নোমান
আহমদ চৌধুরীঃ ২০০৩ সালে এরদোগান ক্ষমতায় আসার পূর্বে যেসব মেয়েরা বিকিনি পরিধান করে
উলংগ হয়ে রাস্তায় ঘুরাফিরা করত সেই সব মহিলাদের অধিকাংশই আজ পা থেকে মাথা পর্যন্ত ঢেকে
রাস্তায় বের হন, এরদোয়ান ক্ষমতায় আসার পূর্বে তুরস্কের সমস্ত সরকারী প্রতিষ্টানে হিজাব নিষিদ্ধ ছিল, সেনাবাহিনীতে নামাজ পড়ায় নিষেধাজ্ঞা ছিল, তিনি এক
এক করে সেই সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছেন, বর্তমানে তুরস্কে হিজাবের বিপ্লব চলছে, যা দুই
দশক আগে স্বপ্নেও কল্পনাও করা যেত না, এত কিছুর পরেও তুরস্ক এখনো সম্পূর্ন ইসলামীকরন
হয়ে যায়নি তবে হবে, তুরস্কের পুরোপুরী ইসলামীকরনের জন্য আরো সময়ের প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে ইসলাম
এক দিনে প্রতিষ্টিত হয়নি।
এরদোয়ান
ক্ষমতায় আসার পূর্বে তুরস্কের অবস্থা কেমন ছিল তা একটি ঘটনা বললেই পরিস্কার বুঝতে পারবেন-২০০৩
সালে যখন এরদোয়ান প্রথম ক্ষমতায় আসেন তখন উনার স্ত্রী হিজাব পরিধান করে একটি অনুষ্টানে
আসার কারনে তুরস্কের তৎকালীন সেনাপ্রধান প্রকাশ্যে এরদোয়ানের বিরোধীতা করে সেই অনুষ্টান
বর্জন করেছিলেন। তুরস্কে একসময় আজান নিষিদ্ধ ছিল, ১৯৫০সালে প্রধানমন্ত্রী আদনান মেন্দেরেস আজানের
উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ায় সেনাবাহিনী তাকে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে ফাসির কাস্টে ঝুলিয়ে
হত্যা করেছিল, ৯০এর দশকে প্রধানমন্ত্রী নজমুদ্দিন এরবাকান একটি ইফতার মাহফিল করায় সেনাবাহিনী
তাকে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে দেয়।
এই সেই
তুরস্কে যখন এরদোয়ান ক্ষমতায় আসেন, এসে একসাথে এতকিছু করেননি, বরং ধীর স্থীরভাবে ঠান্ডা
মাথায় কাজ করছেন কারন কাজ ও করতে হবে টিকেও থাকতে হবে, সর্ব প্রথম
তিনি প্রভাবশালী সেনাবাহিনীকে কব্জা করেছেন, দেশে উন্নয়নের জোয়ার বইয়ে দিয়েছেন, সেকুলারদের
লেবাস পড়ে তিনি কৌশলে তুরস্ককে আগাগুড়া ইসলামীকরনের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন যা বোঝার জন্য
স্বাভাবিক জ্ঞান থাকা বিদ্যমান, এই কাজগুলো করা তার জন্য নয় যেকারো জন্যেই এত
সহজ ছিল না, কারন তিনি নির্বাচিত প্রতিনিধি। সময়ে সময়ে সময়ে তাকে নির্বাচন করে ক্ষমতায়
আসতে হয়েছে, তুরস্কে সেকুলারদের অভাব নেই, একটু ভুল করলেই ক্ষমতা নড়ভড়ে হয়ে যেতে পারে, তাই উনাকে
খুব কৌশল করে এগুতে হচ্ছে।
ক্ষমতায়
আসার পর থেকে তিনি তুরস্কে প্রায় ৮হাজার মাসজিদ নির্মান করেছেন, ইউরোপের
অধিকাংশ দেশে তুরস্কের সরকারী টাকায় মসজিদ নির্মান করে দিয়েছেন, তাদের
বেতন ও তুরস্ক সরকার বহন করে থাকে, তার সময়ে তুরস্কের সমস্ত কলেজ ভার্সিটি ও স্কুলে
মসজিদ নির্মান করা হয়েছে, তিনি প্রত্যেক স্কুল কলেজ ও ভার্সিটিতে ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতা মূলক করেছেন, এমনকি
নাস্তিকদের ছেলে মেয়েরাও এখন সেখানে কোরআনের আয়াত মুখস্ত ও ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক
শিখতে হচ্ছে, "এরদোয়ান
ঘোষনা দিয়েছেন আমরা কখনো নাস্তিক প্রজন্ম গড়ে তুলতে পারি না এটা আমাদের মিশন হতে পারে
না, আমরা একটি ধার্মিক প্রজন্ম গড়ে তুলতে চাই"।
জেরুজালেম
ইস্যুতে সবচেয়ে সোচ্চার ভুমিকা পালন করছেন তিনি, বাইতুল মুকাদ্দাসকে রক্ষার জন্য ৫৭ টি মুসলিম
দেশকে নিয়ে ইসলামী সেনাবাহিনী গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন মুসলিম দেশগুলোর কাছে, ৩০লাখ
সিরীয় মুসলিম শরনার্থীকে তার দেশে আশ্রয় তো দিয়েছেন সাথে তাদের উচ্চ শিক্ষাও নিশ্চিত
করছেন!, পৃথিবীর নির্যাতিত মুসলিমদের দান খয়রাতে নজির সৃস্টি করেছেন, এই মুহুর্তে
পৃথিবীর সবচেয়ে দানশীল দেশ তুরস্ক, এছাড়াও রোহিংগা ইস্যু সহ মুসলিমদের প্রায় সব
ইস্যুতে তিনি সোচ্চার রয়েছেন, ৫৭টি মুসলিম দেশের সংঘঠন ওয়াইসির বর্তমান প্রেসিডেন্ট
হলেন এরদোয়ান।
আজ তুরস্কের
প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচন, সেকুলার দলগুলো উঠে পড়ে লেগেছে তাকে ক্ষমতা থেকে
নামানোর জন্য, সাথে যুগ দিয়েছে পশ্চিমা ষড়যন্ত্রকারীরা, সবাই দোয়া
করবেন আল্লাহ তা'লা
যেন আজকের নির্বাচনে এরদোয়ানকে আবার বিজয়ীর বেশে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনেন, আমীন।
খবর বিভাগঃ
আন্তর্জাতিক
তুরস্ক
0 facebook: