31 October 2019

নদীর পাড়ে ২ বছরের শিশুর শিকলে বাঁধা জীবন, ক্ষুধায় কাতর হলে কান্নার পর থেমে যায় সে



জেলা প্রতিনিধি।।  কখনও প্রখর রোদ, কখনও বৃষ্টি বা কখনও কনকনে শীত। ক্ষুধায় কাতর হলেও কিছুক্ষণ কান্নার পর থেমে যায় সে। যেন ভাগ্যের নির্মমতার কাছে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে নাম না জানা এক শিশু। শিকলে বাঁধা তার ছোট্ট এক জীবন।

নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় নদীবন্দর (টার্মিনাল)-এর চলাচলের জেটির পাশে শিকল দিয়ে বাঁধা ওই ছোট্ট শিশুকে দেখেন নদীপথে মুন্সিগঞ্জ ও বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মানুষ। কেউ কেউ কৌতূহলে ছবি তুলেন। কিন্তু কেউ জানেন না কেন শিশুটির এই পরিণতি।

সরজমিনে গিয়ে জানা গেছে, নিজের সন্তানকে রেখে কাজে যান তার মা। ক্লান্ত শরীরে বা বৈরী আবহাওয়া সব কিছুকেই সহ্য করে মানিয়ে নিতে হয় এ বাচ্চাটিকে। গতকাল বুধবার এই একটি ছবি পাওয়া যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। ছবির সত্যতাও পাওয়া যায় টার্মিনাল ঘাটে গিয়ে।

সেখানে গিয়ে দেখা যায়, একটি ছেলেকে তার মা শিকল দিয়ে বেঁধে কাজে চলে গেছেন। সেখানে অস্থায়ী কয়েক দোকানি জানান, মূলত ছেলে যেন হারিয়ে না যায় বা কোথাও না যায় সে জন্যই মা এ কাজ করেন। আবার অনেকে ভিক্ষা করতে বিভিন্ন স্থান থেকে শহরে আসেন তখন তাদের সন্তানকেও এখানে বেধে রেখে যান।

টার্মিনাল ঘাটের অস্থায়ী আচার বিক্রেতা রবিউল জানান, এরকম দৃশ্য তিনি মাঝে মাঝেই দেখেন। অনেক সময় রাত অবধি এভাবেই বাধা থাকে শিশুটি। মূলত মা সঙ্গে করে বাচ্চাকে এনে এখানে বেঁধে তারপর কাজ করে আবার যাবার সময় নিয়ে যায়। তবে কখন বাঁধেন আর কখন খোলেন সেটি অনেক সময় দেখেন না তারা। হুটহাট বেধে চলে যান। রবিউলের কথার প্রমাণও পাওয়া যায়।

কথা বলার জন্য দুপুরের পর থেকে সেখানে থাকলেও বিকালে হঠাৎ করেই দেখা যায় শিশুটি সেখানে নেই। পরে সেখানে অবস্থান করা জয়নাল নামে একজন জানান, তিনি একটু আগেই দেখেছেন একজন অর্ধবয়স্ক নারী তালা খুলে নিয়ে যাচ্ছেন বাচ্চাটিকে। তার বাচ্চাই হবে এমনটাই জানান তিনি।

এমন মানবিক ছবি, দৃশ্য দেখে অনেকেই শিশুটিকে খাবার কিনে দেন আবার অনেকেই রোদ বৃষ্টিতে তাকে ছাতা কিংবা পানি কিনে দেন। তবে শিশুটিকে এমন বন্দি অবস্থায় দেখে মায়া হলেও কর্মব্যস্ত এ জীবনে কেউ বেশি সময় নিয়ে দেখার সময়ও পান না।

এ ব্যাপারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন স্থানীয় অনেকেই। তাদের মতে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে যদি এই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা করা হতো তাহলে হয়তো তাদের সড়কে এভাবে বন্দি থাকতে হতো না অথবা যদি সবার কাজের স্থানেই শিশুদের রাখার জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকত তাহলে আর সমস্যা হতো না। এ ব্যাপারে নদী বন্দরের কর্মচারীরা জানান, আমরাও দেখি কিন্তু শিশুর মা কে সেটা জানি না।


শেয়ার করুন

0 facebook: