24 July 2018

কয়লা গেল কই জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী

ফাইল ছবি
স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রায় সোয়া লাখ টন কয়লা উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনায় কয়লা কোথায় গেলতার পুনঃতদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

কয়লা উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের অনুসন্ধানের ঘোষণা দেওয়ার পর গতকাল বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনার কথা সাংবাদিকদের জানান

গতকাল সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেনএ ছাড়া এই ঘটনায় ইতিমধ্যে পেট্রোবাংলাকেও মামলা করার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান নসরুল হামিদ

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে গতকালের বৈঠকে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আবুল মনসুর মোহাম্মদ ফয়জুল্লাহ উপস্থিত ছিলেনকয়লা সংকটের জন্য গত রবিবার (২২ জুলাই) রাত ১০টা ২০ মিনিটে বড়পুকুরিয়া কয়লাচালিত বিদ্যুেকন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়ফলে বিদ্যুৎ ঘাটতিতে পড়েছে রংপুরের আটটি জেলার বিদ্যুৎ গ্রাহকপ্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী পুনঃতদন্ত করতে বলেছেনকারণ ঘটনাটা হয়ে আসছে প্রায় ২০০৫ সাল থেকেপ্রধানমন্ত্রী সবাইকে আগ থেকে প্রস্তুতি নেওয়া এবং ধৈর্য ধরার নির্দেশ দিয়েছেনএ ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী ক্ষুব্ধ বলেও সাংবাদিকদের জানান প্রতিমন্ত্রী

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী অবশ্য কয়লা খনির কর্মকর্তাতের দিকেই অভিযোগের আঙ্গুল তুলেছেনতিনি বলেন, দুমাস আগে থেকেই বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে বলা হচ্ছিল যে, কয়লার সংকট চলছেকিন্তু ওখানকার যে প্রধান প্রকৌশলী তিনি বলেছিলেন, ‘না, কোনো সংকট নেইবিদ্যুৎ বিভাগ থেকে তদন্ত দল পাঠানোর পর তথ্যটা উদঘাটন হলোতিনি আরও জানান, ইতিমধ্যে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছিতদন্ত চলছেতারা শাস্তি পাবেতবে কয়লা সংকট আগামী এক মাসের মধ্যেই সমাধান করা হবে বলে জানান নসরুল হামিদএর আগে পিডিবির চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মানুষের যেন ভোগান্তি কম হয় সেদিকে নজর রাখতে

অন্যদিকে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে এক লাখ ৪২ হাজার টন কয়লা হরিলুটের ঘটনায় তদন্তে নেমেছে দুদকএজন্য দুদক তিন সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করেছেএ ঘটনার পর বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পেয়েছেন পেট্রোবাংলার পরিচালক আইয়ুব খানএরই মধ্যে দায়িত্ব নিয়েছেন তিনিঘটনা তদন্তে পেট্রোবাংলার পরিচালক কামরুজ্জামানকে প্রধান করে শুক্রবার তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছেক্ষমতার অব্যবহার, জালিয়াতি, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ১ লাখ ১৬ হাজার টন কয়লা খোলা বাজারে বিক্রি করে আনুমানিক ২০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে বড় পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাবীব উদ্দিন আহমদ ও অন্যদের বিরুদ্ধেসাধারণত প্রতি বছর একবার শিফট পরিবর্তন করে কয়লাখনি কর্তৃপক্ষকিন্তু শিফট পরিবর্তনের আগে বিদ্যুেকন্দ্রের জন্য পর্যাপ্ত কয়লা মজুদ রাখা হয়এবারও পিডিবিকে এক লাখ টনের বেশি মজুদ রয়েছে বলে খনি কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেগত সপ্তাহে পিডিবির সদস্য (উৎপাদন) সাঈদ আহমেদ বড়পুকুরিয়া পরিদর্শন করেন এবং কয়লাখনি এলাকায় ১০ হাজার টন কয়লার মজুদ পানসাধারণত কয়লাচালিত বিদ্যুেকন্দ্রের তিনটি ইউনিট একসঙ্গে চালানো হলে প্রতিদিন পাঁচ হাজার মেট্রিক টন কয়লার প্রয়োজন হয়বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে কয়লা হরিলুটের ঘটনা তদন্তে মাঠে নেমেছে দুদকদুদক উপ-পরিচালক শামসুল আলমের নেতৃত্বে গঠিত এই কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন সহকারী পরিচালক এ এস এম সাজ্জাদ হোসেন ও উপ-সহকারী পরিচালক এ এস এম তাজুল ইসলামউপ-পরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য জানান, দুদক পরিচালক কাজী শফিকুর আলমকে এই অনুসন্ধান কাজের তদারকির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছেতিনি বলেন, দুদক আইন অনুযায়ী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে অনুসন্ধান শেষ করে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে

কয়লা উধাওয়ের ঘটনায় খনির মাইনিং বিভাগের দায়িত্বে থাকা জিএম এ টি এম নুরুজ্জামান চৌধুরী ও ডিজিএম মো. খাদেমুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত এবং এমডি প্রকৌশলী মো. হাবীব উদ্দিন আহমদ ও সচিব (জিএম প্রশাসন) আবুল কাশেম প্রধানকে প্রত্যাহার করা হয়েছেঘটনাটি তদন্তে ইতিমধ্যে পেট্রোবাংলার একজন কর্মকর্তাকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে

বড়পুকুরিয়া খনির ওপর নির্ভর করে পাশেই কয়লাভিত্তিক ৫২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি গড়ে তোলা হয়বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে ২৭৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি ও ১২৫ মেগাওয়াট করে দুটি ইউনিট রয়েছে


শেয়ার করুন

0 facebook: