01 April 2019

যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম নারীকে প্রকাশ্যে হিজাব খুলতে বাধ্য করা হয়


আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম নারী সেনাকে প্রকাশ্যে হিজাব খুলতে বাধ্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এ জন্য ২৬ বছর বয়সী ওই তরুণী তার ঊর্ধ্বতন এক নারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করবেন।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেসিলিয়া ভ্যালডোভিনাস নামে ওই তরুণীর অভিযোগ, কলোরাডো রাজ্যে দায়িত্ব পালনকালে অন্য সেনাদের সামনে তাকে প্রকাশ্যে হিজাব খুলতে বাধ্য করেন সেনা কমান্ড সার্জেন্ট মেজর কার্সটেইন মানটোয়া।

গত ৭ মার্চ মার্কিন সেনা সদস্যদের জন্য ‘সমান সুযোগ অফিসে’ অভিযোগ দায়ের করেন সেসিলিয়া। কিন্তু সামরিক বাহিনী তার অভিযোগকে ‘অপ্রমাণিত’ উল্লেখ করে অপসারিত করে দেয়। পরে তার পক্ষ নেয় মার্কিন দ্য মিলিটারি রিলিজিয়াস ফ্রিডম ফাউন্ডেশন (এমআরএফএফ)। ঘটনার পর পরই তাকে বিশেষজ্ঞদের কাছে প্রেরণ করা হয়।

সেসিলিয়ার এই ঘটনার পর মুখ খুলেছেন অনেক নারী সেনা সদস্যরা। সামরিক বাহিনীতে হিজাব পরিধানের অনুমোদন থাকা সত্ত্বেও, সাবেক এক নারী সার্জেন্ট বলছেন, কমান্ড সার্জেন্ট মেজরদের কাজ থেকে তিনি বেশিরভাগ হয়রানির শিকার হয়েছেন।

গত বছর কর্নেল ডেভিড জিন সেসিলিয়াকে পোশাকের সঙ্গে হিজাব পরার অনুমতি দেন। কিন্তু সেসিলিয়া জানান, অনুমতি পাওয়ার পরও হিজাব পরার কারণে তার সঙ্গে ‘অত্যন্ত ঘৃণ্য’ ব্যবহার ও হেনস্থা করা হয়েছে। আর তাই তিনি এখন মামলা করতে ইচ্ছুক।

সেসিলিয়া বলেন, ‘আমাকে সন্ত্রাসী পর্যন্ত বলা হয়েছে। আমাকে আইএস বলেও ডাকা হয়েছে। আমি এমনও শুনেছি, আমার কারণে ৯/১১ এর হামলা হয়েছে। সেখানে অনেক রাগ ও বিদ্রোহ ছিল।’

হিজাব খোলার ঘটনাকে ধর্মীয়ভাবে একটি অর্থে ধর্ষিত করা হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘আমার ধর্মে বলা হয়েছে কেবল নিজের স্বামীর সামনে বেপর্দায় থাকতে নিজের বাড়িতে!’

এদিকে মিকি ওয়েইন্সটেইন নামে এক সেনা সদস্য বলেন, ‘কর্মক্ষেত্রে একাধিকবার মুসলিম নারী সেনারা কমান্ড সার্জেন্ট মেজর মানটোয়া হেনস্থা করেছেন।’

সেসিলিয়া হিজাব দিয়ে মাথার চুল ঢাকাকে মন্টোয়া সামরিক আইন লঙ্ঘন বলে দাবি করেছিলেন। নারী সেনাসদস্য মন্টোয়ার প্রসঙ্গে মিকি আরও বলেন, ‘তার মনে হয় এক্স-রে দৃষ্টি আছে। না হলে তিনি কীভাবে বুঝলেন হিজাবের নিচে চুল নেমে আছে।  কিন্তু সেসিলিয়ার চুল নেতানো ছিলো না।’

২০১৭ সালে ধর্মীয় পোশাক যেমন পাগরি এবং হিজাব পরিধানের সুযোগ দিয়ে মার্কিন সামরিক বিধি আপডেট করা হয়।

এদিকে অভিযোগ অপসারিত হওয়ার পর, সেসিলিয়াকে বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠানো হয়। এতে তার বেতনের একটি বড় অংশ ব্যয় হয়।

সেসিলিয়া জানান, ঘটনাটি তাকে এবং তার সাত বছরের মেয়েকে বাড়তি হয়রানি করার লক্ষ্যবস্তু করেছে।

ইতিমধ্যেই এমআরএফএফ মার্কিন সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে ইসলামপন্থী হয়রানি, বর্বরতা এবং সবচেয়ে খারাপ ধরনের পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

সেসিলিয়া জানান, নিজের সামরিক কর্মজীবন অব্যাহত রাখতে চান।  তিনি আশা করেন, বৈষম্যর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলার মাধ্যমে সামরিক বাহিনীতে থাকা অন্যান্য মুসলিম নারীদের জন্য তিনি অনুপ্রেরণা হয়ে দাড়াবেন।


শেয়ার করুন

0 facebook: