![]() |
স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ দলের
সর্বশেষ ঘোষণাপত্র, ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ এবং ভিশন-২০৪১’র আলোকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন করছে আওয়ামী
লীগ। বড় চমক দেখানোর টার্গেট হিসেবে ইশতেহারে টেকসই উন্নয়ন, সুশাসন,
দারিদ্র্য বিমোচন, দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, পুষ্টিকর নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত, দারিদ্র্যের হার ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা, দুর্নীতি-সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ-মাদকমুক্ত সমৃদ্ধির বাংলাদেশ গড়ার
প্রত্যয়ও থাকবে। ১ কোটি ২১ লাখ ৭৭ হাজার
ভোটার একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রথম ভোট দেবেন।
এটিসহ
দশ বছরে সোয়া দুই কোটির বেশি তরুণ ভোটারের জন্য নতুন সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সমাধানপথ
স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে ইশতেহারে। একই সঙ্গে থাকবে ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত দেশে পরিণত করার
অঙ্গীকার ও ধাপগুলো। অর্জন ও ব্যর্থতার পাশাপাশি শুধরে নেওয়ার লক্ষ্যে তুলে ধরা হবে
ভুলগুলোও। শুধু স্বপ্ন নয়, বাস্তবায়নের রূপরেখাও
থাকবে নির্বাচনী ইশতেহারে। এবারের ইশতেহারে সম্ভাব্য স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে ‘সমৃদ্ধির বাংলাদেশ’।
ইতোমধ্যে
ইশতেহার প্রণয়নে গঠিত আহ্বায়ক কমিটি কয়েক দফা বৈঠক করেছে। খসড়া ইশতেহার আগামী
২৬ অক্টোবর গণভবনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় দলের সর্বোচ্চ
নীতিনির্ধারণী ফোরামের এক যৌথসভায় উত্থাপন করা হবে। সেখানে প্রয়োজন হলে
পরিবর্তন, সংযোজন,
বিয়োজন করার পর চূড়ান্ত হবে নির্বাচনী ইশতেহার। ‘তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যতের জন্য বর্তমানকে উত্সর্গ করলাম’ শেখ হাসিনার এই উক্তিটিও ইশতেহারে থাকবে।
জানা
গেছে, কোন দল ক্ষমতায় বসবে তা ১৮ থেকে ২৮ বছরের ভোটারের সমর্থনেই ঠিক
হবে। ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনের পর থেকে এখন পর্যন্ত গত ১০ বছরে
প্রতি বছর গড়ে ২৫ লাখের মতো ভোটার অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন তালিকায়। এই সময়ে ভোটার বেড়েছে
২ কোটি ৩০ লাখ ৫৫ হাজার ৩৭৮ জন। গত ১০ বছরের নতুন ভোটারদের মধ্যে ১৮ বছরের ভোটার রয়েছেন ৪৬ লাখ, ১৯ ও ২০ বছরের ২৭ লাখ, ২১ ও
২২
বছরের ৩৭ লাখ, ২৩ ও ২৪ বছরের ৭০ লাখ, ২৬ বছর বয়সের ভোটার
রয়েছেন ৪৭ লাখ। বিগত বিভিন্ন সংসদ নির্বাচনের ভোটের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ৩ কোটি ৩৬ লাখ ভোট। আর বিএনপি পেয়েছিল
২ কোটি ২৭ লাখ ভোট। আর অষ্টম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি পেয়েছিল ২ কোটি ২৮ লাখ ভোট। আর আওয়ামী লীগ পেয়েছিল
২ কোটি ২৩ লাখ ভোট। সেই হিসাবে নবম থেকে ২০১৮ পর্যন্ত ভোটার তালিকায় যুক্ত হওয়া
তরুণ ভোটাররাই ক্ষমতায় যাওয়ার ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করবে। এক্ষেত্রে যারা যত
তরুণ ভোট টানতে পারবেন আগামীতে তারাই ক্ষমতায় যাবেন।
ভোটার
হালনাগাদের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দেশে ভোটার সংখ্যা
এখন ১০ কোটি ৪১ লাখ ৪২ হাজার ৩৮১ জন। শুধু এবার ২০১৮ সালে ভোটার তালিকায় যুক্ত হয়েছেন ৪৬ লাখ ৫৫ হাজার
৫৪৫ জন নতুন ভোটার। ২০১৭ সালে ভোটার বেড়েছে ১১ লাখ ৪৪ হাজার, ২০১৫ সালে ভোটার বেড়েছে ১৬ লাখ ৮ হাজার, ২০১৪ সালে ভোটার বেড়েছে ১৯ লাখ ৬৮ হাজার, ২০১৩ সালে ভোটার বেড়েছে ১৮ লাখ ৩০ হাজার, ২০১২-২০১৩ সালে ভোটার বেড়েছে ৭০ লাখ ৭৯ হাজার এবং ২০০৯-২০১০
সালে ভোটার বেড়েছে ৪৭ লাখ ৭৫ হাজার।
আওয়ামী
লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্রগুলো জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে
তরুণ ভোটারদের কাছে টানতে ইশতেহারে চমক দেখাবে আওয়ামী লীগ। শিক্ষিত তরুণ যুবকদের
কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি নিয়ে ভোটারদের কাছে যাবে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ নেতাদের
মতে, নবম সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার
প্রত্যয় ঘোষণা তরুণ সমাজ লুফে নেয়। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসীন হয় আওয়ামী লীগ। সরকারের প্রথম মেয়াদেই
এমন সব পদক্ষেপ নেওয়া হয় যার পরিণামে ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন আর স্বপ্ন নয় বাস্তব।
আওয়ামী
লীগের ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য
ড. আব্দুর রাজ্জাক। বিগত জাতীয় সম্মেলন কমিটিতে দলের ঘোষণাপত্র প্রণয়নকারীর প্রধানেরও
দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। আব্দুর রাজ্জাক গতকাল জানান, ২০১৬ সালের ২২ ও ২৩ অক্টোবর দলের কাউন্সিলে যে ঘোষণাপত্র প্রণয়ন
করা হয়, তার আলোকেই ইশতেহার প্রণয়ন করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে তথ্যের পরিসংখ্যান
আপডেট করা হবে। ২০২৩ সাল পর্যন্ত কী কী করা হবে তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা থাকবে
এবারের ইশতেহারে। দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে একটি গাইড লাইন
দিয়েছেন। বিভিন্ন বিষয়ে এক্সপার্ট (পারদর্শী) ব্যক্তিদের মতামত গ্রহণ
করা হচ্ছে।
জানা
গেছে, সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকার মান উন্নয়ন, নারীদের স্বাস্থ্যসেবা, গ্রামাঞ্চলের অর্থনীতির
উন্নয়ন, চরাঞ্চলের মানুষ ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ তরুণ উদ্যোক্তা তৈরি, গণতন্ত্র ও কার্যকর সংসদ এবং গণমুখী দক্ষ জনপ্রশাসন, প্রান্তিক জনগণের আধুনিক টেকনোলজির সব সুযোগ-সুবিধা ও ব্লু-ইকোনমি
বা সমুদ্র সম্পদ নির্ভর অর্থনীতির বিষয়টি নির্বাচনী ইশতেহারে প্রাধান্য পেতে পারে। আওয়ামী লীগের লক্ষ্য
২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে শান্তিপূর্ণ সমৃদ্ধ সুখী ও উন্নত জনপদে পরিণত করা। আর এ লক্ষ্য পূরণের
ধাপগুলো থাকবে এবারের ইশতেহারে। ইতোমধ্যে কয়েকটি অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা বলেছেন ‘গ্রামকে শহরের মতো আধুনিকায়ন’ করতে হবে। বড় শহরগুলো ছাড়াও পিছিয়ে
পড়া অঞ্চলগুলোকে এগিয়ে নিতে বড় চমকের ঘোষণা থাকবে ইশতেহারে। কৃষিভিত্তিক শিল্প
গড়ে তোলাও থাকবে নির্বাচনী অঙ্গীকার নামায়। এতে থাকবে ৮১ বছরের অর্থাত্ ২০১৯ সাল থেকে ২১০০ সাল পর্যন্ত
পরিকল্পনা। ‘তারুণ্যই শক্তি’ স্লোগান ধারণ করে নতুন ভোটারবান্ধব হবে এবারের নির্বাচনী ইশতেহার।
আওয়ামী
লীগের সিনিয়র নেতারা বলেন,
২০৩০ সালের মধ্যে আমাদের জিডিপির প্রায় ৫
শতাংশ আসবে সমুদ্র অর্থনীতি থেকে। গভীর সমুদ্রের বিশাল অংশ বাংলাদেশের জলসীমায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। নীল পানির নিচে লুকিয়ে
থাকা এসব সম্পদকে কাজে লাগাতে পারলে পাল্টে যাবে দেশের চেহারা। সমুদ্র অর্থনীতিতে
বিনিয়োগের নতুন দিগন্তে এখন বাংলাদেশ। বিশ্বের সম্পদশালী রাষ্ট্রগুলোও বাংলাদেশের ব্লু-ওসান ইকোনমি
বা নীল সমুদ্র অর্থনীতিতে সম্পৃক্ত হতে আগ্রহী। বঙ্গোপসাগরের অফুরান
সম্পদ কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে আহরণ সম্ভব হলে ১০ বছরের মাথায় বাংলাদেশের অর্থনীতি অভাবনীয়
উচ্চতায় পৌঁছবে। এই বিষয়টি আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে ইশেতেহারে রাখতে পারেন।
২০০৮
সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারের স্লোগান ছিল ‘দিন বদলের সনদ’। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনী ইশতেহারের স্লোগান ছিল ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’। এর মধ্যে ২০০৮ সালের ইশতেহারের শিরোনাম দিয়েই ব্যাপক সাড়া ফেলে
আওয়ামী লীগ। এর সঙ্গে ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশের কনসেপ্ট, আর ‘আমাদের বর্তমান তোমাদের ভবিষ্যতের জন্য উত্সর্গ করলাম’ উক্তিটি এবার আলোচনায় এসেছে। টানা দুই মেয়াদে ইশতেহার
বাস্তবায়নে অনেকটাই সফলতা দেখিয়েছে আওয়ামী লীগ।
খবর বিভাগঃ
জাতীয়
0 facebook: