প্রতিকি ছবি |
স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ ২০১৮ সালের
এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা আগামী ২ এপ্রিল থেকে একযোগে শুরু হচ্ছে সারাদেশে। এ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে অন্তত ডজনখানেক
নতুন উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় মনে করছে, কার্যকরী
হবে এসব সিদ্ধান্ত। যদিও প্রশ্ন ফাঁস
হবেই না- এমন শতভাগ গ্যারান্টি দিতে পারেনি এ মন্ত্রণালয়।
অন্যদিকে, গত এসএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার পর কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলমগীরের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে- এসএসসিতে প্রশ্নপত্র আংশিক ফাঁস হয়েছে। এ ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র পেয়েছে মোট পরীক্ষার্থীর শূন্য দশমিক ২৯ শতাংশ।
বিষয়টি স্বীকার করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন সমকালকে বলেন, একটি পরীক্ষার শতভাগ প্রশ্ন ফাঁস হলেই কেবল বলা যায়- প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। তারা তদন্ত করে দেখেছেন, ১০০ নম্বরের মধ্যে মাত্র সাড়ে ৭ নম্বরের প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। অথচ গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে অন্যভাবে। সচিব বলেন, তারা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে পেয়েছেন, মোট পরীক্ষার্থীর মাত্র দশমিক ২৯ শতাংশ ফাঁস হওয়া প্রশ্ন পেয়েছে। সংখ্যায় তারা কমবেশি ৫ হাজারের মতো। অথচ মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১৯ লাখ। তিনি বলেন, প্রশ্ন ফাঁসের দায় মন্ত্রণালয় থেকে আমরা এড়িয়ে যাচ্ছি না। শুধু প্রকৃত তথ্য তুলে ধরতে চাই। সোহরাব হোসাইন বলেন, পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় শিক্ষা বোর্ডগুলোর অধীনে। আইন অনুসারে সেগুলো স্বায়ত্তশাসিত। মন্ত্রণালয়ের কাজ শুধু নীতি নির্ধারণ করা। অথচ এসএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্মম-নিষ্ঠুরভাবে সমালোচনা করা হয়েছে গণমাধ্যমে।
সচিব বলেন, এসএসসির প্রশ্ন ফাঁসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা লেনদেনের উৎস খুঁজতে শুরু করেছেন তারা। বাংলাদেশ ব্যাংক ও মন্ত্রণালয় মিলে এ কাজ শুরু করেছে।
মো. সোহরাব হোসাইন আরও বলেন, আর কয়েক দিন পর এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে। তারা বহু ব্যবস্থা নিয়েছেন। প্রশ্ন ফাঁস হবে না- এমন গ্যারান্টি কেউ দিতে পারে না। তবে তারা চেষ্টা করে যাচ্ছেন ফাঁস ঠেকাতে।
বেশ কয়েক বছর ধরে ১ এপ্রিল থেকে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হলেও এবার এপ্রিলের প্রথম দিন ইস্টার সানডের বন্ধ থাকায় ২ এপ্রিল থেকে এ পরীক্ষা শুরু হবে। পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে অবশ্যই পরীক্ষার হলে গিয়ে আসনে বসতে হবে।
পরীক্ষার শুরুর মাত্র ১৫ দিন আগে এবার ঢাকা শিক্ষা বোর্ড শুধু ঢাকা মহানগরীতেই ২১টি কলেজের পরীক্ষাকেন্দ্র বদলে দিয়েছে। কী কারণে আকস্মিক এই কেন্দ্র বদল, তা বোর্ড থেকে সুস্পষ্ট করা না হলেও বিভিন্ন অভিযোগের কারণে যে করা হয়েছে, তা সুনিশ্চিত। যেসব প্রতিষ্ঠানের কেন্দ্র বদল হয়েছে সেগুলো হলো- তেজগাঁও মহিলা কলেজ, বশির উদ্দিন আদর্শ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, গ্রিন ফিল্ড কলেজ, আল-হেরা কলেজ, হাজী আব্দুল আউয়াল কলেজ, খিলগাঁও আইডিয়াল কলেজ, আল ফুরকান ইংলিশ হাই স্কুল অ্যান্ড গার্লস কলেজ, ফজলুল হক মহিলা কলেজ, পাইওনিয়ার কলেজ, মোহাম্মদপুর আদর্শ কলেজ, উত্তরা পাবলিক কলেজ, ন্যাশনাল পাবলিক কলেজ, মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল ও কলেজ, উত্তরা রেসিডেনসিয়াল কলেজ, নতুন পল্টন লাইন স্কুল ও কলেজ, কুইন্স কলেজ, কোডা কলেজ, ইমিনেন্স কলেজ, রেসিডেনসিয়াল ল্যাবরেটরি কলেজ, উত্তরা কমার্স কলেজ, কামারপাড়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ডেমরা কলেজ।
এদিকে, এইচএসসির প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে অন্তত ১২টি নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। ট্রেজারি থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত প্রশ্নপত্র নিয়ে যেতে এবারই প্রথম ম্যাজিস্ট্রেটদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নতুন করে একাধিক সেট প্রশ্ন ছাপানো হয়েছে। পরীক্ষার দিন কোন সেটে পরীক্ষা হবে, তা নির্ধারণ করা হবে পরীক্ষার কেন্দ্রে। ছাপা হওয়া প্রশ্নপত্রের সব সেটের প্যাকেট পরীক্ষা শুরুর আগমুহূর্তে কড়া নিরাপত্তায় কেন্দ্রে পাঠানো হবে। আধা ঘণ্টা আগে নির্ধারিত প্রশ্নপত্রের সেট দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের জানিয়ে দেওয়া হবে। মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ সূত্র জানায়, অতীতের অভিজ্ঞতায় এবার সুনির্দিষ্ট কিছু কেন্দ্রও চিহ্নিত করা হয়েছে, যেগুলো থেকে পরীক্ষার আগেই প্রশ্ন বাইরে চলে আসার অভিযোগ রয়েছে। তাই এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় প্রায় দুই হাজার ৫০০ কেন্দ্র থেকে শতাধিক কেন্দ্র কমানো হয়েছে। তা ছাড়া প্রশ্ন বিতরণ পদ্ধতিতেও পরিবর্তন আসছে।
একই সঙ্গে কারিগরি শিক্ষা ও মাদ্রাসা বিভাগ থেকে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডকে চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে, মন্ত্রণালয়ের পূর্ব অনুমোদন ব্যতিরেকে মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনো পরীক্ষাকেন্দ্রের অনুমতি না দিতে। পাশাপাশি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষাকেন্দ্র স্থাপন সংক্রান্ত বর্তমান নীতিমালাকেও হালনাগাদ করার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে অনলাইনে নজরদারি :আসন্ন এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় যাতে ইন্টারনেট ব্যবহার করে কেউ প্রশ্নপত্র ফাঁস করতে না পারে, সে জন্য আগেভাগেই ইন্টারনেটে নজরদারি বাড়িয়েছে পুলিশ। এ বছরই এসএসসি ও সমমানের প্রতিটি পরীক্ষায় টাকার বিনিময়ে প্রশ্নপত্র বিক্রি করেছে ফেসবুকের কয়েকশ' গ্রুপ, যা আগে হয়নি। এ রকম কিছু গ্রুপে ক্রেতা সেজে ঢুকে প্রশ্নপত্র কিনবেন গোয়েন্দারা। তার পর লেনদেনে ব্যবহূত বিকাশ, রকেট নম্বরের সূত্রে ধরবেন অপরাধীদের।
0 facebook: