![]() |
ছবিঃ সংগ্রহ |
স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ শেষ মুহূর্তের বোঝাপড়ার লড়াই। এক দিকে মনোনয়ন নিয়ে সহিংসতা, অপর দিকে আধিপত্য বিস্তার। সব মিলিয়ে ক্ষমতাসীনদের ঘরোয়া কলহ আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে বলে আশঙ্কা পুলিশ ও গোয়েন্দাদের। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে সরকারের সর্বোচ্চপর্যায়ে সতর্ক করা হয়েছে মাঠপর্যায়ের গোয়েন্দাদের পক্ষ থেকে।
নির্বাচনী সহিংসতা শুরু হয়েছিল রাজধানীর মোহাম্মদপুরে আওয়ামী লীগ নেতা সাদেক খানের সমর্থকদের মিছিলে হামলার মধ্য দিয়ে। গত ১০ নভেম্বর রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে সাদেক খানের সমর্থকেরা দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে যাচ্ছিছিলেন। তাদের বাধা দেয় জাহাঙ্গির কবির নানকের সমর্থকেরা। ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার সময় পিকআপ ভ্যানের চাপায় ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায় আরিফ ও সুজন নামে দুই কিশোর। নানক সমর্থক যুবলীগ নেতা তুহিনকে এই ঘটনায় গ্রেফতার করা হলেও ওই দিনই তার জামিন হয়।
দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রদানের পর গত সোমবার দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা-পাল্টাহামলা, প্রতিবাদ, সড়ক-মহাসড়ক অবরোধসহ নানা কর্মসূচি পালন করে মনোনয়ন বঞ্চিতদের সমর্থকেরা। ব্রাহ্মহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে মনোনয়ন না দেয়ায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঈন উদ্দিন সমর্থকেরা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে অবরোধ সৃষ্টি করে। জামালপুর-৫ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরিবর্তন করে রেজাউল করিম রেজনুকে দলীয় মনোনয়ন প্রদানের দাবিতে সড়ক অবরোধ ও কাফনের কাপড় পরে মানববন্ধন করেছে রেজনুর সমর্থকেরা। সড়ক, মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে অবরোধ সৃষ্টি করে তারা বিক্ষোভ করেন। ফরিদপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীকে মনোনয়ন না দেয়ায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে অবরোধ সৃষ্টি করেন তার সমর্থকেরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অনেক স্থানেই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে প্রত্যাশীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তাদের সমর্থকদের মধ্যেও একই ক্ষোভ। যেকোনো সময় তা বিস্ফোরিত হতে পারে। অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আপাতত চুপচাপ থাকলেও সুযোগ খুঁজছেন। সুযোগ পেলেই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মাঠে নেমে যাবেন। মাঠপর্যায়ের গোয়েন্দা রিপোর্টেও এ তথ্য রয়েছে বলে একটি গোয়েন্দা সূত্র নিশ্চিত করেছে।
নির্বাচনের বাইরেও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেও অনেক স্থানে ক্ষমতাসীনদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ সহিংস ঘটনা ঘটছে।
এ নিয়ে হতাহতের সংখ্যাও বাড়ছে। মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের প্রতিবেদন অনুযায়ী গত অক্টোবর মাসে দেশে রাজনৈতিক সহিংসতায় ১০ জন প্রাণ হারায়; যার মধ্যে ৭ জনই নিহত হয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে। আর আহত হয়েছে ২৯০ জন। অধিকারের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় ১০ বছর ধরে রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়নে প্রধানত জড়িত রয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগসহ এর বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা, নারীর প্রতি সহিংসতা ভিন্ন মতাবলম্বীদের ওপর নিপীড়ন, বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, জমিদখলসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তি বাণিজ্যের অভিযোগ আছে। এ ছাড়া তারা নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট দ্বন্দ্বের কারণে বিভিন্ন মারণাস্ত্র ব্যবহার করে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে এবং একে অপরকে হত্যা করছে।
গত ১৬ নভেম্বর নরসিংদীর রায়পুরায় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে তোফায়েল রানা নামে এক স্কুলছাত্রসহ চারজন নিহত হয়। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রায়পুরার চরাঞ্চলের বাঁশখালীতে দিনভর এই সংঘর্ষ হয়। স্থানীয় সূত্র বলেছে, এখনো ওই এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। সাধারণ মানুষ চরম ভয়ের মধ্যে আছেন। প্রতিপক্ষ দু’টি গ্রুপ এখনো প্রস্তুত রয়েছে। আবারো সেখানে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে খুনাখুনির ঘটনা ঘটতে পারে বলে স্থানীয়রা আশঙ্কা করেছেন।
রাজধানীর কোনো কোনো এলাকায়ও ক্ষমতাসীনদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল চাঙ্গা দিয়ে উঠেছে। ইতঃপূর্বে রামপুরা, বাড্ডা, যাত্রাবাড়ী, পুরান ঢাকার কয়েকটি স্থান, উত্তরা ও মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় সহিংস ঘটনা ঘটেছে ক্ষমতাসীনদের মধ্যে। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ওই সব এলাকায় আবারো সহিংস ঘটনা ঘটতে পারে। কামরাঙ্গিরচর এবং কেরানীগঞ্জেও সহিংস ঘটনার আশঙ্কা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানান, সহিংস ঘটনা ইতঃপূর্বে যেগুলো ঘটেছে তার সব ক’টিতেই মামলা হয়েছে। আসামিরাও গ্রেফতার হয়েছে। পুলিশের অপর এক কর্মকর্তা বলেন, এরূপ আশঙ্কার খবর তাদের কাছেও রয়েছে। ওভাবেই নজর রাখা হচ্ছে।
0 facebook: