![]() |
ফাইল ছবি |
আজ রোববার সকালে কুমিল্লা ও নড়াইলে দায়ের করা তিন মামলায় জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন খালেদা জিয়া।
বিচারপতি মো. আসাদুজ্জামান ও জেবিএম হাসানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে চলতি সপ্তাহে এ জামিন আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে।
বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, পৃথক তিনটি মামলায় পৃথকভাবে যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে। মূলত কুমিল্লার মামলা হওয়ার সময় তিনি গুলশানের বাসভবনে অবরুদ্ধ ছিলেন। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রণোদিত হয়ে এসব মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়া তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ, নারী এবং এসব মামলা জামিনযোগ্য মামলা। এর বাইরে ও এসব মামলায় অপর আসামিরা জামিনে রয়েছে। এ ছাড়া শুনানিকালে আমরা আরো কিছু যুক্তি উপস্থাপন করব। আশা করি আদালত এসব যুক্তি বিবেচনায় খালেদা জিয়াকে জামিনের আদেশে দিবেন।
কুমিল্লা অগ্নিসংযোগ মামলায় জামিন পেতে ১৩ যুক্তি
২০১৫ সালের ২৫ জানুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের হায়দার পুলের চৌদ্দগ্রামে একটি কাভার্ড ভ্যানে অগ্নিসংযোগ ও আশপাশের বেশ কিছু গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পরে এই ঘটনায় ২০১৫ সালের ২৫ জানুয়ারি চৌদ্দগ্রাম থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে নাশকতার অভিযোগে মামলা হয়। ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারিতে এই মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। খালেদা জিয়াসহ ৩২ জনকে এ মামলায় আসামি করা হয়।
মামলাটি বর্তমানে কুমিল্লার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ১-এ চলমান। ২০১৭ সালের ৯ অক্টোবর এ মামলায় অভিযোগ আমলে নেন আদালত। পরে গত ২৩ এপ্রিল এ মামলায় জামিন চেয়ে আবেদন করা হয়। কিন্তু আদালত আবেদনটির পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ৭ জুন দিন ধার্য রাখেন। এ অবস্থায় শুনানি না করে এই মামলায় জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আপিল আবেদন করা হয়েছে।
এই মামলায় খালেদা জিয়ার পক্ষে জামিন আবেদনে ১৩টির মতো যুক্তি দেখিয়েছেন তাঁর আইনজীবীরা। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য যুক্তি হলো- মামলার প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে (এফআইআর) খালেদা জিয়ার নাম নেই, ঘটনাস্থলেও তিনি ছিলেন না। তিনি অসুস্থ, অন্য মামলায় জামিনে আছেন। তিনি বয়স্ক, এ মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে, হয়রানি করার করার উদ্দেশ্যে এই মামলা করা হয়েছে, এ মামলার অন্য আসামিরা জামিনে আছেন। তাই খালেদা জিয়াও জামিন পাওয়ার যোগ্য।
কুমিল্লায় হত্যা মামলা জামিনযোগ্য মামলা
২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে একটি বাসে পেট্রলবোমা নিক্ষেপের ঘটনায় সাত যাত্রী মারা যান এবং ২৫ থেকে ২৬ জন গুরুতর আহত হন। ঘটনার পরের দিন (৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৩টায় চৌদ্দগ্রাম থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নুরুজ্জামান বাদী হয়ে ৫৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরে এ মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। বিচারকালে দায়রা জজ আদালতে খালেদা জিয়ার জামিন চেয়ে আবেদন করা হয়। সেই জামিন আবেদনের পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ৭ জুন দিন ধার্য রাখা হয়েছে। কিন্তু এ অবস্থায় গত ৫ এপ্রিল এ মামলায় খালেদা জিয়াকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়। তাই ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৮ ধারায় হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।
এই মামলায় জামিন আবেদনে যুক্তি দেখানো হয়েছে- মামলার তিনজন আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। কিন্তু তাঁদের কেউ জবানবন্দিতে খালেদা জিয়ার নাম উল্লেখ করেননি। এ ছাড়া খালেদা জিয়া অসুস্থ, বয়স্ক ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় হাইকোর্টে তাঁর জামিন চাওয়া হয়েছে।
নড়াইলে মানহানির মামলা
২০১৫ সালের ২১ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন খালেদা জিয়া- এ অভিযোগে ওই বছরের ২৪ ডিসেম্বর তাঁর বিরুদ্ধে (খালেদা জিয়া) বিরুদ্ধে নড়াইলে মানহানির মামলা করা হয়। স্থানীয় এক মুক্তিযোদ্ধার সন্তান রায়হান ফারুকী ইমাম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
নড়াইলের মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে। এ মামলায় চলতি বছরের ১৬ এপ্রিল খালেদা জিয়ার জামিন চেয়ে তাঁর আইনজীবীরা আবেদন করেন। কিন্তু বিচারক বাদীর উপস্থিতিতে জামিন শুনানির জন্য গত ৮ এপ্রিল শুনানির পরবর্তী দিন ধার্য করেছিলেন। এরপর নির্ধারিত দিনে শুনানি নিয়ে পুনরায় জামিন শুনানির জন্য আগামী ২৫ মে দিন ধার্য রেখেছেন আদালত। এ অবস্থায় চলমান মামলায় খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা তাঁর জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন।
এই মামলায় খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তিতে বলা হয়েছে- দণ্ডবিধির ৫০০, ৫০১ ও ৫০২-এর অধীনে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়। এই তিন ধারার মামলায় জামিনযোগ্য। তা ছাড়া খালেদা জিয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বয়স্ক একজন নেত্রী। তাই এসব যুক্তিতে এ মামলায় জামিন চেয়েছেন তাঁর আইনজীবীরা।
0 facebook: