প্রতীকী ছবি |
মুফতি মুহম্মদ মর্তুজা।। মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যবসাকে হালাল করেছেন। ব্যবসার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন রাসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। পবিত্র হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, তোমরা ব্যবসার প্রতি মনোযোগী হও, কেননা ৯০ শতাংশ রিজিক এর মধ্যেই নিহিত রয়েছে। এ ছাড়া আরো অনেক হাদিস শরীফ থেকেই ব্যবসার মর্যাদা ও গুরুত্ব প্রতিভাত হয়। বেশির ভাগ সাহাবি, তাবেয়ি, আলেম ও ফকিহ এ পেশাই অবলম্বন করছেন। মুসলমানরাও এ অঙ্গনে বিশেষ উন্নতির মাধ্যমে সুখ্যাতি অর্জন করেছে।
হালাল পথে ব্যবসা পরিচালনাকারীদের কিয়ামতের দিন সর্বোচ্চ সম্মাননা দেওয়া হবে। রাসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘বিশ্বস্ত ও আমানতদার ব্যবসায়ীদের হাশর কিয়ামতের দিন নবী, সিদ্দিক ও শহীদদের সঙ্গে হবে।’ (তিরমিজি শরীফ, হাদিস নং ১০২৯)
তবে এই মর্যাদা অর্জনের জন্য ব্যবসায়ীদেরকেও সেই রকম নিষ্ঠা ও ন্যায়পরায়ণতার সঙ্গে ব্যবসা করতে হবে। অনেক সময় কিছু ব্যবসায়ী সামান্য মুনাফার জন্য মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে ফেলে, অনেকে ব্যবসার ক্ষেত্রে এই মিথ্যাকে অত্যন্ত হালকা মনে করে। অথচ এটি অত্যন্ত বড় গুনাহ এবং ব্যবসার বরকত ধ্বংসকারী। মহান আল্লাহ পাক তিনি কিয়ামতের দিন এ ধরনের মিথ্যাবাদীদের সঙ্গে কথা বলবেন না।
হজরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ পাক তিন শ্রেণির লোকের সঙ্গে কথা বলবেন না, এদের দিকে তাকাবেন না এবং এদের পবিত্রও করবেন না; বরং এদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। যে ব্যক্তির কাছে অতিরিক্ত পানি থাকা সত্ত্বেও তা পথিককে দেয় না। যে ব্যবসায়ী আসরের পর তার পণ্যসামগ্রী ক্রেতার কাছে আল্লাহর কসম করে বিক্রি করে আর বলে, আমি এ পণ্য এত মূল্যে ক্রয় করেছিলাম আর ক্রেতা তাকে সত্যবাদী মনে করে, কিন্তু প্রকৃত ব্যাপার তার উল্টো। যে ব্যক্তি ইমামের (রাষ্ট্রপ্রধান) হাতে শুধু পার্থিব স্বার্থে বাইআত গ্রহণ করে, যদি ইমাম কিছু পার্থিব সুযোগ দেয়, তাহলে সে তার বাইআতের প্রতিজ্ঞা পূরণ করে আর যদি তা থেকে কিছু না দেয় তাহলে আর প্রতিজ্ঞা পূরণ করে না।’ (মুসলিম শরীফ, হাদিস নং ১৯৭)
এক শ্রেণির কালোবাজারি অসাধু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফার আশায় নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য ও পণ্যসামগ্রীর কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে জিনিসপত্রের দাম বাড়ায়। শরিয়তের দৃষ্টিতে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে খাদ্যপণ্য মজুদ ও কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা অত্যন্ত ঘৃণ্য কাজ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ক্রেতাসাধারণকে ঠকিয়ে এবং সংকটের আবহ সৃষ্টি করে অধিক মুনাফা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা অমানবিক, ধোঁকাবাজি ও প্রতারণার শামিল। মামার ইবনু আবদুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘পাপাচারী লোক ব্যতীত কেউ গুদামজাত করে না।’ (মুসলিম শরীফ, হাদিস নং ৪০১৫)
ইমাম আবু দাউদ রহিমাহুল্লাহ তিনি বলেন, আমি আহমাদ ইবনু হাম্বল রহিমাহুল্লাহ-কে জিজ্ঞাসা করলাম, (কোন বস্তু) গুদামজাত করা নিষেধ? তিনি বলেন, মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় বস্তু। ইমাম আবু দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আউজাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, গুদামজাতকারী হচ্ছে ওই ব্যক্তি, যে বাজারজাত করার পথে প্রতিবন্ধক হয়। (আবু দাউদ শরীফ, হাদিস নং ৩৪৪৭)
তাই আমাদের ব্যবসায়ী ভাইদের উচিত তাদের কোনো পদক্ষেপে জনগণ জিম্মি হয়ে যাচ্ছে কি না, সে ব্যাপারে সচেতন থাকা। কারণ আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন ব্যবসায়ীদের যেমন সম্মানিত করবেন, তেমনি অসৎ ব্যবসায়ীদের পাপিষ্ঠরূপে উঠাবেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘ব্যবসায়ীদের কিয়ামতের দিন পাপিষ্ঠরূপে উঠানো হবে। তবে যে ব্যবসায়ী ব্যবসার ক্ষেত্রে তাকওয়া, নেকি ও সততা অবলম্বন করেছে, তার কথা ভিন্ন।’ (সুনানে দারেমি শরীফ, হাদিস নং ২৫৮০)
অতএব সকল ব্যবসায়ী ভাইদের অনুরোধ, সর্বচ্চো তাকওয়া অবলম্বন করে ব্যবসা করুন, দ্বিন দুনিয়া আখেরাতে আপনাদের তা সাহায্যকারী হিসেবে উপস্থিত হবে।
খবর বিভাগঃ
ইসলাম
ধর্ম ও জীবন
ব্যবসা ও বাণিজ্য
0 facebook: