নয়ন চ্যাটার্জি।। ডেনমার্কের জিল্যান-পোস্টেন পত্রিকায় ইসলাম ধর্মের শেষ নবী মুহম্মদ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে নিয়ে ব্যঙ্গ করা অঙ্কিত কার্টুনের কথা মনে আছে মুসলমান?
২০০৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ১২টি কার্টুন ছাপা হয়েছিলো মুসলমানদের সর্বশেষ নবী (ছল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম)কে ব্যঙ্গ করে। সম্ভবত ২০০১ এর আমেরিকান সম্রাজ্যবাদের ‘ওয়্যার অন টেরর’ শুরুর পর এটাই মুসলমানদের ধর্মকে ব্যঙ্গ করার সূচনা। সেই ডেনমার্কের হাত ধরে একে একে অন্যান্য অমুসলিম রাষ্ট্রগুলো (নেদারল্যান্ডের গ্রিট উইল্ডারর্স, ফ্রান্সের শার্লি হেবদো, অস্ট্রেলিয়ার ‘দ্য উইকঅ্যান্ড অস্ট্রেলিয়া’) মুসলমানদের শেষ নবীকে নিয়ে ব্যঙ্গ ছবি ও মুভি তৈরী শুরু করে।
আমার মনে আছে, সে সময় সারা বিশ্বের মুসলমানরা এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করেছিলো। কিন্তু তারপরও মন গলেনি ইসলাম বিদ্বেষী ডেনমার্ক সরকারের। এ ঘটনায় তারা কাউকে শাস্তি দেয়নি। সারা বিশ্বজুড়ে ডেনমার্কের দূতাবাসের সামনে মুসলমানরা প্রতিবাদ করে। পুরো বিশ্বে এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে কমপক্ষে ২০০ মুসলমান নিহত হয়।
এ ঘটনায় সারা বিশ্ব জুড়ে মুসলমানদের মধ্যে ড্যানিশ পণ্য বর্জনের ডাক উঠে। ডানো (অরলা ফুড), নভো নরডিস্ক (ওষুধ কোম্পানি) ও ড্যানিস্কো বর্জনের ডাক দেয় মুসলমানরা। এ কারণে ২০০৬ এর ফেব্রুয়ারী থেকে জুনের মধ্যে ডেনমার্কের মোট রফতানি ১৫.৫% শতাংশ নেমে যায়। কয়েক মাসের মধ্যে ডেনমার্কের ক্ষতি হয় প্রায় ১৩৪ মিলিয়ন ইউরো বা ১৩শ’ কোটি টাকা। আমার মনে আছে, ঐ সময় বাংলাদেশের মুসলমানরাও ড্যানিশ পন্য বর্জনের ডাক দিয়েছিলো।
কিন্তু আজকে আমার অবাক লাগে, যখন দেখি বাংলাদেশের তরল দুধ নিয়ে এত বড় একটা ষড়যন্ত্রের ঘটনা ঘটে গেলো, যার পেছন থেকে কলকাঠি নাড়লো ডেনমার্কের ডানো (অরলা ফুড)। অথচ হুজুগে মাতাল মানুষ সেই ডেনমার্কের ডানো (অরলা ফুড) ষড়যন্ত্রকেই সমর্থন দিলো !!
এই অরলা (ডানো) বেশ কয়েক মাস যাবত দৈনিক প্রথম আলো, কিছু ভার্সিটির শিক্ষক এবং নিরাপদ খাদ্যের কিছু সদস্য নিয়ে দেশীয় দুগ্ধ শিল্পের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছিলো, মিটিং সেমিনার করছিলো। সর্বশেষ দেশী দুগ্ধ খামারীরা প্রতিবাদ করে সরকারকে চাপ দিয়ে বিদেশী গুড়া দুধের উপর ট্যাক্স ৫ থেকে ১০% করার পর থেকেই তাদের ষড়যন্ত্র তুঙ্গে উঠে। তারা হাইকার্টের মাধ্যম দিয়ে দেশী দুগ্ধ শিল্পকে ধ্বংস করতে ষড়যন্ত্র চালায়। যার ফল আপনারা দেখেছেন হাইকোর্টের অর্ডারে দেশী দুগ্ধ কোম্পানি বন্ধের কারণে ৩ দিনে খামারীদের ক্ষতি হয়ে গেছে প্রায় ১০০ কোটি টাকা (সূত্র: সময় নিউজ)।
ভাবতেই অবাক লাগে যে, ২০০৫ সালে নবীকে নিয়ে ব্যঙ্গ করার কারণে ডেনমার্কের অরলা (ডানো)কে যে মুসলমানরা নাকানি চুবানি খাওয়ালো, সেই ডানো কি না গুজব রটিয়ে বাংলাদেশের ১ কোটি লোকের শিল্পকে ধ্বংস করে দিতে চায়, দেশী দুধ বিক্রি বন্ধ করে তাদের ডানোর বিক্রি বাড়াতে চায়!
এখন তো খুব ভালো হলো- মুসলমানরা বেশি করে ডানো কিনবে, আর সেই ডানোর বিক্রির লভ্যাংশ দিয়ে ডেনমার্ক আরো বেশি করে ব্যঙ্গ কাটুর্ন আর সিনেমা বানাবে। মুসলমানরাই হবে নবীর ব্যঙ্গ কার্টন ছাপানোর আর্থিক যোগানাদাতা। উফ! ভাবতেই ভালো লাগে। একটা শ্লোগান হবে ফ্রান্সঃ- “এক গ্লাস ডানো দুধ খাও, নবীর একটা ব্যঙ্গ কার্টুনের সওয়াব নাও।”
0 facebook: