![]() |
ছবিঃ নয়া দিগন্ত |
স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একযোগে এমপিওভুক্তির দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতে প্রত্যাশী নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা শনিবার চতুর্থ দিনের মত জাতীয় প্রেসক্লাবের পাশে রাজধানীর কদম ফোয়ারার সামনের সড়কে অবস্থান অব্যাহত রেখেছে।
শুক্রবার দুপুরে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ সোহরাব হোসাইনের সাথে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকের পর অনশনরত শিক্ষক নেতারা শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনির মোবাইল সাথে আলাপ করতে চাইলেও তিনি (মন্ত্রী) ফোন সিরিভ করেন নি বলে অভিযোগ করেছেন ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যক্ষ ড. বিনয় ভূষণ রায়।
তিনি জানান, সিনিয়র সচিবের সাথে অফিসার্স ক্লাবে অনশনরত নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের সচিবের কাছ থেকে পাওয়া নাম্বার দিয়েই মন্ত্রীকে ফোন করা হয়েছিল। কিন্তু মন্ত্রী শিক্ষক নেতার ফোন ধরেন নি। পরে মন্ত্রীকে মোবাইলে বার্তা পাঠানোর পরও কোন ফিরতি উত্তর পাওয়া যায় নি।
মহাসচিব অধ্যক্ষ ড. বিনয় ভূষণ রায় বলেন, দাবী (প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের অনুরোধ ও শিক্ষকদের দুঃখের কথা জানাতে পারার সুযোগ) না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষকরা রাজপথেই অবস্থান করবেন। এটাই আমাদের অবস্থান। এ অবস্থান থেকে আমরা ফিরব না। এমনিতেই তো গত ১০/১৮ বছর না খেয়েই মরছি। এবার এখানেই মরব।
শনিবার বিকেলে সাথে অনশনস্থলে আলাপকালে নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যক্ষ ড. বিনয় ভূষণ রায় এসব কথা বলেন।
তিনি জানান, গত চারদিন সারাদেশ থেকে আগত নন-এমপি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শিক্ষক খোলা আকাশের নীচে অবস্থান করছেন। এখন পর্যন্ত সরকারের কোন মহল বিশেস করে শিক্ষা মন্ত্রনালয় থেকে আনুষ্ঠানিক কোন আশ্বাস বা কেউ যোগাযোগ করেন নি। তবে, তিনি জানান, গত শুক্রবার দুপুরে সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলারকে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ সোহরাব হোসাইন ফোণ করে অফিসার্স ক্লাবে সাক্ষাত করার কথা বলেন।
এ সময় ফেডারেশনের সভাপতি ১৩/১৪ জন কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের নিয়ে সচিব মহোদয়ের সাথে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে প্রায় ৩০ মিনিট সচিব-নেতৃবৃন্দের অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হয়। সেখানে সচিব এখন অনশন না করে সরকারের প্রতি আস্থা রেখে স্কুলে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানান।
সচিব জানান, আগামী কিছু দিনের মধ্যে এমপিভূক্তির তালিকা প্রকাশ করা হবে। এখন আপনারা স্কুলে ফিরে যান। সরকারএ নিয়ে কাজ করছে। সরকার সচিতন রয়েছে, আন্দোলন বা অনশনের প্রয়োজন নেই।
অনশনরত শিক্ষক নেতারা সচিবকে জানান, গত কয়েক বছরে বহু আশ্বাস দেয়া হলেও কোন ফল হয় নি। তারা বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করার জন্য সচিবকে অনুরোধ করেন। সচিব বলেন, তিনি সরকারের কর্মকর্তার সরকার প্রধানের সাথে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করানো তার জন্য শোভনীয় নয়। এ ব্যাপারে শিক্ষক নেতারা নতুন শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপও চান।
মহাসচিব অধ্যক্ষ ড. বিনয় ভূষণ রায় জানান, সচিব মহোদয় শিক্ষক নেতাদের বলেন, মন্ত্রীর সাথে এ ব্যাপারে আপনার ককথা বলতে পারেন। শিক্ষক নেতারা সচিবের কাছে মন্ত্রীর মোবাইল চান এবং ফিরে আসেন।
অধ্যক্ষ ড. বিনয় ভূষণ রায় জানান, অনশন স্থল থেকে দু’বার এবং একবার মোবাইলে এসএমএস পাঠিয়েও মন্ত্রীর সাড়া পাওয়া যায় নি। তবে, তিনি আরো জানান, মন্ত্রী গত দু’দিন তার নিজ জেলা চাঁদপুরে রয়েছেন।
ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করে মহাসচিব অধ্যক্ষ ড. বিনয় ভূষণ রায় বলেন, ১০ লাখ রোহিঙ্গা এবং পদ্মা সেতুর জন্য টাকার অভাব হয়নি, কয়েক হাজার শিক্ষকের জন্য যত টাকার অভাব পড়েছে সরকারের। তিনি অভিযোগ করেন, আমলারাই প্রধানমন্ত্রীকে বিভ্রান্ত করছেন, সঠিত তথ্য তুলে ধরছেন না।
বিনয় ভূষণ বলেন, অনশনরত শিক্ষকদের কেউই সর্ব নিন্ম ১০ থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত বিনা বেতনেই এমপিও’র আমায় শিক্ষকা করে আসছি। এখন যত সব নীতিমারঅ-কালাকানুনের দোহাই দেয়া হচ্ছে। আমাদের দাবী ২৮ হজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতই মাত্র ৭/৮ হাজার স্বীকৃতিপ্রাপ্ত নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একযোগে এমপিওভূক্ত করা হোক। এ ব্যাপারে এখন আমরা সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর সাথেই কথা বলতে চাই। আমরা তার সাথে সাক্ষাৎ করে দুঃখ-বেদনার কথা জানাবো। এটাই আমাদের শান্তনা। তিনি যাই বলেন, আমরা মেনে নেব।
এ দিকে, সংগঠনের সহ-সভাপতি শফিকুল ইসলাম জানান, গত চারদিনে অনশনরত শিক্ষকদের প্রায় সবাই খোলা আকাশের নীচে প্রচন্ড গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বরগুনা মহিলা-দাখির মাদরাসার শৈলেন মজুমদার নামের একজন শিক্ষক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে জাতীয় হৃদরোগ ইন্সষ্টিটিউটে ভর্তি হয়েছেন। আর ডায়রিয়া ও পেটের পীড়ায় আরো ১২ জন ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিয়েছেন।
0 facebook: