চিফ ইডিটর।। কয়েক সপ্তাহ আগে তুরস্কের শিক্ষা মন্ত্রণালয় দেশের শিক্ষার্থীদের পারফরম্যান্স নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ফল ছিল পূর্বের তুলনায় ছিলো কম। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই সঠিক পারফরম্যান্স দেখাতে পারছেন না। ইসলামিক বিশেষজ্ঞরা এর দায় দিচ্ছেন তুরস্কে হু হু করে বেড়ে চলা স্যাকুলার সমাজ কে।
অথচ অনেক কাটখড় পুড়িয়ে তুরস্ক জুড়ে শত শত ইমাম হাতিপ স্কুল স্থাপন করেছে তুরস্ক। কিন্তু ইসলামিক তুরস্ক ও এরদোগান বিরোধীদের হাস্যকর দাবি, এই ইসলামিক স্কুলগুলোই নাকি এমন অবস্থার জন্য দায়ী।
এই স্কুলগুলোতে মূলত জোর দেয়া হয় আল কুরআন এবং আখেরী নবী রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শিক্ষার ওপর। শুরুতে শুধু ইমামদের শিক্ষা দেয়ার জন্য স্কুলগুলো চালু করা হয়েছিলো একেপির পক্ষ থেকে, তবে টার্কিশ সমাজ কে চিন্তাশীল করার নিমিত্তে এই স্কুলগুলোকে সাধারণের মধ্যেও ছড়িয়ে দেয়ার কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে।
উন্নত মানুষ গড়ার প্রয়াসে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই স্কুলগুলো পুরো দেশজুড়ে চালু করার চেষ্টা করে যাচ্ছে তুরষ্ক সরকার। জাতীয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ইমাম হাতিপ গ্রামার স্কুলের সংখ্যা পাঁচ বছরে বেড়ে ৫৩৭ থেকে দাঁড়িয়েছে ১৬০৫-এ৷ এসব প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছেন ছয় লাখ ২০ হাজার শিক্ষার্থী।
এই সব স্কুলকে সুবিধা দিতে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন স্কুলেও আনা হয়েছে পরিবর্তন। অধিকাংশ স্কুলে ধর্মীয় এবং সাধারণ, এই দুইভাগে আলাদা সেশন চালু করা হয়েছে যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
তবে সরকারের এই ভালো সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেও আন্দোলনে নেমেছেন অনেক স্যাকুলার অভিভাবক, তাদের একজন পেরিহান ও্যসগ্যুন। তার দাবি, যারা ধর্মীয় শিক্ষার দিকে যেতে চায় না, তাদের জন্য সমান সুযোগ রাখা হচ্ছে না। ধর্মীয় অংশের ক্লাসরুমগুলো ভালে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং বেতনও রাখা হয়েছে কম। (পাঠক মহলের কাছে প্রশ্ন, একটি শিশু শিক্ষার্থী ধর্মীয় শিক্ষার দিকে যেতে চাইবেনা কেনো?)
স্যাকুলার ধর্ম বিদ্বেষী সমালোচকেরা এতেই ক্ষ্যান্ত নয়, বরং শিক্ষাব্যবস্থার হঠাৎ এই পরিবর্তনের কারণেই শিক্ষার্থীদের পারফরম্যান্সে ধস নেমেছে বলে তারাও উদ্ভট দাবি করেছে। উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য তুরস্কের শিক্ষার্থীদের টার্কিশ সেন্ট্রাল এগজাম পাস করতে হয়। ইমাম হাতিপ স্কুলগুলো থেকে আসা শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই এই পরীক্ষায় খারাপ ফল করেন, এর কারণ খুজতে গিয়ে দেখা গেছে যে, খারাপ ফল যারা করছে তারা পারিবারিকভাবে ধর্ম বিদ্বেষী যার কারনে ইসলামিক পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারছেনা ইমাম হাতিপ স্কুলে।
জাতীয় শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে এই স্কুলগুলো থেকে আসা শিক্ষার্থীদের মাত্র ৩৮ শতাংশ ২০১৮ সালের পরীক্ষায় পাস করে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য যোগ্যতার মাপকাঠিতে বিবেচিত হয়েছেন। অন্য স্কুলগুলোর তুলনায় এ হার খুবই কম তাদের মতে।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোগান নিজেও ১৯৬০ সালের দিকে ইস্তানবুলের ইমাম হাতিপ স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। তখন এ ধরনের স্কুলের সংখ্যা খুবই কম ছিল। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ ধরনের স্কুলকে মূলধারার স্কুলে পরিণত করার উদ্যোগ নিয়েছেন সুলতান এরদোয়ান কারণ আসকের সুলতান এরদোগানের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পিছনে এই ধারার লেখাপড়ার রয়েছে সর্বচ্চ অবদান।
এর আগেও প্রায়ই এরদোয়ান বলেছেন, তুরস্কে একটি ধর্মভিরু প্রজন্ম গড়ে উঠুক, এটিই উনার লক্ষ্য। কিন্তু স্যলুলার-রা বলছে যে, স্কুলগুলোর শিক্ষাব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করে তিনি বরং একটি রক্ষণশীল মুসলিম প্রজন্ম গড়ে তোলার দিকেই বেশি মনোযোগ দিয়েছেন।
খবর বিভাগঃ
আন্তর্জাতিক
তুরস্ক
0 facebook: