10 May 2018

খালেদা জিয়ার অবস্থা গুরুতর

ফাইল ছবি
স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজাপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জামিন প্রশ্নে শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগকে বলেছেন, খালেদা জিয়ার অবস্থা গুরুতরজেলখানায় চিকিৎসা হচ্ছে নাআমরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছিতাঁর হাত ফুলে উঠেছেঘাড় নাড়াতে পারছেন নাকথাও বলতে পারছেন নাঅথচ অ্যাটর্নি জেনারেল বলছেন, খালেদা জিয়া বিশ্রামে আছেনমানুষের জন্য আদালত, আদালত সবকিছুই দেখবেনতিনি বলেন, আদালতের চোখ আছে, মন আছে, বিবেক আছেপাবলিক পারসেপশন আছেআদালতের জন্য মানুষ না, মানুষের জন্য আদালতসুতারাং, সব কিছুই আদালতকে দেখতে হবেআপনাদের (আদালতের) আরেকটি চোখ আছে, বিবেক আছে, মন আছে-এসব কিছু দিয়ে আপানোদের বিচার করতে হয়এই আদালতের মর্যাদা রক্ষার দায়িত্ব আপনাদেরএ পর্যায়ে খালেদার অপর আইনজীবীরা বলেন, শতকরা ৯৯ দশমিক ৯৯ ভাগ মামলায় আমাদের বিচার ব্যবস্থায় হাইকোর্ট জামিন দিলে আপিল বিভাগ হস্তক্ষেপ করেনিআশা করব ন্যায় বিচারের স্বার্থে এবং স্বাভাবিক ধারা অব্যাহত রাখতে এই জামিন বহাল রাখা হবেব্যারিস্টার মওদুদ আহমদে আদালতকে বলেন, আজ যদি খালেদা জিয়াকে জামিন না দেন, উনার যদি কিছু হয়, তার দায় সরকার আপনাদের ওপর চাপিয়ে দিতে চাচ্ছেসরকার তো বলবেই সে সুস্থ

প্রথম দিনের মতো দ্বিতীয় দিনের খালেদা জিয়ার জামিন প্রশ্নে আপিল শুনানিতে দুদক রাষ্ট্রপক্ষ ও আইনজীবীদের মধ্যে কয়েকদফা হট্টগোলের ঘটনাও ঘটেএকপর্যায়ে প্রধান বিচারপতি এজলাস ছেড়ে চলে যেতে উদ্যত হনপরে সিনিয়র আইনজীবীদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে শুনানি শেষে করে ১৫ মে আদেশের জন্য দিন ঠিক করে দেন আপিল বিভাগএদিন শুনানিতে আদালতের বিভিন্ন প্রশ্নে উপযুক্ত জবাব দিতে পারেনি দুদকের আইনজীবী

গতকাল বুধবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চে খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া জামিনের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি চলেশুরুতে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা জামিনের পক্ষে বিভিন্ন যুক্তিতর্ক উপস্থাপনা করেনএরপর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা জামিনের বিরোধিতা করে বক্তব্য দেন

এদিকে খালেদা জিয়ার জামিন শুনানি উপলক্ষে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়সবকটি ফটকে সবাইকে তল্লাশি করে প্রবেশ করতে দেয়া হয়আদালতের চারপাশে বিভিন্ন গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যদের ব্যাপক উপস্থিতিও লক্ষ করা যায়শুনানি শুরু হওয়ার আগেই আসামী পক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষ, সাধারণ আইনজীবী, সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে আদালত কক্ষ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে

খালেদা জিয়ার পক্ষে উপস্থিত ছিলেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, খন্দকার মাহবুব হোসেন, জয়নুল আবেদীন, এ জে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, গিয়াস উদ্দিন আহমদে, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, ব্যারিস্টার কায়সার কামালহ বিএনপি সমর্থিত শতাাধিত আইনজীবীরারাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমসহ সহকারী ও ডেপুটি অ্যাটর্নিরা, আর দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান উপস্থিত ছিলেনএছাড়াও আদালতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেনসকাল ৯টা ২৩ মিনিটের দিকে শুনানি শুরু করেন৩০মিনিটি বিরতী দিয়ে বেলা সাড়ে ফের শুনানি শুরু করেন আইনজীবীরাএরপর ১টা ১৫ মিনিটির দিকে আদালত আদেশের জন্য ১৫ মে ধার্য করেন

চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে মধ্য জামিন শুনানি:
শুনানির শুরুতে মশিউর রহমান ও স্বাস্থ্য মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের জামিনের উদাহরণ টেনে খালেদা জিয়ার আইনজীবী সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী আদালতকে বলেন, শুধু এ দুটি মামলায় নয় শতকরা ৯৯ দশমিক ৯৯ ভাগ মামলায় আমাদের বিচার ব্যবস্থায় হাইকোর্ট জামিন দিলে আপিল বিভাগ হস্তক্ষেপ করেনিএসময় আদালত বলেন, ২৫ বছর পলাতক ছিলপুলিশ তাকে গ্রেফতার করেপরের দিন হাইকোর্ট তাকে জামিন দিয়েছেসেই নজিরও তো রয়েছেএ মামলাটি এখন চেম্বারে এসেছেএ জে মো. আলী বলেন, ব্যতিক্রম সিদ্ধান্ত আইন হতে পারে নাএই মামলাকে অন্য সকল মামলার থেকে আলাদা করে এনে দ্রæত বিচার করার চেষ্টা করছে রাষ্ট্রআমরা মানি বা না মানি গোটা রাষ্ট্রকে এই মামলায় যুক্ত করা হয়েছেএটা এক ধরণের স্বেচ্ছাচারিতাবিচার প্রশাসনে হস্তক্ষেপের শামিলঅ্যাটর্নি জেনারেল এই বক্তব্যের আপত্তি জানানিয়ে বলেন, এটা সত্য নয়প্রধান বিচারপতি বলেন, আমি তো বলছিআপনি কেন কথা বলছেন?

এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, খালেদা জিয়াকে নির্জন পরিত্যক্ত কারাগারে রাখা হয়েছেএভাবেই এরকম স্বেচ্ছাচারিতা করা হচ্ছেএরই ধারাবাহিকতায় খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধিতে রিভিশন আবেদন করা হয়েছেভিন্ন উদ্দেশ্যে এই মামলাটা আনা হচ্ছেএটা অপ্রত্যাশিতএ অবস্থায় হাইকোর্ট তার বয়স, স্বাস্থ্যগত অবস্থা, কম সাজা সব বিবেচনায় যথাযথভাবেই জামিন দিয়েছে

খন্দকার মাহবুব হোসেন শুনানিতে বলেন, আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, তারা একটি মামলাও দেখাতে পারবে না যে, হাইকোর্ট জামিন দেওয়ার পর আপিল বিভাগ হস্তক্ষেপ করেছেকার্যত সরকার মাইনাস ওয়ান থিওরি নিয়েছেএরই অংশ হিসেবে খালেদা জিয়াকে মাইনাস করতে চানআদালতের ওপরে দোষ চাপিয়েএটা একটা অশুভ লক্ষণ

জয়নুল আবেদীন বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল কোন কর্তৃত্ব বলে বক্তব্য দিয়েছেনআইন তা অনুমোদন করে নাপ্রধান বিচারপতি বলেন, তাহলে আপনারা কেন রাষ্ট্রকে পক্ষ করলেনজবাবে জয়নুল আবেদীন বলেন, এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, করতে হয় তাই করেছিতিনি বলেন, সরকারদলীয় অনেক নেতার বিরুদ্ধেই মামলায় হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে দুদক ও রাষ্ট্র আপিল করেনিকিন্তু এই একটা মামরায় সরকার এবং দুদক বেছে নিয়েছেসরকার এটা করে আদালতের ঘাড়ে বোঝা চাপিয়ে দিয়েছেদুদক এবং সরকার যখন এক হয়ে আপিল করেছে, তখন আমাদের মাঝে আতঙ্ক এেেসছে ন্যায় বিচার নিয়েতিনি বলেন, বিদেশ থেকে টাকা আসার পর তা যদি ব্যবহার করা না হয়, তাহলে তো গোটা সরকারের বিরুদ্ধে অনেক মামলা হতে পারেজয়নুল আবেদীন বলেন, তাকে জামিন দেয়া হলে আজ তার শারীরিক অবস্থার এতো অবনতি হত নাআদালতের জন্য মানুষ না, মানুষের জন্য আদালতসুতারাং, সব কিছুই আদালতকে দেখতে হবেআমাদেরও দায়িত্ব আছে আপনাদের সহায়তা করারএক দেশে দুই রকম আইন হয় নাদুই রকম একশনও হয় নাসরকার দলের ক্ষেত্রে একরকম আর বিরোধীদের ক্ষেত্রে আরেক রকম আচরণ করা হচ্ছেএভাবে পিক এন্ড চুজ করা হচ্ছেএটাও কাম্য নয়নাসিম ও মহিউদ্দিন খান আলমগীরের মামলার স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনা করে জামিন দিয়েছেএক্ষেত্রে খালেদা জিয়ার বয়স ও অসুস্থার বিষয় বিবেচনা করে জামিন বহাল রাখা হোক

মওদুদ আহমেদ বলেন, আপনারা সংবাদপত্র পড়েনদেশে কী হচ্ছে না হচ্ছে, সেটা আপনারা দেখতে পানরাজনীতির কারণে এটা কোর্টে এসেছেখালেদা জিয়া বিএনপির চেয়ারপার্সন না হলে, মামলাটা এ পর্যায়ে আসতা নাবিরোধী দলতেক বাদ দেয়ার জন্যই এই মামলাআমাদের একজন আইনজীবী এম ইউ আহমেদতাকে আপনারা জামিন দেননিএরপর সে হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেআজ যদি খালেদা জিয়াকে জামিন না দেন, উনার যদি কিছু হয়, তার দায় সরকার আপনাদের ওপর চাপিয়ে দিতে চাচ্ছেসরকার তো বলবেই সে সুস্থ

আইনজীবীদের মধ্যে হট্রগোল:
দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান জামিন বিরোধী করে যুক্ততর্ক উপস্থপনা করেনএসময় আদালত বলেন, আপনার বন্ধু চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন যে হাইকোর্ট জামিন দিয়েছেন আর আপিল বিভাগ তাতে হস্তক্ষেপ করেছে-এমন নজির দেখানতখন দুদকের আইনজীবী কোন নজির দেখাতে না পারায় পেছন থেকে আইনজীবীদের মধ্য থেকে গুঞ্জন শুরু হয়হৈ চৈ পরিস্থিতির সৃস্টি হওয়ায় এভাবে চললে আদালত চালাতে পারবো নাপরে পরিবেশ শান্ত হলে ফের শুনানি শুরু হয়এ সময় আদালত বলেন, মশিউর রহমানের মামলায় যদি কোন যুক্তি না দেখানো হয়, তাহলে আপনারা কেনো রিভিউ করেননিসঠিক কোন জবাব দিতে পারেনি দুদক আইনজীবী

এ পযার্য়ে অ্যাটর্নি জেনারেল দাঁড়িয়ে বলেন, এ মামলায় রাষ্ট্রের টাকা চুরি করা হয়েছেতখন সমস্বরে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা প্রতিবাদ জানানঅ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, রাষ্ট্রের টাকা নিয়ে গিয়েছে-এটা বলতে পারবো নাএটা আমাকে বলতে হবেএ সময় আরও তীব্র হৈ চৈ শুরু হয়তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনি উত্তেজিত হবেন নাজবাব দিনঅ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, মেরিটে যাবো নাহৈ চৈ চলতে থাকায় অ্যাটর্নি বলেন, আমার পক্ষে এ অবস্থায় শুনানি করা সম্বভ নয়কাল শুনানি হোকএরপর আরও চিৎকার বেড়ে গেলে আদালতে উপস্থিত রাষ্ট্রের আইন কর্মকর্তারাও পাল্টা চিৎকার করতে থআকেনএ পরিস্থিতিতে প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল তার আইন কর্মকর্তাদের উত্তেজিত হওয়ার জন্য ইঙ্গিত দিয়েছেনতাদেরকে উঠতে ইশারা দিয়েছেনআইনজীবী সমিতির সম্পাদক ও খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকনের এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান কয়েকজন কর্মকর্তাএ সময় তুমুল হৈ চৈ শুরু হয়প্রধান বিচারপতি এজলাস থেকে নামতে উদ্যত হনঅ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, দলবল নিয়ে এসেছে আদালতকে চাপ সৃষ্টির জন্যপ্রধান বিচারপতি বলেন, আইনজীবীরা এমন করলে কোর্ট চালানো সম্ভব নয়পরে সিনিয়র আইনজীবীদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়পরে খালেদার অসুস্থতার কথা তুলে ধরে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এই রোগ নিয়েই তিনি রাজনীতি করে আসছেনপ্রধান মন্ত্রীত্ব করেছেনএটা তার সহনীয়এ যুক্তিতে জামিন হতে পারে নাআপিল বিচারাধীন থাকাবস্থায় এভাবে জামিন হতে থাকলে দেখা যাবে জামিন নিয়ে চলে যাবেসাজা ভোগ করতে হবে নাএভাবেই ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থা পরিত্যক্ত হয়ে যাবেএরপর আদালত বলেন আগামী মঙ্গলবার রায়সূত্রঃ ইনকিলাব


শেয়ার করুন

0 facebook: