আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ কোটি কোটি ডলারের খাদ্য ও অন্যান্য ত্রাণ সহায়তা আসছে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনে। তার পরও দেশটির তিন কোটি জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশিই অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে। দুর্ভিক্ষের কবলে এক কোটিরও বেশি নাগরিক।
হাসপাতালে হাসপাতালে হাজার হাজার অস্থি-চর্মসার শিশুর মুখ। ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাঁদতেও পারছে না। প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে ত্রাণ সহায়তা খাদ্য কোথায় যাচ্ছে। জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের (ডব্লিউএফপি) অভিযোগ, ত্রাণের বেশির ভাগ খাদ্য চুরি হয়ে যাচ্ছে। সৌদি ও মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট ও সরকারবিরোধী হুথি বিদ্রোহী গোষ্ঠী উভয় পক্ষই রয়েছে এই চুরির পেছনে।
কখনও পথের মাঝে অস্ত্র ঠেকিয়ে ত্রাণের গাড়ি লুট আবার কখনও খাদ্য গুদাম থেকেই হাওয়া করে দিচ্ছে। সেই খাদ্য কালোবাজারে বিক্রি করছে চড়া দামে। কিন্তু ক্রয় ক্ষমতা না থাকায় খাবার মিলছে না দরিদ্রদের। সোমবার ও মঙ্গলবার এপি, বিবিসি ও সিবিসির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে লাখ লাখ ক্ষুধার্ত মানুষের মুখের গ্রাস ডাকাতির এ চিত্র।
ইয়েমেনজুড়ে ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের পাঁচ হাজারের মতো খাদ্য বণ্টন কেন্দ্র রয়েছে। এসব কেন্দ্র থেকে প্রতি মাসে এক কোটি নাগরিককে খাদ্য সহায়তা দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করে আসছে। কিন্তু সংস্থাটি বলছে, মাত্র ২০ শতাংশ বণ্টন কেন্দ্র চালু রয়েছে। খাবার পাচ্ছে সেই অনুপাতেই অর্থাৎ এক কোটি মানুষের জায়গায় মাত্র ২০ লাখ। জাতিসংঘ, সৌদি আরব ও অন্যান্য দেশ গত বছর প্রায় ৪০০ কোটি ডলারের খাদ্য, বস্ত্র, আশ্রয় ও অন্যান্য সহায়তার জন্য বরাদ্দ দিয়েছে।
২০১৯ সালের এর পরিমাণ আরও বাড়বে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। বিশাল পরিমাণ এই ত্রাণ সত্ত্বেও ইয়েমেনের কমপক্ষে ১৩টি প্রদেশে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে। এর প্রধান কারণ ত্রাণ সহায়তার বেশিরভাগই লুট হয়ে যাচ্ছে। ইয়েমেনের অন্যতম বড় শহর তায়েজ। শহরটিতে গত ব্যাপক পরিমাণে ত্রাণ এলেও এর ৮০ ভাগই চুরি হয়ে গেছে। এপিকে এক সাক্ষাৎকারে ত্রাণকর্মী নাবিল আল হাকিমি জানান, গত বছর তায়েজ থেকেই পাঁচ হাজার বস্তা চাল কোথায় গেছে তার খোঁজ কেউ জানে না।
একটি ত্রাণ সহায়তা সংস্থার গুদাম থেকে লুট হয়ে গেছে আরও ৭০৫ বস্তা শুকনো খাবার ঝুড়ি। এছাড়া প্রত্যন্ত গ্রামগুলোর বণ্টনে যাওয়ার সময় ট্রাক থেকে নামিয়ে নেয়া হয়েছে ১৫০ বস্তা খাদ্য।
গত মাসে ডব্লিউএফপির এক রিপোর্টে দেখা গেছে, ইয়েমেনের দুই কোটি ৯০ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে এক কোটি ৫৯ লাখ মানুষই পর্যাপ্ত খাদ্য পাচ্ছে না। এদের মধ্যে এক কোটি ৮০ লাখ মানুষের জরুরিভিত্তিতে খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন। গভীর সংকটে রয়েছে ৫০ লাখ শিশু।
অনাহারে মৃত্যু ঝুঁকিতে রয়েছে ৬৩ হাজার ৫০০ জন। গত চার বছরে অনাহার ও অপুষ্টিতে মারা পাঁচ বছরের নিচের প্রায় ৮৫ হাজার শিশু। বিবিসি জানিয়েছে, খাদ্য চুরির মতো নিকৃষ্ট কর্মকাণ্ড থামাতে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট ও হুথিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ডব্লিউএফপি। সংস্থাটির জরিপে দেখা গেছে, ইয়েমেনের রাজধানী সানার বাসিন্দারা ত্রাণ হিসেবে জাতিসংঘের পাঠানো খাদ্যসামগ্রী পায়নি।
ডব্লিউএফপির নির্বাহী পরিচালক ডেভিড বিয়াসলি বলেছেন, ‘ক্ষুধার্ত মানুষের মুখের গ্রাস চুরির ঘটনা এমন সময়ে ঘটছে, যখন শিশুরা না খেয়ে ধুঁকে ধুঁকে মারা যাচ্ছে। এটা সত্যিই নির্মম।’ তবে ডব্লিউএফপির অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে হুথি বিদ্রোহীরা।
২০১৫ সালে ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট মনসুর হাদিকে উচ্ছেদ করে রাজধানী দখলে নেয় ইরানসমর্থিত শিয়াপন্থী হুথি বিদ্রোহীরা। সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে নির্বাসনে যেতে বাধ্য হন হাদি। হুথিদের ক্ষমতা দখলের পর থেকেই হাদির অনুগত সেনাবাহিনীর একাংশ তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে।
২০১৫ সালের মার্চে হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে মিত্রদের নিয়ে ‘অপারেশন ডিসাইসিভ স্টর্ম’ নামে সামরিক অভিযান শুরু করে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। সৌদি জোটের অভিযান শুরুর পর এ পর্যন্ত নারী ও শিশুসহ ১০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।
খবর বিভাগঃ
আন্তর্জাতিক
মতামত
0 facebook: