পাকিস্থানের সেনাপ্রধান ও ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী |
আন্তর্জাতিক ডেস্ক।। ভারতের কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং অদ্ভুত এক কথা বলেছে, তার সেই শিশুসলভ আচরণে বুদ্ধিজীবী মহলে প্রশ্নের উদয় হচ্ছে যে এরকম একজন মাথামোটা লোক কিভাবে ভারতের কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী হয়। রাজনাথ বলেছে যে, পাকিস্তানের সঙ্গে কথা হলে এবার কেবলমাত্র পাক অধিকৃত কাশ্মীর নিয়েই কথা হবে। আজ (রোববার) হরিয়ানার পঞ্চকুলায় ওই মন্তব্য করে সে।
পাক অধিকৃত কাশ্মীর নিয়ে কি কারনে কথা হবে এটা কোন আন্তর্জাতিক বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মাথায় আসছেনা। কারণ সমস্যা রানিং অবৈধ দখলদার ভারতের অধীনে থাকা কাশ্মীর নিয়ে, পাক অধিকৃত কাশ্মীর নিয়ে নয়।
রাজনাথ বলে, ‘জম্মু-কাশ্মীরের উন্নয়নের জন্যই ৩৭০ ধারা বাতিল করা হয়েছে। আর আমাদের প্রতিবেশী আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়গুলোর কাছে বলছে যে ভারত ভুল করেছে। আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে তখনই কথা বলব, যখন ওরা সন্ত্রাসে (মূলত স্বাধীনতাকামীদের) মদদ দেয়া বন্ধ করবে। আর কথা যদি হয়, তাহলে এখন কেবলমাত্র পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর নিয়েই হবে।’
এর আগে গত (শুক্রবার) রাজনাথ সিং বলেছিল, ‘ভারত নীতিগতভাবে পরমাণু অস্ত্রের প্রথম ব্যবহারকারী হওয়ার বিপক্ষে। এতদিন তা মেনে আসা হয়েছে। কিন্তু ভবিষ্যতে কী হবে, তা পরিস্থিতির উপর নির্ভর করছে।’
রাজনাথের ওই মন্তব্যের পরেই নানা জল্পনা কল্পনা ছড়ায় বিশ্বে। বিশ্লেষকরা মনে করছে, প্রয়োজন হলে ভারত পুরোনো নীতি আঁকড়ে থাকবে না। আত্মরক্ষার জন্য অন্য কারো পরমাণু হামলার অপেক্ষায় না থেকে প্রথমেই পরমাণু আঘাত হানতে পিছপা হবে না।
ভারতের প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলে, ‘ওই মন্তব্যে দেশবাসী সংশয়ে। পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে নীতির পরিবর্তন হলে কেন্দ্রীয় সরকার তা দেশকে জানাক।’
এদিকে, রাজনাথের ওই মন্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে পাকিস্তান। পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথের মন্তব্যকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ ও ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে অভিহিত করেছেন। তার অভিযোগ, নেহেরুর রাষ্ট্রনীতি থেকে অনেকটাই সরে এসেছে মোদীর ভারত।
অন্যদিকে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান পরমাণু যুদ্ধ নিয়ে বিশ্বকে সতর্ক হতে বলেছেন। তার ধারণা, কাশ্মীর থেকে গোটা বিশ্বের নজর ঘোরাতেই ভারত পরমাণু যুদ্ধ বাধিয়ে দিতে পারে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইমরান খান আজ বলেন, ‘ভারতের পরমাণু অস্ত্রসম্ভারের নিরাপত্তার দায়িত্ব এখন ফ্যাসিস্ট, বর্ণবাদী, হিন্দু আধিপত্যবাদী নরেন্দ্র মোদী সরকারের হাতে। এ ব্যাপারে গোটা পৃথিবীর নজর দেয়া উচিত। এটা এমন একটা বিষয় যার অভিঘাত শুধু এ অঞ্চলে সীমাবদ্ধ নয়, এর অভিঘাত বিশ্ব জোড়া।’
গতকাল (শনিবার) পাক সেনাবাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল আসিফ গফুর বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমাদের সন্দেহটা সম্প্রতি খুবই জোরালো হয়েছে যে, কাশ্মীর থেকে গোটা বিশ্বের নজর ঘোরাতে বড়সড় পরমাণু হানাদারি চালাতে পারে ভারত। কিন্তু সেজন্য আমরা সম্পূর্ণ তৈরি রয়েছি।’
পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দাবি, ‘ইতোমধ্যেই ৪০ লাখ ভারতীয় মুসলিমকে ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে এবং তাদের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছে। বিশ্বকে জানা উচিত ‘দৈত্য’ এখন বোতলের বাইরে বেরিয়ে পড়েছে এবং যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ অবস্থা বন্ধ করতে পদক্ষেপ না করে তাহলে আরএসএসের গুণ্ডারা ঘৃণা ও গণহত্যার মতবাদ ছড়িয়ে দেবে।’
এর আগে পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছিলেন, ‘জার্মানিকে যেমন নাৎসিরা অধিকার করে নিয়েছিল, তেমনভাবেই ভারত এখন ফ্যাসিস্ট, বর্ণবাদী, হিন্দু আধিপত্যবাদী আদর্শ ও তার নেতৃত্বের দখলে চলে গেছে। এরফলে দু’সপ্তাহ ধরে ৯০ লাখ কাশ্মীরি কার্যত আটক রয়েছেন। এ ঘটনায় গোটা বিশ্বের বিপদঘণ্টা বাজানো উচিত। একইসঙ্গে জাতিসঙ্ঘের উচিত এখানে পরিদর্শক পাঠানো।’
এ ব্যাপারে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ‘বন্দি মুক্তি কমিটি’র সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য ভানু সরকার আজ (রোববার) রেডিও তেহরানকে বলে, আমরা মানবাধিকার কর্মীরা সবসময় বলব আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে কাশ্মীর সমস্যার সমাধান হোক। পরমাণু অস্ত্র, যুদ্ধের হুমকি, হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ সেনা কোনও কিছুই পাঠিয়ে স্বাধীনতার স্বপ্নকে দমিয়ে দেয়া যায় না।’
‘কাশ্মীরের সমস্যা রাজনৈতিক। রাজনৈতিক সমাধানের জন্যই আলাপ-আলোচনা প্রয়োজন’ বলেও ভানু সরকার মন্তব্য করেন। #পার্সটুডে।
খবর বিভাগঃ
আন্তর্জাতিক
কাশ্মীর
পাকিস্থান
ভারত
0 facebook: