কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশে “বৈষম্য” নামের একটি সর্টফ্লিম নিয়ে বেশ আলোচনা
হচ্ছে। বিশেষ করে ইউটিউবারদের মাঝে। এই সর্টফ্লিমটির মূল কনসেপ্টটাকে অনেকে
সাপোর্ট করছে আবার অনেকে সাপোর্ট করছেনা। মূলত এই শর্টফিল্মটিতে একটি মেসেজ ছিল
নারীদের নিয়ে, এই শর্টফিল্মটির মূল ম্যাসেজটি হলোঃ- “সমাজে
কিছু মেয়ে আছে যারা পাবলিক প্লেসে সরাসরি ধুমপান করছে তথা সিগারেট খাচ্ছে। এতে
যেসব মেয়ে ঘরে লুকিয়ে সিগারেট খেতো তারা ঐ সব মেয়েদের দেখে উৎসাহিত বা সরাসরি
প্রকাশ্যে ধুমপান করার সাহস পেতে পারে। সমাজের ভাবমূর্তি নষ্ট হতে পারে। আর যদি
কোন মেয়েকে পাবলিক প্লেসে ধুমপান করতে দেখা যায় তাহলে ভিডিও করে তা ভাইরাল করে
দিতে হবে যেনো তারা শুধরে যায়”।
আসলে কে এই
নাটকটিকে পরিচালনা করেছে বা কারা এই মেসেজটির বিরোধীতা করছে আমি সেটা জানতে চাই না
বা আমি নাটকটির কথায়ও যাবো না।
তবে আমি যে
বিষয়টি বলবো, তা হচ্ছে সমাজে
প্রকাশ্যে একজন মেয়ে সরাসরি ধুমপান করতে পারে কিনা আধুনিকতার দোহাই দিয়ে। আর এটা
কতটা যৌক্তিক? এ বিষয়ে কিছু কথা বলবোঃ-
১) আমরা প্রথমে
দেখবো পাবলিক প্লেসে ধুমপান সম্পর্কে বাংলাদেশের আইন আসলে কি বলে?
- সংবিধানের ধূমপান ও তামাকজাত
দ্রব্যের উত্পাদন, ব্যবহার, ক্রয়-বিক্রয় ও বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণের
লক্ষ্যে বিধান প্রণয়নকল্পে প্রণীত আইন ২০০৫ মোতাবেক - ৪৷ (১) ধারা ৭ এর বিধান স্বাপেক্ষে,
কোন
ব্যক্তি কোন পাবলিক প্লেস এ এবং পাবলিক পরিবহণে ধূমপান করিতে পারিবেন না৷
প্রথমে জানা
প্রয়জন যে পাবলিক প্লেস বলতে আসলে কোন যায়গাগুলোকে বুঝায়, ২[ (চ)
“পাবলিক প্লেস” অর্থ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি অফিস,
আধা-সরকারি
অফিস, স্বায়ত্তশাসিত অফিস ও বেসরকারি অফিস, গ্রন্থাগার,
লিফট,
আচ্ছাদিত
কর্মক্ষেত্র , হাসপাতাল ও ক্লিনিক ভবন, আদালত ভবন,
বিমানবন্দর
ভবন, সমুদ্রবন্দর ভবন, নৌ-বন্দর ভবন, রেলওয়ে স্টেশন
ভবন, বাস টার্নিমাল ভবন, প্রেক্ষাগৃহ, প্রদর্শনী
কেন্দ্র, থিয়েটার হল, বিপণী ভবন, চতুর্দিকে দেয়াল
দ্বারা আবদ্ধ রেস্টুরেন্ট, পাবলিক টয়লেট, শিশুপার্ক,
মেলা
বা পাবলিক পরিবহনে আরোহণের জন্য যাত্রীদের অপেক্ষার জন্য নির্দিষ্ট সারি, জনসাধারণ
কর্তৃক সম্মিলিতভাবে ব্যবহার্য অন্য কোন স্থান অথবা সরকার বা স্থানীয় সরকার
প্রতিষ্ঠান কর্তৃক, সাধারণ বা বিশেষ আদেশ দ্বারা, সময়
সময় ঘোষিত অন্য যে কোন বা সকল স্থান;] ইত্যাদিতে সরাসরি ধুমপান করা আইনত
নিষিদ্ধ। এই আইন লঙ্ঘন করলে, ৬[ (২) কোন ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর বিধান লঙ্ঘন
করিলে তিনি অনাধিক তিনশত টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত হইবেন এবং উক্ত ব্যক্তি দ্বিতীয়বার
বা পুনঃ পুনঃ একই ধরণের অপরাধ সংঘটন করিলে তিনি পর্যায়ক্রমিকভাবে উক্ত দন্ডের
দ্বিগুণ হারে দন্ডনীয় হইবেন।
তাহলে বুঝতেই
পারছেন যদি কেউ ধুমপান বিষয়ে পৃষ্ঠপোষকতা করে তাহলে তার জন্যও আইনি ব্যবস্থা রয়েছে।
তাহলে দেখা যাচ্ছে, কোন মেয়ে অথবা পুরুষ হোক তারা যদি পাবলিক প্লেসে
ধুমপান করে তাহলে তারা আইনতভাবে শাস্তির সম্মুখীন হবে।
এখন অনেকেই বলতে
পারে, নারী পুরুষের সমান অধিকার অথবা স্বাধীন বাংলাদেশের দোহাই দিয়ে “মানুষ
যা ইচ্ছা তাই করবে কারো বাধা দেয়ার ক্ষমতা নাই” ইত্যাদি বলে থাকে।
আসলে বাংলাদেশে
স্বাধীনতা বলতে কি বোঝায় বা কতটা স্বাধীন বাংলাদেশ? আসলেই কি
স্বাধীনভাবে আপনি বাংলাদেশে যা ইচ্ছা তাই করতে পারবেন?
তাদের কাছে আমার
প্রশ্ন, আপনি কি ইচ্ছা করলেও পাবলিক প্লেসে মদ, গাজা, ইয়াবা,
শিসা,
কোকেন,
হেরোইন
ইত্যাদি খেতে পারবেন? অবশ্যই না। কারন এটা শুধু আইনের দৃষ্টিতেই নয় বরং
সভ্যতার দৃষ্টিতেও নিষিদ্ধ। কোন সভ্য ব্যক্তি পাবলিক প্লেসে ছেলে হোক বা মেয়ে হোক
ধুমপায়ী হতে পারেনা। অনেক নারীবাদীরা প্রশ্ন তোলে, তারা এখনও
পুরুষতান্ত্রিক সমাজে বসবাস করছে। কিন্তু আসলে তারা কি সত্যিই পুরুষ তান্ত্রিক
সমাজে বসবাস করছে? আর বসবাস করলে কিভাবে তারা স্কুল-কলেজে শিক্ষালাভ
করছে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদল কিভাবে নারীনেত্রী হচ্ছে, বাংলাদেশে
অনেক খ্যাতনামা ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার তারা কিভাবে নারী হয়?
আসলে
পুরুষতান্ত্রিক বলতেই কি সবকিছু পুরুষ দ্বারা নিয়ন্ত্রীত? মোটেও
নয়। কারন পুরুষরা শুধু কিছু কাজে নারীরদের ভালো মন্দ নির্ধারন করে দেয়। এইটাকে
নারীবাদীরা সমাজে খারাপভাবে উপস্থাপন করতে চায়।
আবার অনেকে বলে
থাকে, ইউরোপ আমেরিকায় নারীরা স্বাধীন। তারা প্রকাশ্যে ধুমপান করতে পারে, যে
কারও সাথে সেক্স করতে পারে, নগ্ন হয়ে ঘুরতে পারে তাহলে বাংলাদেশের নারীরা কেন
পারবে না?
তাদের কথার
উত্তরে বলতে হয়, ইউরোপ আমেরিকায় যেসব কালচার চলে তা মূলত সভ্যতার
সাথে যায় না। একজন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ ইউরোপীয় ও আমেরিকান কালচারগুলো অনুসরণ
করতে পারেনা। যেমন আমেরিকার ক্যাসিনোগুলোর কালচার হচ্ছে, একজন নারীকে
উলঙ্গ করে দাড় করিয়ে রেখে তার স্তনে দুর থেকে বল দিয়ে টার্গেট করে আঘাত করা। যাতে
কোন কোন নারী মারাও যায়। এখন যদি কেউ বলে বাংলাদেশে নারীদের উলঙ্গ করে বল দিয়ে তার
স্তনে আঘাত করতে হবে তাহলে কি কেউ মেনে নিবে? অবশ্যই না! কারন
বাংলাদেশের সংবিধান এবং জনগনের কৃষ্টি কালচার সম্পূর্ণ সুস্থ এবং সহজেই গ্রহণযোগ্য।
আর বাংলাদেশের জনগন ইউরোপীয় কালচারকে ঘৃণা করে থাকে কারন বাংলাদেশের মানুষ সুস্থ মস্তিষ্কের।
তাই আমার এইসব
বলার মূল উদ্দেশ্য হল, ”বৈষম্যে” নাটকের মতে, ধুমপানকৃত
কোন নারীকে পাবলিক প্লেসে দেখতে ভিডিও না করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নিয়ে
তাদেরকে ধরিয়ে দিন। আর এটা ওই নারীর জন্য ক্ষতি নয় বরং উপকার।
রণবীর ভট্টাচার্যঃ ব্লগার, লেখক, রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ।
খবর বিভাগঃ
অপরাধ
মতামত
লাইফস্টাইল
0 facebook: