18 February 2018

যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন বিএনপি কর্মীদের এখনও সন্ত্রাসী ভাবে কেনো?


নিজস্ব প্রতিনিধিঃ মেক্সিকো হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দুর্গম পথে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সময় অভিবাসন-এজেন্টদের হাতে ধরা পড়ার সময়েই বিএনপির কর্মী হিসেবে পরিচয় দিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছিলেন ৩৪ বছর বয়সী মামুন বিয়ানিবাজার উপজেলার মামুন-অর রশীদ টানা ৪ মাস যুক্তরাষ্ট্রের ডিটেনশন সেন্টারের নির্জন কক্ষে ছিলেন। 

বিএনপির কর্মকাণ্ডকে এখনও সন্ত্রাসী হিসেবে বিবেচনায় রেখেছে যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রণালয়অভিবাসন দফতরের অভিভাবক এই মন্ত্রণালয়ের সর্বস্তরের এজেন্টরা এখনও জামায়াত-শিবিরের ন্যায় বিএনপিকেও সন্ত্রাসীদের সহযোগীমনে করছে

তবে নিউইয়র্কের খ্যাতনামা অ্যাটর্নি অশোক কর্মকার সকল প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে মামুনকে ৩৫ হাজার ডলার বন্ডে মুক্ত করেছেন ১৪ ফেব্রুয়ারিমামুনের রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার আবেদন পেন্ডিং রয়েছে এবং সেটির নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাকে ওয়ার্ক পারমিটপ্রদানের নির্দেশও দিয়েছেন অভিবাসন জজ ১৬ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সাক্ষাৎ ঘটে মামুনের সাথেসে সময় বিয়ানিবাজার থেকে একই পথে যুক্তরাষ্ট্রে আসার সময় গ্রেফতার হওয়া আরেক যুবক আমিনুলের সাথেও সাক্ষাৎ ঘটে জ্যামাইকায় অ্যাটর্নি অশোক কর্মকারের অফিসেতারা উভয়েই বিএনপির কর্মী হিসেবে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছেনবাংলাদেশের কতিপয় লোককে মোটা অংকের টাকা দিয়ে বিভিন্ন পথ ঘুরে ব্রাজিলে এসেছিলেন তারাসেখানে কয়েক সপ্তাহ অবস্থানের পর সেন্ট্রাল আমেরিকার বিভিন্ন দেশ ঘুরে মেক্সিকোতে আসার পর তারা মেক্সিকোর অভিবাসন রীতি অনুযায়ী সাময়িক অবস্থানের অনুমতি সংগ্রহ করেনসেই সময়ের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে সহায়তা করে সংঘবদ্ধ আদম পাচারকারি চক্রমেক্সিকো সীমানা অতিক্রমের পরই আদাম পাচারকারিদের দায়িত্ব শেষ বলে জানান মামুন এবং আমিনুলমামুনের বন্ডের অর্থ সংগ্রহ করে দেন নিউইয়র্কের সমাজকর্মী এম এ সবুর

অ্যাটর্নি অশোক কর্মকার এ সংবাদদাতাকে জানান, ‘সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াওয়ের নানা কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকার পাশাপাশি ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতনে সরাসরি বিএনপি জড়িত থাকায় যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনে জামাত-শিবিরের মত বিএনপিকেও সন্ত্রাসী সংগঠনহিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছেএমন পরিস্থিতির অবসানে ৩ বছর আগে আমি বিএনপির এক কর্মীর আবেদনের শুনানীর সময় দলগতভাবে বিএনপি সন্ত্রাসী সংগঠন নয়তার সমর্থনে বিস্তারিত ডক্যুমেন্ট উপস্থাপন করেছি নিউইয়র্কের অভিবাসন আদালতেএক পর্যায়ে সেই আদালত হোমল্যান্ড সিকিউরিটির মনোভাব পরিবর্তনের রুলিং জারি করেন এবং আমার মক্কেলের রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার আবেদন মঞ্জুর করেছেনএরপর একই আদালতে বিএনপির কর্মীদের আবেদন সহজেই মঞ্জুর হচ্ছেতবে নিউজার্সি, ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস, ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, আলাবামা, পেনসিলভেনিয়া প্রভৃতি অঙ্গরাজ্যের অভিবাসন আদালত এখনও বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠনের পর্যায়ে বিবেচনা করছে

অ্যাটর্নি অশোক উল্লেখ করেন, ‘এর আগে বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখোন আওয়ামী লীগকেও একইভাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল’  তবে জামায়াত-শিবিরের ব্যাপারে কোন আদালতই সহানুভূতিশীল নয়-উল্লেখ করেন অ্যাটর্নি কর্মকার গত বছরের ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের সময় থেকে গত এক বছরে যতজনের রাজনৈতিক আশ্রয় মঞ্জুর হয়েছে তার ৬০% হলেন বিএনপি কর্মীহিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান হিসেবে ২০% এর আবেদন মঞ্জুর হয়েছেএনজিও, নির্যাতিত গৃহকর্মী, নির্যাতিতা গৃহিনীরাও স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি পাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রে

অ্যাটর্নি অশোক কর্মকার আরো জানান, ‘অবস্থা বেগতিক দেখে গত এক বছরে কেউই জামায়াত-শিবিরের কর্মী পরিচয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেনিপ্রায় সকলেই বিএনপি কর্মী হিসেবে আবেদন করছেনএদিকে, ইমিগ্রেশন এ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের দফতর থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি জানা গেছে, অনেক আগে থেকেই বহিষ্কারের নির্দেশ থাকা ২৪ বাংলাদেশিকে গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছেএখনও ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস, আরিজোনা, আলাবামা, ফ্লোরিডা, পেনসিলভেনিয়া, জর্জিয়ামিশিগান, নিউইয়র্কের বিভিন্ন ডিটেনশন সেন্টারে ১৭৮ জন বাংলাদেশি বহিষ্কারের প্রক্রিয়ায় রয়েছেএর মধ্যে একজনও কোন ধরনের অপকর্মে জড়িত ছিলেন নাঅভিবাসনের আইন লংঘন করাই তাদের একমাত্র অপরাধযদিও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং অভিবাসন দফতরের শীর্ষ কর্মকর্তারা সবসময় দাবি করছেন যে, গুরুতরভাবে অপরাধীদেরকেই ধরা হচ্ছেকারণ তারা সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার হুমকি


অনেক আগে থেকেই বহিষ্কারের নির্দেশপ্রাপ্তদের মধ্যে যাদের সিটিজেন স্বামী/স্ত্রী অথবা সন্তান রয়েছে, তারা অভিবাসন বিষয়ে পারদর্শী অ্যাটর্নির পরামর্শ নিতে পারেনএ ধরনের চেষ্টা করে অনেকেই বর্তমানের গ্রেফতার অভিযান থেকে রেহাই পেয়েছেন-জানান অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরীগত কয়েক মাসে বেশ কজনকে ডিটেনশন সেন্টার থেকে ছাড়িয়ে আনাও সম্ভব হয়েছে আইনী লড়াইয়ের পরএকই কথা বলেছেন অভিবাসীদের ভরসার প্রতিক ভয়েস অব দ্য ইমিগ্র্যান্টনামক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রধান মাজেদা এ উদ্দিন এ সংবাদদাতাকে বলেন, ‘বেশ কজনের বহিষ্কার ঠেকাতে সক্ষম হয়েছিআরো কয়েকজন রয়েছেন ডিটেনশন সেন্টারেতাদের মুক্তির জন্যে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সাথে দেন-দরবার চালাচ্ছি


শেয়ার করুন

0 facebook: