ভ্রমণ ও পর্যটন ডেস্কঃ অনেকেই বিভিন্ন কাজে অথবা বেড়াতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চট্রগ্রাম
শহরে আসেন কিন্তু জানেন না শহরের কোথায় কোথায় দর্শনীয় স্থান রয়েছে এবং সেখানে কিভাবে
যাবেন কিংবা খরচ কেমন পড়বে!
কতটুকু
জানি আমরা চট্টগ্রাম সম্পর্কে?
কোথায় কি পাওয়া যায়? কোথায় কি দেখার আছে? এসব বলতে
গেলে ৫০০০ পৃষ্ঠার প্রবন্ধতেও কুলাবে না। আসুন না আজকে খুব সংক্ষেপে জেনে নেই চট্টগ্রাম
শহরের ভিতর ও কাছাকাছি কিছু দর্শনীয় স্থান সমূহ নাম।
চট্টগ্রাম
শহরের ভিতর দর্শনীয় স্থান সমূহঃ (টিকেট ছাড়া)
১. পতেঙ্গা
সমুদ্র সৈকত
২. গোল্ডেন
বীচ পতেঙ্গা
৩. ১৫
নং নেভাল এভেন্যু
৪. বিমান
বন্দর
৫. ফইল্লাতলী
সাগরের পাড় ও ম্যানগ্রোভ বন
৬. পোট্রের
টোল সড়ক
৭. রেলওয়ে
জাদুঘর
৮. ঝাউতলা
আবহাওয়া অফিস ও ব্র্যাক এর পাহাড়
৯. বাটালী
পাহাড় (বিজয় স্তম্ভ)
১০. জিলাপী
পাহাড়
১১. সিআরবি
পাহাড়
১২. ডি
সি হিল
১৩. কর্ণফুলী
নতুন ব্রীজ
১৪. ফিরিঙ্গিবাজার
ব্রীজ ঘাট/ফিসারী ঘাট (নৌ-ভ্রমন পিয়াসুদের জন্য)
১৫. জাতীয়
সংঘ পার্ক (পাচলাইশ)
১৬. বিপ্লব
উদ্যান (২নং গেইট)
১৭. সানসেট
পয়েন্ট ভাটিয়ারী ও ভাটিয়ারী লেক
১৮. ওয়ার
সিমেট্রি
চট্টগ্রাম
শহরের ভিতর দর্শনীয় স্থান সমূহঃ (টিকেট/অনুমতির প্রয়োজন)
১. ফয়েজ
লেক
২. চিড়িয়াখানা
৩. মিনি
বাংলাদেশ
৪. কাজীর
দেওরী শিশু পার্ক
৫. আগ্রাবাদ
কর্ণফুলী শিশু পার্ক
৬. বাটারফ্লাই
পার্ক
৭. ভাটিয়ারী
গলফ ও কান্ট্রি ক্লাব (সেনাবাহিনীর অনুমতির প্রয়োজন)
৮. জাতিতাত্তিক
জাদুঘর আগ্রাবাদ
৯. জিয়া
সৃতি জাদুঘর, সার্কিট
হাউস।
শহরের
কাছাকাছি একদিনের ভ্রমন এ যাওয়া সম্ভব এমন দর্শনীয় স্থান সমূহঃ
১. কাপ্তাই
২. রাঙ্গামাটি
৩. বান্দরবন
৪. সীতাকুন্ড
৫. মুহুরি
প্রজেক্ট ফেনী
৬. মহামায়া
রাবার ডেম প্রকল্প মিরসরাই
৭. সহস্র
ধারা ঝর্না বড় দারোগাহাট,
সিতাকুন্ড
৮. পারকি
সমুদ্র সৈকত, আনোয়ারা
৯. বাশখালী
বামের ছরা ইকোপার্ক
১০. চকোরিয়া
ডুলাহাজরা সাফারী পার্ক
কত সময়
লাগবে কিংবা যাতায়তের ভাড়া কত পড়বে সব একে একে জেনে নেয়া যাক।
সমুদ্র
নগরী চট্রগ্রাম, এখানে
রয়েছে বেশ কয়েকটি সমুদ্র সৈকত এবং ঘুরে দেখার মত অসংখ্য প্রাকৃতিক স্পট। চট্রগ্রামের
অসাধারণ পাহাড় এবং লেক আপনার মনকে ভরিয়ে তুলতে যথেষ্ট। আপনি যদি শরের আশেপাশে বিভিন্ন
যায়গায় ঘুরে দেখতে চান তবে চলুন এসব যায়গায় কিভাবে যাবেন শহর থেকে যেতে কত সময় লাগবে
কিংবা যাতায়তের ভাড়া কত পড়বে সব একে একে জেনে নেয়া যাক।
ভাটিয়ারী
গলফ কোর্স এবং লেকঃ
চট্রগ্রাম
শহর সিটি গেইট থেকে মাত্র ২০ মিনিটের দূরত্বে ভাটিয়ারীতে রয়েছে অসাধারণ প্রাকৃতিক রূপে
বৈচিত্র্য। এখানে আপনি সব কিছুই পাবেন, পাহাড়, কাক চক্ষুর মত স্বচ্ছ লেকের পানি, সেনাবাহিনী
নিয়ন্ত্রিত গলফ কোর্স। সম্পূর্ণ অঞ্চলটি সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত এবং একই যায়গায় চট্রগ্রাম
সেনানিবাস অবস্থিত বলে এখানে নিরাপত্তা নিয়ে আপনাকে চিন্তিত হতে হবে হবেনা। বর্ষা কালে
ভাটিয়ারী লেকের উপচে পড়া পানি আপনাকে শিহরিত করবে একই সাথে পাহাড় এবং পাহাড়ের গায়ে
সূর্যাস্ত আপনার মনকে ভরিয়ে দিতে যথেষ্ট। আপনি চাইলে লেকে নৌকা চড়তে পারবেন এবং নির্দিষ্ট
টাকা দিয়ে লেকের পানিতে ছিপ দিয়ে মাচ শিকার করতে পারবেন। মোট কথা শহরের খুব কাছেই আপনার
সময়টি অসাধারণ কাটবে। এছাড়া এখান থেকে আপনি চলে যেতে পারবেন ভাটিয়ারী সান সেট পয়েন্টে।
সেখানে সূর্যাস্ত দেখার অসাধারণ সুবিধা রয়েছে।
যেভাবে
যাবেন ভাটিয়ারীঃ
চট্রগ্রাম
শহর থেকে আপনি সরাসরি পারিবারিক কিংবা একক ভাবে ভাটিয়ারী যেতে সিএনজি অটো রিক্সা ভাড়ায়
পাবেন ভাড়া দেড়’শ
থেকে দুই’শ
টাকা নিবে। আর পাবলিক বাসে যেতে হলে আপনার জন প্রতি ১৫ থেকে ২০ টাকা নিবে বাস পাওয়া
যাবে নগরীর প্রবেশ মুখ অলংকার সিটি গেইট এলাকা থেকেই।
সীতাকুণ্ড
ইকো পার্কঃ
চট্রগ্রাম
শহর থেকে ৪০ মিনিটের পথ সীতাকুণ্ড,
সেখানেই রয়েছে অসাধারণ এক পর্যটন স্পট। আপনি চাইলে ঘুরে আসতে পারেন
এখান থেকে। সীতাকুণ্ডে আপনি দেখতে পাবেন দুইটি ঝর্ণা, এদের
একটির নাম সহস্র ধারা ঝর্ণা এবং অন্যটি শত সহস্র ধারা ঝর্না। ঝর্না সমূহ আপনার মন ভরিয়ে
দিতে সক্ষম। যদিও ঝর্ণার ধারে যেতে হলে আপনাকে পাহাড়ি রাস্তা বেয়ে উপরে এবং নিচে নেমে
যেতে হবে পাড়ি দিতে হবে দুর্গম পথ। আপনি যদি এডভেঞ্চার প্রিয় হন তবে অবশ্যই এই সুযোগ
লুফে নিতে পারেন। এছাড়াও সীতাকুণ্ড ইকো পার্কে রয়েছে অসংখ্য দুর্লভ গাছের সমষ্টি যা
আপনার বৃক্ষ বিষয়ে ধারণাকে শাণিত করবে, একই সাথে এখানকার উঁচু উঁচু পাহাড় আপনাকে
প্রাকৃতিক অনন্য অনুভূতি দিবে। চলুন
জেনে নি কিভাবে যাওয়া যাবে সীতাকুণ্ডঃ শহর থেকে আপনি নিজ উদ্যোগে পারিবারিক ভাবে সিএনজি
অটো রিক্সাতে করে ঘুরে আসতে পারবেন ভাড়া নিবে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। এছাড়া সেখানে ফিরতি
পথে গাড়ি পাওয়া যাবে খুব সহজেই। তবে রিজার্ভ নিয়ে গেলে পাহাড়ে নিজেদের গাড়ি দিয়েই উঠে
গেলেন এবং ঝর্ণার কাছে চলে গেলেন সময় নষ্ট হলনা। আপনি যদি পাবলিক বাসে যেতে চান তবে
আপনাকে নগরির অলংকার কিংবা এ কে খান মোড় থেকে বাসে উঠতে হবে ভাড়া নিবে ২০ টাকা প্রতি
জন। আর যেহেতু পার্কটি বাংলাদেশ বন বিভাগ নিয়ন্ত্রণ করে সেহেতু এতে প্রবেশ করতে নির্ধারিত
প্রতি জন ২০ টাকা করে টিকেট কেটে আপনাকে প্রবেশ করতে হবে।
মিরসরাই
মহামায়া লেকঃ
অনেকের
ধারণা নেই কত সুন্দর প্রাকৃতিক রূপে সেজে আছে চট্রগ্রামের মহামায়া লেক। আপনি যদি এই
যায়গায় না যান তবে মনে করবেন আপনার চট্রগ্রাম সফরটাই বৃথা! মহামায়া লেক একটি প্রাকৃতিক
লেক বিশাল এলাকা জুড়ে পাহাড়ি লেকের পানি দিয়ে এই এলাকা গঠিত। এখানে রয়েছে অসাধারণ পাহাড়ি
গুহা এবং ঝর্ণা। আপনি বোটে করে লেক পার হয়ে দূর পাহাড়ে অবস্থিত ঝর্ণার শীতল পানির ছোঁয়া
নিয়ে আসতে পারেন। মহামায়া লেকের ঝর্ণার পানিতে গোসল করার অনুভূতি অসাধারণ। এই প্রকল্প
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রণে, এটি লেকের পানি থেকে পার্শ্ববর্তী এলাকার
সেঁচের পানি প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে এবং ভবিষ্যতে জল বিদ্যুৎ প্রকল্প করার জন্য এই প্রোজেক্ট
হাত নিয়েছে।
যেভাবে
যাবেন মিরসরাই মহামায়া লেকেঃ আপনি চট্রগ্রাম নগরীর মাদার বাড়ি এলাকা থেকে সরাসরি বাস
সার্ভিসে করে চলে যেতে পারেন মহামায়া লেকে। কিংবা অলংকার সিটি গেইট থেকে যেকোনো লোকার
বাসে করেও যেতে পারবেন সময় লাগবে ১ ঘন্টা। ভাড়া ৪০ থেকে ৭০ টাকা। আর নিজে যদি আলাদা
যেতে চান তবে সিএনজি অটো রিক্সা কিংবা মাইক্রোবাস মিনি কারে করে যেতে পারবেন সেক্ষেত্রে
ভাড়া আশা যাওয়া ১০০০ থেকে ১৪০০ নিতে পারে। শহর থেকে গাড়িতে আপনাকে মিরসরাই থানার ঠাকুর
দিঘী নামক বাজারে নামতে হবে। সেখান থেকে পায়ে হাটা পথ, সাথে
গাড়ি থাকলে কথাই নেই।
ফ’য়েজ লেকঃ
আপনি
চাইলে নগরীর একেবারে কেন্দ্রে অবস্থিত বিখ্যাত ফ’য়েজ লেকে ঘুরে আসতে পারবেন। সেখানে কনকর্ড
গ্রুপের আধুনিক এমিউজমেন্ট ব্যবস্থা আপনাকে বিনোদন দিতে যথেষ্ট। এছাড়া একই এলাকায় রয়েছে
চট্রগ্রাম চিড়িয়া খানা। চাইলে বাঘ ও সিংহের গর্জন শুনে আসতে পারবেন। যেভাবে যাবেন ফ’য়েজ লেকেঃ
ফ’য়েজ
লেকে যেতে হলে শহরের ভেতরেই যেকোনো রিক্সা অটোরিক্সা নিয়ে চলে যেতে পারেন নগরীর পাহাড়তলী
এলাকায়।
কালুর
ঘাট মিনি বাংলাদেশঃ
আপনি
যদি বাংলাদেশের সকল স্থাপনা এক সাথে একটি পার্কে দেখতে চান তবে অবশ্যই চলে আসুন কালুর
ঘাটে অবস্থিত মিনি বাংলাদেশে। এখানে কি নেই? সংসদ ভবন থেকে শুরু করে কান্তজির মন্দির, আহসান
মঞ্জিল, সুপ্রিমকোর্ট, ষাট গুম্বজ
মসজিদ ইত্যাদি। মিনি বাংলাদেশে বিভিন্ন স্থাপনার পাশাপাশি রয়েছে চট্রগ্রামের সংস্কৃতির
নান্দনিক উপস্থাপনা।
যেভাবে
যাবেন মিনি বাংলাদেশেঃ শহরের যেকোনো প্রান্ত থেকে সিএনজি অটো রিক্সা ড্রাইভারকে কালুরঘাট
মিনি বাংলাদেশ পার্ক নিয়ে যেতে বললেই হবে। ভাড়া স্থান ভেদে ১৫০ থেকে ২০০ নিবে। আপনি
যদি সিটি বাসে করে যেতে চান তবে শহরের যেকোনো প্রান্ত থেকে কালুরঘাটের বাসে উঠলেই পার্কের
সামনে এনে নামিয়ে দিবে। ভাড়া অবস্থান ভেদে ৭ থেকে ২০ টাকা। পার্কের প্রবেশ ফি ১৫০ টাকা।
যেকোনো সরকারী ছুটি ছাড়া সব দিন খোলা থাকে পার্ক।
ওয়ার
সিমেন্ট্রিঃ
দ্বিতীয়
বিশ্ব যুদ্ধের সময় চট্রগ্রামে নিহত নাম না জানা বিভিন্ন দেশের শহীদদের সমাধি স্থান
এই ওয়ার সিমেন্ট্রি। এটি চট্রগ্রামের মেহদীবাগ গোল পাহাড় এলাকায় অবস্থিত। এখানে প্রবেশ
করতে কোন ফি এর দরকার হয়না।
অসাধারণ
সাজানো গোছানো পরিবেশ আপনার মন ভোরিয়ে দিবে। চট্রগ্রাম শহরের যেকোনো যায়গা থেকে রিক্সা
কিংবা অটো রিক্সায় চড়ে আপনি মেহদীবাগের এই ওয়ার সিমেন্ট্রিতে ঘুরে আসতে পারবেন।
পতেঙ্গা
সৈকত এবং নেভাল সৈকতঃ
অনেকেই
চট্রগ্রামের পতেঙ্গা সৈকতের কথা শুনেছেন তবে যারা যাননি কিংবা যেতে আগ্রহী তারা খুব
সহজেই চলে যেতে পারেন এই অসাধারণ সৈকতে। শহরের ভেতরেই এই সৈকতের অবস্থান। যেকোনো বাস
মিনিবাস কিংবা অটো রিক্সায় করে চলে যেতে পারেন এই সৈকতে। বাসে যেতে ২০ থেকে ২৫ টাকা
স্থান বিশেষে ভাড়া লাগবে অটো রিক্সায় যেতে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা লাগবে স্থান ভেদে।
পার্কি
সৈকতঃ
সৈকতের
নগরী চট্টগ্রাম অনেক সৈকতের মাঝে এটি আরেকটি প্রাকৃতিক সৈকত যদিও এখানে যেতে হলে আপনাকে
চট্রগ্রাম শহরের কর্ণফুলি নদী পার হয়ে অন্য পাড়ে যেতে হবে। এখানে রয়েছে লাল কাঁকড়া, ঝাউ বোন
সহ অসংখ্য প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য।
যেভাবে
পার্কি সৈকতে যাবেনঃ প্রথমে সিএনজি চালক’কে বলুন পতেঙ্গা ১৫ নাম্বার যেটিতে আপনাকে
নিয়ে যেতে এবং সেখান থেকে বোটে করে কর্ণফুলি নদী পার হয়ে অন্য পারে যেতে হবে। সেখানে
অপেক্ষমাণ অটো রিক্সা ড্রাইভারকে পার্কি সৈকতে নিয়ে যেতে বললেই নিয়ে যাবে। ভাড়া ১০০
টাকা। একই পথে ফিরে আসতে হবে শহরে। শহর থেকে পার্কি সৈকতে যেতে মোট সময় লাগবে ঘন্টা
খানেক। আপনি যদিও কর্ণফুলি তৃতীয় সেতু দিয়ে সরাসরি যেতে পারবেন পার্ক সৈকতে তবে সে
ক্ষেত্রে সময় এবং অর্থ দুই বেশি যাবে। আজ এটুকুই সামনে আরও নতুন নতুন জাগায় ঘুরে আসার
গাইড লাইন পেতে স্বদেশবার্তা-এর সাথেই থাকুন।
খবর বিভাগঃ
চট্টগ্রাম বিভাগ
ভ্রমণ ও পর্যটন
0 facebook: