10 November 2017

যৌবনের পূর্ন রেশ চল্লিশেও ছিলো বিদ্যমান, এটাই আলেয়ার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়ঃ পুলিশ সুপার আশিস

ছবিঃ ধর্ষক টুটুল গ্রেফতার এর সময়
উরু পর্যন্ত শাড়ি পেটিকোট উঁচু করে ধান ক্ষেতের ভিতর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন মাঝ বয়সী এক নারীতার নাম আলেয়া বয়স চল্লিশ ছুঁই ছুঁই বয়স বাড়লেও দুই সন্তানের জননী আলেয়ার শরীর ভেঙ্গে পড়েনিএখনও যৌবনের পূর্ন রেশ শরীরে রয়েই গেছেকে জানতো তার সুগঠিত অববয়ই কোন নরপশুর লোলুপ দৃষ্টি কাড়বে; অতঃপর নির্জন বিলে ধর্ষনের শিকার হয়ে লাশ কাটা ঘরে পড়ে থাকবে তার পঁচা গলা নিথর দেহটি

ঘটনার ভিতরে যাওয়া যাকঃ গত ০৩/১১/২০১৭ তারিখে সাঁথিয়া থানায় একটি নিখোঁজ জিডি এন্ট্রি করা হয়যার নম্বর-১০২জিডিতে মোঃ আরদোশ মল্লিক(৫০), গ্রাম-চর পাইকরহাটি, সাঁথিয়া জানান, গত ০১/১১/১৭ তারিখে তার স্ত্রী চরপাইকরহাটি, কুমিরবিলের পাশের ঈদগাহে লাকড়ি কুড়াতে যায়এরপর সে আর ফেরত আসেনিজিডি এন্ট্রির পর এসআই রাশেদ, সাঁথিয়া থানা ঘটনাস্থলে যানগিয়ে জানতে পারেন পার্শ্ববর্তী ডোবার মধ্যে নিখোঁজ মহিলার পরণের শাড়ি পাওয়া গেছে

বিষয়টি আমার মনে দাগ কাটে০৪/১১/১৭ইং তারিখ আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে শাড়িটি দেখিআশেপাশের লোকজনের সাথে কথা বলিজায়গাটি একদম নির্জন নিঝুমমূল গ্রাম থেকে সামান্য বাইরেযেখানে ঈদগাহ তার ঠিক সামনেই পূর্ব দিকে ১০ বিঘার একটি বিশাল পুকুরপশ্চিম ও দক্ষিন পাশ জুড়ে বিশাল বিলউত্তর দিকে প্রায় ৩০০ মিটার দূরে মূল গ্রামঐ জায়গায় দিনের বেলা গেলেও গা ছম ছম করেথাক সে কথা, ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রচুর উৎসুক জনতা পাইমহিলার ঝাড়ু দেবার ঝাটা ঈদগাহের দেয়ালের পাশে পড়ে থাকতে দেখি শাড়ি যে ডোবায় ছিল সেই স্থান পরিদশন করিকিন্তু মহিলার সন্ধান কেউ দিতে পারে নাহঠাৎ ভীড়ের মধ্যে থেকে শোনা যায়, খালের ওপারে কাউকে টেনে বিলের ভিতরে নেবার মত দাগ আছেকিন্তু ওখানে যেতে হলে বুক সমান পানি পার হয়ে যেতে হবেগ্রামবাসী একজনের কাছে লুঙ্গি চেয়ে নিয়ে আমি নিখোঁজ মহিলার দেবর রেজাউলকে সাথে নিয়ে খাল পাড়ি দিয়ে অপেক্ষাকৃত উঁচু জমিতে গেলে অজস্র পায়ের ছাপ দেখিরেজাউল জানান যে, গ্রামের শত শত লোক গত ২দিন ধরে বিলের ভিতর নেমে কোন কিছু পাওয়া যায় কিনা তার সন্ধান করেছেএগুলো তাদের পায়ের ছাপতারপরেও ভালোভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাচ্ছে, কাউকে টেনে নেবার দাগএরপর সন্দেহ আরো ঘনিভূত হয়কিন্তু কোন কূল কিনারা পাওয়া যাচ্ছিল নাপূনরায় ডাঙ্গায় ফিরে আসিমহিলার সম্পর্কে খোঁজ নিতে শুরু করি

আলেয়ার লাশ উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে
মহিলা দরিদ্র আরদোশ মল্লিকের স্ত্রী০১/১১/১৭ তারিখ সকালে খড়ি কুড়াতে বাড়ি থেকে বের হয়পথে মিলন নামের এক ছেলের সাথে দেখা হয়সে আখ থেকে গুড় বানাচ্ছিলতার কাছ থেকে ২ টুকরো আখ চেয়ে নেয়এরপর বিলের পাশে ঈদগাহের দিকে চলে যানএতটুকু জানার পর মিলনকে খুঁজে বের করিসে আমার অফিসে এসে সাবলীলভাবে জানায় যে, সে কিছুই দেখেনি, তবে তার গ্রামের ইন্দাই তাকে সকাল দশটা/এগারোটার দিকে বলেছিল ঈদগাহের পাশের জমিতে কিছু একটা নাকি দেখতে পেয়েছিলকিন্তু তারা দুজন ঈগাহের কাছে গিয়ে কিছু না পেয়ে ফিরে এসেছেএছাড়া সে আখ ভাঙ্গানোর সময় শুধু নিখোঁজ আলেয়ার ভাই বউকে পাশ দিয়ে পুকুরে কাপড় কাচতে যেতে দেখেছেআর একজন টুটুল (৩০) নামের একটা ছেলে এক টুকরা আখ তার কাছ থেকে চেয়ে নিয়ে ঐ দিকে গিয়েছিল

আমি এবার ইন্দাই আর কাপড় কাঁচা মহিলার খোঁজ নিতে শুরু করিকেননা টুটুল শুনেছি ঢাকায় চাকুরি করেসে ঢাকায় চলে গেছেতাই তাকে আপতত খোঁজা বন্ধ করি এবার ইন্দাইকে আমার সার্কেল অফিসে ডাকি

ইন্দাই আমাকে জানায়, ঈদগাহের সামনের পুকুরপাড়ে তার সবজি বাগান পরিষ্কার করছিলতার টয়লেট চাপলে পুকুরের পূর্ব পাড়ের বাঁশঝাড়ে যায়হঠাৎ ঈদগাহের দক্ষিনের নিচু জমিতে কাউকে নড়তে দেখেআর মনে হচ্ছিল কেউ একজন বুঝি কাউকে জড়াজড়ি করছেসে ভাবে গ্রামের কোন প্রেমিক-প্রেমিকা হয়তো গোপনে শারীরিকভাবে মিলিত হচ্ছেসে তাড়াতাড়ি টয়লেট সেরে পুকুর পাড় বেয়ে এসে আখ ভাঙ্গানোর স্থানে থাকা মিলনকে ডাকেমিলন তখন খাবার খাওয়ার জন্য পুকুরে হাত ধুচ্ছিলসে মিলনকে বিষয়টি জানায়দুইজন এগিয়ে গিয়ে কিছুই দেখতে পায় নাপরে হাসি ঠাট্টা করে ফেরত চলে আসেপরে সে শুধু শুনেছে টুটুল আরও কিছুক্ষন পরে এসে মিলনের কাছে বলেছে তার একটা চশমা হারিয়েছে, তারা কেউ পেয়েছে কিনা?

ধর্ষক ও খুনি টুটুল কে গ্রামে নিয়ে আসার পর
এরপর যে মহিলা কাপড় কাঁচতেছিল তার সাথে দেখা করার জন্য আবার পাইকরহাটি গ্রামে যাইসে জানায়, কাপড় কাঁচতে যাওয়ার পথে মিলনকে আখ ভাঙ্গাতে দেখেছেপরে টুটুল পুকুর পাড় দিয়ে যাওয়ার সময় তার সাথে ঠাট্টা মসকরা করে চলে যায়দেবর হিসেবে কিছু রসাত্মক কথা বলেপ্রচুর কাপড় ছিলো কাঁচতে দেরী হয়পরে ভেজা কাপড়ে টুটুলকে ফিরতে দেখেকিন্তু এবার সে ডাকলেও টুটুল ব্যস্ততার কথা বলে চলে যায় তিন জনের কথা শোনার পর টুটুলের প্রতি আমার তীব্র আগ্রহ জন্মায়

আমি মাননীয় পুলিশ সুপার মহোদয় জনাব জিহাদুল কবির, পিপিএম ও অতিঃ পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস ‘‘স্যারকে বিষয় গুলি জানাইতাঁরা আমাকে লেগে থাকার পরামর্শ দেনকেউ আমাকে বলেছিল ঘটনাস্থলে যত বেশি বেশি যাবে, ততবেশি বেশি রহস্য উন্মোচনের দিকে এগিয়ে যাবেআমি আবার বিলের মধ্যে যাইআবার বিলে নামিঐ দিন মসজিদে মাইকিং হয়বিলের অনেকটা জুড়ে সকালে সবাই ধানক্ষেতে তল্লাশি চালায়, কিছুই পায় নাতারপরও পুনরায় আমি নামিপ্রায় আধা কিলো বুক পানির ভিতর দিয়ে বিলের ভিতর যাই কোন আলামত পাই কিনা? বিলের মধ্যখানে কচুরিপানা ভর্তি ডোবা দেখতে পাইআমার সাথে পথ দেখা হয় নিখোজেঁর দেবর রেজাউলেরকিছু না পেয়ে ঘন্টা ২ পর আমি আবারো ফিরে আসিতখন সুরমান নামে এক ব্যক্তি আমাকে বলে যে, ঐ দিন সে উচুঁ জমিতে বিলের মধ্যে ঘাস কাটছিলবেলা ১১টার দিকে টুটুল এসে তাকে বলে তুমি কি আমার চশমা দেখেছোসে বলে আমি কিভাবে তোর চশমা দেখবোটুটুল বলে তোমার বোঝা তুলে দেই, তুমি বাড়ি যাওসে জানায় ঘাস কাটাই শেষ হয়নি তো বোঝা নিয়ে যাবো কেনএরপর টুটুল চলে যায়এতটুকু শুনে আমি উপরে উঠে ইন্দাইকে নিয়ে পুকুর পাড়ে হাঁটতে থাকিবাঁশঝাড়ে গিয়ে ইন্দাই তার টয়লেটের চিহৃ দেখায়আমি সব ঘৃনা, দুর্গন্ধ ভুলে তা দেখতে যাইকারন বিষয়টা আমার মধ্যে একটা নেশার জন্ম দিয়েছিল ঐখানে দাঁড়িয়ে বুঝতে পারি যে, ওখান থেকে পুকুরের অপর পাড়ে আসতে বেশ সময় লেগেছিলতাই মিলন আর ইন্দাই এসে কিছুই দেখতে পায়নি সন্ধ্যার দিকে ফেরার পথে হেলাল নামে একজন আমাকে বলে, ঐ দিন সন্ধ্যার সময় টুটুলকে বিলের পূর্ব পাশে স্কুলের মাঠের কোনায় একা বসে থাকতে দেখেছেআমার টুটুলের প্রতি আগ্রহ বাড়তেই থাকে

এরপর আমি টুটুলের ফোন নম্বর জোগাড় করিপ্রথমে ফোন দিলে সে ধরে নাতার ভাগ্নে হাফিজকে দিয়ে ফোন করাই এরপর ০৭/১১/১৭ তারিখে সকালে সে আমাকে ফোন করে জানায় যে, তার ছুটি শেষ হয়ে গেছেসে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে চাকুরি করেতার পক্ষে এখন আসা সম্ভব নয়আমি বিনয়ের সাথে তাকে বুঝাই যে না এলে এলাকার লোকজন হয়তো তাকে সন্দেহ করবেসে এক ব্যক্তিকে ফোনটা ধরিয়ে দিয়ে বলে, কথা বলেনতিনি জানান যে, টুটুল তার কর্মচারীতার নির্ধারিত ছুটি অবশিষ্ট নাইঅলরেডি এবার ছুটিতে গিয়ে সে ওভার স্টে করে এসেছেআমি পুরো বিষয়টি বুঝিয়ে বললে, তিনি টুটুলকে ছাড়তে রাজি হন

বিকেলে বেলা এলাকার স্থানীয় নেতাকে দিয়ে টুটুল আমাকে ফোন করানআমি নেতাকে আশ্বস্ত করি যে, কোন মামলা হয়নিতাকে গ্রেফতারও করা হবে নাশুধু ঐ দিন সে কি দেখেছে তা জানা দরকারএরপর শুরু হয় আসল নাটক। সন্ধ্যা ৬টার দিকে চমৎকার একটি চশমা পরা সুদর্শন যুবক আমার অফিসে প্রবেশ করে জানায় তার নাম টুটুলআমি তাকে সাদরে বসতে দেইতার ফোনটি হাতে নিয়ে দেখতে থাকিকুশলাদি বিনিময় শেষে তাকে কিছুই জিজ্ঞেস না করে সাদা কাগজে তার নাম-ঠিকানা লিখতে বলিসে খুব দ্রুত তার ঠিকানা লিখে দেয়এরপর কাগজ কলম দিয়ে বলি ০১/১১/১৭ তারিখ বুধবার ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে সে পরদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠা পর্যন্ত কি কি করেছে তা আমাকে লিখে দিতে হবেতখন সে জানায়, সে লিখতে পারে না, তবে যা যা জানে তা বলতে পারবো আমি তাকে বলি যে, ‘‘আপনি না লিখতে পারলে নাম-ঠিকানা এত দ্রুত লিখলেন কিভাবে? যতই সময় লাগুক আপনি লেখেন, কোন সমস্যা নাই পুরো ৩ ঘন্টায় সে ১৪ লাইন লেখেযেখানে মূল ঘটনার ধারের কাছেও সে যায় না, এই ঠান্ডা ঠান্ডা আবহাওয়ার মধ্যেও ফ্যানের নীচে বসে ঘামতে থাকে তখন আরো নিশ্চিত হই যে সে কিছু লুকাচ্ছে সময় নষ্ট না করে এবার তাকে ঘটনার বর্ননা করতে বলিসে জানায় জমি দেখতে বিলের পাড়ে গিয়েছিলসেখানে তার চশমা হারিয়ে গেলে খুঁজে না পেয়ে সে চলে এসেছেপরে শুনেছে আলেয়াকে (তার চাচাতো ভাবিকে) পাওয়া যাচ্ছে নাএর বেশী তার জানা নাই

এবার তাকে প্রশ্ন শুরু করিঃ তার চশমা কিভাবে হারালো কিভাবেসে জানায় চশমা খালের পাড়ে খুলে সেন্ডেলের উপর রেখে জমি দেখতে গিয়েছিলআমার অবাক লাগে মানুষ কিছু দেখতে গেলে চশমা পড়ে আর সে চশমা খুলে দেখতে গেছেএর কারণ জানতে চাইলে সে বলেআমার চশমায় তো পাওয়ার নাই; পরলেও যা না পরলেও তাআমি জানতে চাই, তবে এখন আপনার চোখে চশমা কোথা থেকে এলসে বলে চশমা পড়তে পড়তে অভ্যেস হয়ে গেছে না পড়লে অস্বস্তি লাগে তাই নিজের মেয়ের চশমা পড়ে আমার অফিসে এসেছেএতে আমার অবাক লাগে যে, চশমা না পড়লে অস্বস্তি লাগলে জমি দেখতে গিয়ে সে চশমা খুলে রাখবে কেন? সে কোন উত্তর দিতে পারেনিএরপর তাকে বলি, সুরমানের কাছে কেন গিয়েছিলেন? সে জানায় সুরমান তাকে জমি কেনার ব্যাপারে ডেকেছিলকিন্তু আমি আগেই সুরমানের কাছে শুনেছি, এমন কোন কথাই হয়নিআসার পথে তার জামা-কাপড় ভেজা কেন ছিল, জানতে চাইলে জানায়, গোসল করেছিল তাইসে বলে, বড় পুকুরটিতে নাকি গোসল করেছেঅথচ পাশেই যে মহিলা কাপড় কাঁচতেছিলেন, তিনি তাকে দেখেন নাইতাছাড়া গোসলে গেলে লুঙ্গি-গামছা থাকার কথা সেগুলো কেন নেয়নিএর কোন উত্তর সে দিতে পারে নিএরপর তাকে আমি শত চাপাচাপি করলেও আমার কথার সে কোন উত্তর দেয়নি

এদিকে কোন মামলাও এখনও রুজু হয়নিমহিলা মারা গেছে কিনা তারও প্রমান নেইএমতাবস্থায়, আমি সিদ্ধান্ত নিতে না পেরে অতিঃ পুলিশ সুপার, গৌতম স্যারকে জানাইতিনি এসপি স্যারের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেনএসপি স্যার বলেন আরো জিজ্ঞেস করোপ্রয়োজনে মামলা নিয়ে আটক করোতিনি জিজ্ঞেসাবাদে সাহায্যের জন্য ইন্সপেক্টর(তদন্ত) জনাব আব্দুল মজিদ সাহেবকে আমার কাছে নিয়ে আসতে বলেন

এরপর আমি বুঝতে পারি এভাবে চললে কিছুই পাবো নাআমি গোপনে মোবাইলের ক্যামেরায় টুটুলকে কয়েক সেকেন্ড ভিডিও করিকিছুক্ষন পর তাকে ঐটুকু দৃশ্য দেখাই আর বলি যে, আপনি যা করেছেন তা কিন্তু স্যাটেলাইটে ধরা পড়েছেএইবার সে ঘাবড়ে যায়তবুও সে মুখ খোলে নাতখন তাকে নতুন টোপ দেইবলি, দেড় লাখ টাকা লাগবে, যদি সে দিতে পারে তবে তাকে ছেড়ে দেবোআরো শর্ত থাকে, সে যদি লাশটা কোথায় বলতে পারে তবেই তার মুক্তিএরমাঝে আমি তাকে ফোনে কথা বলতে দেইতাকে সিগারেট পান করাইসে ফোনে টাকা জোগাড় করার চেষ্টা করেতার আত্মীয়কে বলে জরুরী ভিত্তিতে টাকার দরকার পরে তার আত্মীয় এসে আমাকে দেড় লাখ টাকার চেক প্রদান করেতখন রাত আড়াইটাটুটুল বলে লাশ কোথায় আছে আমি খুঁজে দিবোকিন্তু কে রাখছে তা আমি জানি নাআমি বুঝে ফেলি মহিলাকে হত্যা করা হয়েছে এবং লাশটা গুম করা হয়েছে টুটুল শর্ত দেয় যে, কোন পুলিশ সাথে গেলে চলবে নাআমি জানাই যে, তাকে উপকার করতে গিয়ে যদি সে আমাকে মেরে ফেলে, তাই আমিও লোক ছাড়া যাবো নাশেষে রাজি হয়তার সাথে আমি রাতের খাবার খাই এবং বন্ধুর মত আচরণ করিআমাকে সে ঘুষখোর হিসেবে বিশ্বাস করেতারপর একটি সিভিল মাইক্রোতে আমি সহ ইন্সপেক্টর(তদন্ত) সাথিয়া এই মামলা আই/ও রাশেদ সাহেব সহ আরও ৭/৮ জন নিয়ে চরপাইকরহাটি গ্রামে যাইগ্রামে ঢুকতেই টুটুল মাইক্রোর লাইট নিভিয়ে দিতে বলেএরপর গ্রামের প্রাইমারী স্কুলের কাছে গিয়ে বলে, এই দিক দিয়ে বিলে নামতে হবেস্কুলের পাশে ঘন জঙ্গলআমি অতিঃ পুলিশ সুপার গৌতম স্যারকে বিষয়টি জানাইস্যার আমাকে খুব সাবধান হতে বলেনআমি টুটুলকে বলি আপনাকে ছাড়লে যদি দৌড় দেন সেক্ষেত্রে আমি কি করবো?’ সে বলে তবে আমার হাতে হ্যান্ডক্যাপ লাগায়ে দেনআমি চিন্তা করি সে যদি বিলে নেমে পানিতে ডুব দেয় তাহলে হ্যান্ডক্যাপ নিয়েই সে পালাবেএজন্য তার এক হাত আর আমার অফিসের কং ১২৯৬ মুকুলের আরেক হাত যুক্ত করি সে অনেকগুলি ধানক্ষেতের মধ্যে দিয়ে বুক পানির ভিতর দিয়ে বিলের মধ্যখানে (ধান বিল নামক স্থান) নিয়ে যায়এরপর কিছুক্ষন উল্টাপাল্টা ঘুরায়আমি তাকে স্মরন করিয়ে দেই সকাল হয়ে যাচ্ছে, লাশ না পেলে তার মুক্তি নাইএরপর সে বলে এক জায়গায় মাছ মারা বাঁশের চাড় আছে এটা খোঁজেনআমরা পাশেই তা খুঁজে পাই তখন সে ঐ বরাবর ধানক্ষেতের ভিতর গিয়ে ধানগাছে ঢাকা পঁচা, গলা আলেয়ার লাশ দেখিয়ে দেয়এরপর সে তাকে ছেড়ে দিতে বলেআমি বলি ডাঙ্গায় উঠে ছেড়ে দিবোমাঝ বিলের মধ্যে ছাড়লে যদি তার কোন বিপদ হয় তবে তার স্বজনদের কি উত্তর দিবো? ডাঙ্গায় এসে আমার সহযোগী কং মুকুলের হাত খুলে টুটুলের দুই হাতে হ্যান্ডক্যাপ লাগাইতখন সে বুঝতে পারে যে, তার রেহাই নাইএরপর জানতে চাই, এই বিরান জায়গায় লাশ আছে তুমি জানলে ক্যামনে? আল্লাহ পাক ছাড়া তো কারও জানার কথা নয়তখন সে সম্পূর্ণ ঘটনা খুলে বলে মূলত সে বিলের ধারে তার জমি দেখতে এসেছিল সেই সময় তার চাচাত ভাবী আলেয়া কাপড় উঁচু করে পানিতে নিমজ্জিত ধান ক্ষেতের ভিতর হাঁটছিলসুগঠিত দেহ দেখে সে নিজেকে ধরে রাখতে পারেনি তখন সে আলেয়াকে জড়িয়ে ধরেধর্ষনের চেষ্টা করেতখন সন্নিকটে কেউ ছিল নাধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তার চশমা কাদা পানিতে পড়ে যায় এরপর মহিলা এই সমস্ত ঘটনা ফাঁস করে দেবার হুমকি দেয় ঘটনা জানাজানির ভয়ে সে মহিলার আঁচল দিয়ে গলা পেঁচিয়ে ধরেমহিলা মারা গেলে পাশেই ডোবায় লাশ নামিয়ে রাখে এরপর হাত পা ধুয়ে ফেরার পথে কেউ বিষয়টি দেখছে কিনা ত নিশ্চিত করতে সামনে যাকেই পেয়েছে তাকেই চশমা হারানোর গল্প বলেছেসারাদিন সে রাত নামার অপেক্ষায় থাকেপরে ঐদিন গভীর রাতে (আনুমানিক রাত ৩টার দিকে) গিয়ে নিজে নিজেই একা লাশ টেনে বিলের ভিতর নিয়ে যায়নেওয়ার সময় আলেয়ার পরণের শাড়ি খুলে যায়যা পরে ডোবার মধ্যে পাওয়া যায়বিলে ধান ক্ষেতের ফাঁকে ফাঁকে পানি থাকায় লাশ টেনে নিতে তার কষ্ট হয় নি পরে বাড়ি ফিরে আসেএরপর ২/১ দিন পরিস্থিতি অবজারভ করে ঢাকায় ফিরে যায়

টুটুলের মুখে ঘটনার বিবরণ শুনতে শুনতে সেখানেই ফজরের আজান হয়তখন মসজিদে গিয়ে মাইকিং করা হয়বলা হয়, আলেয়ার লাশ পাওয়া গেছেহাজার হাজার মানুষ স্কুল মাঠে জমায়েত হয়অবশেষে গ্রামবাসীর উপস্থিতিতে টুটুল গিয়ে লাশ বিলের মধ্যে আলেয়ার লাশ দেখিয়ে দেয়লাশ উত্তোলন করা হয়মৃতার স্বামী ও বাবার বাড়ির লোকজন উভয় পক্ষই বাদী হতে আগ্রহ দেখায়সবাই মিলে শেষে মৃতার মেয়ে শাবানা আক্তার (২০) কে বাদী করেসাথিয়া থানার মামলা নং-১০ তাং-০৮/১১/১৭ ধারা-নাঃ শিঃ নিঃ দঃ এর ৯(৪)(খ) তৎসহ ৩০২/২০১ দঃ বিঃ রুজু হয়আসামী টুটুল পরে বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারা ফৌঃ কাঃ বিঃ অনুযায়ী ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে৯/১১/১৭ তারিখ দেশের সকল প্রধান প্রধান দৈনিক পত্রিকাসহ সকল স্থানীয় পত্রিকাতে ঘটনাটি বিশদভাবে প্রকাশিত হয়

আমার চাকরি জীবনে এমন নৃশংস ঘটনার সাক্ষী হয়ে যেমন আমি ব্যথিত হয়েছি, তেমনি রহস্য উদঘাটন করতে পেরে গর্ববোধ করছি আন্তরিক কৃজ্ঞতা জানাচ্ছি, মাননীয় পুলিশ সুপার, জনাব জিহাদুল কবির, পিপিএম মহোদয়কে তার দূরদর্শী দিক নির্দেশনার জন্যকৃজ্ঞতা জানাচ্ছি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জনাব, গৌতম কুমার বিশ্বাস (অপরাধ ও প্রশাসন) ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জনাব শামীমা আকতার (জেলা বিশেষ শাখা) স্যারকে, তাদের পরামর্শ আর সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ আর অভিনন্দন ওসি সাথিয়া, ইন্সপেক্টর (তদন্ত) সাথিয়া, এসআই রাশেদ, আমার অফিসের কং ১২৯৬ মুকুল, কং ১২২৮ গফুর, কং ৫৯১ আজিজ ও চুন্নুলাল(ক্লিনার) এবং গাড়ি দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য কামরুল হাসান লিটন ভাইকে। মহান আল্লাহ পাক সবাইকে নিরাপদে রাখুন

বিঃদ্রঃ কার্য সমাপ্তির পর আমাকে প্রদত্ত দেড় লাখ টাকার চেকটি এর যথাযথ মালিককে ফেরত প্রদান করা হয়েছে

লিখেছেনঃ জনাব মিয়া মোহাম্মদ আশিস বিন্ হাছান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, বেড়া সার্কেল, পাবনা


শেয়ার করুন

0 facebook: