা নিজেরা মারামারিতে ঝামেলা সৃষ্টি করে নিজেরাই চলে যেতে চায়তখন নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ যেতে দেয় না।  কারণ একজন গৃহকর্মী আনতে বাংলাদেশি দেড় লাখের বেশি টাকা লাগেতখন এই টাকার দাবি করে তারাএ সময় নির্যাতনসহ বিভিন্ন অভিযোগ করেন গৃহকর্মীরা এই দশ গৃহকর্মীর ফিরে আসার সুনির্দিষ্ট কারণ জানতে চাইলে আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘কয়েকদিন আগে এরা নিজেরা মারামারি করেকিন্তু দূতাবাসকে তারা কেউ জানায়নিএকজন পুলিশের কাছে গিয়ে অভিযোগ করলে সবাইকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়আমরা এই দশজনকে পুলিশের কাছ থেকে উদ্ধার করে সেফহোমে রাখিএখন এরা ফেরত যেতে চাইছে

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওমানে গৃহকর্মীদের উদ্ধারে বাংলাদেশ দূতাবাসের কোনও এখতিয়ার নেইতাই নির্যাতিতারা নিয়োগকর্তার বাড়ি থেকে সাধারণত পালিয়ে আশ্রয় নেন দূতাবাসের সেফহোমেআবার অনেক সময় পুলিশের হাতে ধরাও পড়েনসেক্ষেত্রে দূতাবাসের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করে তাদেরকে হেফাজতে নেওয়া হয়

জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর দেওয়া তথ্যমতে, এ বছরের মে মাস পর্যন্ত ওমানে কাজের উদ্দেশ্যে গেছেন ৩৩ হাজার ৪০৫ জন গৃহকর্মীএর মধ্যে ৪ হাজার ৮১৪ জন নারী শ্রমিক রয়েছেন১৯৯১ সাল থেকে এ পর্যন্ত সর্বমোট ৬৯ হাজার ৪১৬ জন নারী শ্রমিক ওমানে কাজের উদ্দেশ্যে গেছেনএর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক নারী শ্রমিক ওমান গেছেন ২০১৫ সালেএরপর থেকে ওমানগামী নারী শ্রমিকের সংখ্যা এক-চতুর্থাংশে নেমে আসে


শেয়ার করুন

0 facebook: