25 February 2018

রেকর্ড পরিমান বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে ছয় মাসে


স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৯৫৩ কোটি ৩৪ লাখ ডলারস্থানীয় মুদ্রায় এ ঘাটতি প্রায় ৮৮ হাজার কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৩ টাকা ৫০ পয়সা হিসাবে)এ বাণিজ্য ঘাটতি এ যাবতকালের সর্বোচ্চ বলে জানা গেছেবাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছেদৃশ্যমান বিনিয়োগ না থাকলেও আমদানি ব্যয় ব্যাপক ভিত্তিতে বাড়ছেকিন্তু সেই তুলনায় রফতানি আয় বাড়ছে নাএতেই বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, জুলাই-ডিসেম্বর ছয় মাসে পণ্য আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ৮৪৪ কোটি ডলার, যা গত বছরের একই সাময়ে ছিল ২ হাজার ২৬০ কোটি ডলারছয় মাসে আগের বছরের তুলনায় আমদানি বেড়েছে প্রায় ২৬ শতাংশ২৬ শতাংশ আমদানিতে ব্যয় বাড়লেও রফতানি আয় বেড়েছে মাত্র ৭ শতাংশযেমন- চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রফতানিতে আয় হয়েছিল ১ হাজার ৭৯১ কোটি ডলার, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১ হাজার ৬৭২ কোটি ডলাররফতানি আয়ের তুলনায় আমদানি ব্যয় ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ায় বাণিজ্য ঘাটতি এ অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, দৃশ্যমান বিনিয়োগ না বাড়লেও আমদানি ব্যয় বেড়েছে রেকর্ড হারেএদিকে অর্থের সংস্থান না করে ব্যাংকগুলো ব্যাপক ভিত্তিতে আমদানি করায় বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা হঠাৎ করে বেড়ে যায়৭৯ টাকার ডলার একপর্যায়ে সাড়ে ৮৩ টাকায় উঠে যায়বছরের শেষ প্রান্তে এসে বৈদেশিক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নানা উদ্যোগ নেয়বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি শুরু করেমাত্র সাত মাসে প্রায় দেড় শকোটি ডলার সরবরাহ করে বাংলাদেশ ব্যাংক

এদিকে দৃশ্যমান বিনিয়োগ না বাড়লেও ব্যাপক ভিত্তিতে মূলধনী যন্ত্রপাতিসহ পণ্য আমদানি বেড়ে যায়একপর্যায়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর ঋণকার্যক্রমের ওপর মনিটরিং করা হয়একই সাথে বিনিয়োগ সীমা কমিয়ে দেয়া হয় আমদানি ব্যয় ব্যাপক হারে বাড়লেও কাক্সিক্ষত হারে রফতানি বাড়ছে নাকারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, শিল্প খাতে নানা প্রতিবন্ধকতা রয়েছেবিশেষ করে ব্যাংক ঋণ এখনো ডাবল ডিজিটের ওপর রয়েছেএর পাশাপাশি দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা গ্যাস সঙ্কট কাটছে নাআবার নতুন করে গ্যাস সংযোগ দেয়া হচ্ছে না

পাশাপাশি দেশে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মকাণ্ড না থাকলেও বিনিয়োগকারীদের আস্থার সঙ্কট কাটছে নাএর বাইরে বিদ্যুৎ, গ্যাসের দাম দফায় দফায় বাড়ানোর ফলে ব্যবসায়ীদের পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছেবিপরীতে প্রতিযোগী দেশগুলো স্থানীয় মুদ্রার মান দফায় দফায় ডলারের বিপরীতে অবমূল্যায়ন করেছে সব মিলে প্রতিযোগী দেশগুলোর সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছেন না স্থানীয় রফতানিকারকেরাএ কারণেই কাক্সিক্ষত হারে রফতানি আয় বাড়ছে নাএতে সামগ্রিকভাবেই পণ্য বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে যাচ্ছেব্যবসায়ীদের মতে, বর্তমান অবস্থা অব্যাহত থাকলে একসময় স্থানীয় শিল্পগুলো বন্ধ হয়ে যাবেদেশ পুরোপুরি আমদানিনির্ভর হয়ে যাবেযার সামগ্রিক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতেসম্ভাব্য পরিস্থিতি এড়াতে রফতানিকারকদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা ধরে রাখতে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন বলে ব্যবসায়ীরা মনে করছেন


শেয়ার করুন

0 facebook: